1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানব শরীরের রহস্য নিয়ে প্রদর্শনী কর্পারভেল্ট

২ আগস্ট ২০১১

জার্মানির রাজধানী বার্লিনে সম্প্রতি চলছে মানবদেহের প্রদর্শনী৷ শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে মানবশিশু জন্মের গোটা প্রক্রিয়ার জলজ্যান্ত উদাহরণ দেখতে প্রতিদিন সেখানে ভিড় করছে অনেক মানুষ৷

https://p.dw.com/p/127Nq
ছবি: DW

বার্লিনের এই মানবদেহের প্রদর্শনীর নাম কর্পারভেল্টেন: ডাস অরিগিনাল বা ইংরেজিতে বডি ওয়ার্ল্ডস: দি অরিজিনাল এক্সিবিশন৷ এখানে গেলে প্রথমেই আপনি হয়তো চমকে যেতে পারেন৷ সামনেই দেখতে পাবেন মানবদেহ আর কঙ্কালের ছড়াছড়ি৷ আগে থেকে কারো জানা না থাকলে হয়তো বিশ্বাসই করবেন না যে প্রদর্শনীতে থাকা এইসব মানবদেহগুলো একসময় আমার আপনার মতই জলজ্যান্ত মানুষ ছিল৷ দেখলে মনে হবে, চামড়া ছাড়ানো এইসব মানুষগুলো আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ শরীরের প্রত্যেকটি পেশিই যেন তাজা লাল রংয়ের৷

Ausstellung Körperwelten in Heidelberg freies Format
মানব শরীর চিরে দেখানো হচ্ছে ভেতরে কী রয়েছেছবি: picture-alliance/ dpa

এই কর্পারভেল্ট প্রদর্শনীতে ঢোকার পর থেকে মানবদেহের অনেক রহস্য খোলাসা হয়ে যায়৷ আমাদের দেহের ভেতর লুকিয়ে থাকা যন্ত্রগুলো দেখতে কেমন এবং কীভাবে কাজ করে তা চোখের সামনেই প্রায় জ্যান্ত হয়ে ধরা দেয়৷ প্রদর্শনীর একদিকে মানবদেহের পেশিগুলো কীভাবে কাজ করে তা দেখানো হচ্ছে৷ এজন্য সংরক্ষিত মানবদেহগুলোকে একেক ভঙ্গিতে দাঁড় করানো হয়েছে৷ কোনটি দৌড়াচ্ছে, কোনটি টেনিস খেলার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কোনটি আবার ঘোড়ায় চড়ছে৷ মজার বিষয় হচ্ছে সঙ্গে থাকা ঘোড়াটিরও ব্যবচ্ছেদ করে বিশেষভাবে সংরক্ষিত করা হয়েছে৷

Flashgalerie Körperwelten in Köln
নানা ভঙ্গিমায় দাঁড় করানো হয়েছে একেকটি মানবদেহছবি: picture alliance / dpa

প্রদর্শনীর অন্যদিকে আবার মানুষের হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, কিডনি সহ সবকিছুই দেখানো হচ্ছে৷ অবাক হওয়ার মত বিষয় যে, এইসব যন্ত্র একটা মানুষের শরীরে কীভাবে থাকে সেটা দেখানোর জন্য পুরো একটা মানুষকে নানাভাবে ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে৷ অর্থাৎ কোন একটা মানবদেহকে ঠিক মাঝখান থেকে চেরা হয়েছে, কোনটাকে আবার ঠিক পেছন থেকে চেরা হয়েছে, কোনটাকে আরও বেশি৷ দেখলে মনে হবে, আপনার সামনে তিন টুকরো হয়ে থাকা একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, আর তার ভেতরের সব কিছু আপনি বাইরে থেকেই দেখতে পাচ্ছেন৷ শুধু মানুষ নয় অনেক প্রাণীকেও একইভাবে সংরক্ষণ করে এই প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে৷ এই যে দেহ সংরক্ষণের অত্যাধুনিক পদ্ধতি, তার নাম প্লাস্টিনেশন৷ ১৯৭৭ সালে জার্মান বিজ্ঞানী গুন্থার ফন হাগেন্স এই প্লাস্টিনেশন আবিষ্কার করেন৷ ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম জাপানে মানবদেহ প্রদর্শনী শুরু হয়৷ মানবদেহের এই প্রদর্শনী নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে গুন্থার ফন হাগেন্স বলেন, ‘‘মনে রাখবেন আমাদের সবাইকে মরতে হবে৷ এই প্রদর্শনী সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ বিশেষ করে এখানে থাকা প্লাস্টিনেট হওয়া মানবদেহগুলো আগতদের প্রতি সেই বার্তাই দিচ্ছে, যে তোমার মত আমিও একসময় ছিলাম এবং আমার মত তোমাকেও একসময় হতে হবে৷ এখানে যেসব মানবদেহকে দেখতে পাচ্ছেন, তারা তাদের জীবদ্দশায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের দেহগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে৷ যাতে তারা গবেষণা করতে পারে৷

Deutschland Plastinator Gunther von Hagens
প্লাস্টিনেশনের জনক গুন্থার ফন হাগেন্সছবি: picture-alliance/ ZB

এখন পর্যন্ত ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর অ্যামেরিকার ৬৫টি শহরে এই ধরণের মানবদেহের প্রদর্শনী হয়েছে৷ এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তার শরীর সম্পর্কে সচেতন করা, যেমনটি বললেন গুন্থার ফন হাগেন্স, ‘‘ প্রথম হচ্ছে দর্শনার্থীদের তাদের শরীর সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া৷ আমরা একটি কৃত্রিম জগতে বাস করি৷ একজন সাধারণ মানুষ লক্ষ্য করে না যে সেও প্রকৃতিরই একটি অংশ৷ দ্বিতীয়ত, অ্যানাটমি বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা৷''

গুন্থার ফন হাগেন্সের এই মানবদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি ও তার প্রদর্শনী নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে৷ তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তা একটি বড় অবদান রেখে চলেছে৷ জার্মানির হাইডেলবার্গে অবস্থিত ইন্সটিটিউট ফর প্লাস্টিনেশনে প্রতি বছর অনেক মানুষ তাদের দেহ দান করেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের দেহ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ এর মধ্যে কেবল জার্মানির সাড়ে দশ হাজার মানুষ তাদের দেহ দান করবেন৷ মৃত্যুর পর এসব মানুষের দেহ প্লাস্টিনেশনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে আর ব্যবহৃত হবে গবেষণার কাজে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য