মানসিক অসুস্থতার জীবন
৪ নভেম্বর ২০১৫বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের পরামর্শে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান রতনের কাছে যান৷ দীর্ঘ চিকিত্সার পর এখন তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন৷ ক্লাস-পরীক্ষায়ও অংশ নিচ্ছেন৷
ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাত্কার দিলে কে কী বলে - এমন সংশয় থেকে তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি৷ তাই সাইদুর রহমান তাঁর ছদ্মনাম৷ সাক্ষাত্কারে তাঁর অসুস্থ হয়ে পড়া, চিকিত্সা, কারা-কীভাবে তাকে সহযোগিতা করেছে সবকিছুই উঠে এসেছে৷
ডয়চে ভেলে: হঠাত্ করেই কি আপনার মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়ে?
সাইদুর রহমান: হ্যাঁ৷
যখন বুঝতে পারলেন, আপনি কি করলেন?
আসলে আমরা সমস্যাটা ছিল অ্যাংজাইটি অর্থাৎ দুশ্চিন্তা৷ এ কারণে ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে পারছিলাম না৷ আমার একজন শিক্ষকের পরামর্শে মানসিক চিকিত্সকের কাছে যাই৷
কার কাছে গেলেন?
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান রতনের কাছে যাই৷
এটা কতদিন আগে?
২০১২ সালে৷
চিকিত্সার প্রক্রিয়া কেমন ছিল?
দুই ধরনের৷ একটা ওষুধ ও অন্যটি সিভিক জীবন৷ সিভিক জীবনটা হল, যেখানে আপনার সমস্যা হচ্ছে, সেটা বার বার করা৷ যেমন, আপনি পরীক্ষা দিতে ভয় পাচ্ছেন, তারপরও আপনাকে বার বার পরীক্ষার হলে বসতে হবে৷ যাতে ভয়টা কেটে যায়৷ এক সময় মনে হবে হ্যাঁ আমি তো পারছি৷
সেখানে আপনি কতদিন চিকিত্সা নিয়েছেন?
২০১২ সাল থেকে৷ এখনো চলছে৷
চিকিত্সাতে কি আপনি অস্বস্তিকর কিছু উপলব্ধি করেছেন?
না, সেরকম অস্বস্তিকর কিছু মনে হয়নি৷ তবে ভয়টা ফেস করা সবসময় অস্বস্তিকর৷ এটা চিকিত্সার জন্য না৷ রোগের জন্য৷ বিশেষ করে যাদের অ্যাংজাইটি থাকে, তাদের অ্যাংজাইটি ফেস করে দিন পার করা আসলেই অস্বস্তিকর৷
এখানে চিকিত্সা করতে আপনাকে কি হাসপাতালে থাকতে হয়েছে?
না, বাসাতে থেকেই চিকিত্সা করাতে পেরেছি৷
আপনার এই সমস্যাটা কি আপনার পরিবারের সদস্যরা জানেন?
হ্যাঁ জানেন৷
প্রথম যখন রোগটি ধরা পড়ে তখন পরিবারের সদস্যদের আচরণ কেমন ছিল?
পরিবারের সদস্যরা প্রথমে বিষয়টা বুঝতে পারেনি৷ তারা আমার উপর কিছুটা রাগ করেছিল৷ তারা মনে করেছে, আমি মনে হয় ইচ্ছে করে এমন করছি, পড়াশোনা করতে চাচ্ছি না৷ এটা একেবারে প্রথম দিকে অল্প কিছুদিনের জন্য৷ পরে যখন মানসিক চিকিত্সক তাদের বোঝালো তখন তারা বুঝতে পারেন৷ তখন তাদের ভূমিকা ছিল সহযোগিতামূলক৷
এখন তো ক্লাস করতে বা পরীক্ষা দিতে কোন সমস্যা হচ্ছে না?
না, কোন সমস্যা হচ্ছে না৷
আপনার সহপাঠীরা কি কখনও বুঝতে পেরেছে যে আপনার মানসিক রোগ আছে?
যারা খুবই ক্লোজ তারা বুঝতে পেরেছে৷ তবে সবাই না৷
তখন তাদের আচরণ কেমন ছিল?
ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ভূমিকা ছিল সহযোগিতামূলক৷ তবে অন্যরা যারা আমাকে চেনেন, কিন্তু অতটা ক্লোজ না তারা আমার সমস্যাটা বুঝতে পারতো না৷ তারা মনে করত, আমি মনে হয় সিরিয়াস হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ তবে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী আমাকে সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করেছে৷
একজন শিক্ষকের পরামর্শে তো আপনি চিকিত্সকের কাছে গেলেন, অন্য শিক্ষকদের ভূমিকা কেমন ছিল?
শিক্ষকরা যখন জেনেছেন এমন সমস্যা হচ্ছে তখন কোনো কোনো শিক্ষক আমাকে বলেছেন, ঠিকমতো ক্লাসে আসো৷ আবার অনেক শিক্ষক বিষয়টা বুঝতে পারেনি৷ আসলে কোনো কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে ভালো সহযোগিতা পেয়েছি৷ আবার কোনো কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলেও যেটা আমার দরকার ছিল ততটা পাইনি৷
আপনার আত্মীয়-স্বজন কি আপনার সমস্যার কথা জানেন?
হ্যাঁ, অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজনই জানেন৷
তাঁদের কোনো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল?
অধিকাংশের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক৷ তবে অনেকে সমস্যার লেভেলটা বুঝতে পারেন না৷ ফলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করেন না৷
যারা অ্যাংজাইটিতে ভুগছে, তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
একজন মানুষ যখন বুঝতে পারবেন দুশ্চিন্তা তার নিয়ন্ত্রণে আসছে না, দুশ্চিন্তা তো জীবনের একটা পার্ট৷ এই পার্টটাকে ক্যারি করতে যাদের সমস্যা হচ্ছে তাদের উচিত দ্রুততার সঙ্গে মানসিক চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়া৷
এই রোগটা নিজে থেকেই বোঝা যায়?
মানসিক রোগ হল দুই ধরনের৷ একটা নিউরোসিস ও অন্যটি সাইক্রোসিস৷ নিউরোসিস হল মৃদু মানসিক রোগ৷ এক্ষেত্রে রোগী নিজেই বুঝতে পারেন৷ আর সাইক্রোসিস হল রোগী গায়েবি নির্দেশ শুনতে পান৷ সে বাস্তব জগতে নেই৷ এটা হলো জটিল মানসিক রোগ৷ যেমন ধরেন গায়েবি নির্দেশে তিনি নিজের সন্তানকে হত্যা করে ফেললেন৷ এক্ষেত্রে রোগী নিজে কিছু বুঝতে পারেন না৷ তার আশপাশের লোকের দায়িত্ব তাঁকে চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যাওয়া৷
সাক্ষাৎকার: সমীর কুমার দে, ঢাকা
সম্পাদনা: জাহিদুল হক
আপনার পরিচিত এমন কারও কথা জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...