হাতিদের চলা পথে...
৭ অক্টোবর ২০১৫তৃষ্ণা, পিপাসা, তেষ্টা৷ পানির জন্যই হাতির পাল ভোরবেলা নদীতে আসে৷ উত্তর-পূর্ব নামিবিয়ার কোয়ান্ডো নদীতে সবসময় জল থাকে৷ কাজেই তৃষ্ণার্ত গ্রীষ্মের দিনগুলিতে এখানে হাতিদের ভিড়৷ কিন্তু এলাকাটিতে ক্রমেই আরো বেশি মানুষ বসবাস করতে আসছে৷ এরা গরিব চাষি, যারা খেতের ফসলের উপর নির্ভর করে৷ হাতিদের হাত, পা, কিংবা শুঁড় থেকে কীভাবে ভুট্টার ক্ষেত বাঁচানো যায়, তাই নিয়েই রেমন্ড কিটুম্বেকা-র চিন্তা৷ রেমন্ড শোনালেন সে কাহিনি৷ বললেন, ‘‘সাতটা হাতি এসেছিল৷ আমরা আওয়াজ পেয়েই দৌড় লাগিয়েছি, তাদের তাড়ানোর জন্য৷ কিন্তু হাতিরা মানুষকে ভয় পায় না, তারা পালায়ও না৷ বরং খেতের ফসল নষ্ট করে৷ তারপর আমরা জানি না, আমরা কী খেয়ে বাঁচব৷ জীবনের ভয়ও থাকে৷''
তবে রেমন্ড কিটুম্বেকা-কে সাহায্য করার লোক আছে৷ বেনেটি লিকুকেলা নামিবিয়ার একটি পরিবেশ সুরক্ষা সংগঠনের হয়ে কাজ করেন৷ চেষ্টা করেন, হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত এড়ানোর৷ অনেক সময় সহজ পন্থাতেই সেটা সম্ভব হয় এমন সব পদার্থ ব্যবহার করে, চাষিরা যা সহজেই পেতে পারেন৷
লঙ্কার ধোঁয়া
আইআরডিএনসি পরিবেশ সুরক্ষা সংগঠনের বেনেটি লিকুকেলা জানালেন, ‘‘আমরা হাতির মলের সঙ্গে লঙ্কা মেশাই৷ এর লক্ষ্য হলো, হাতির পাল হানা দেওয়ার ফলে যে সব চাষিরা তাদের ফসল হারিয়েছেন, সেই সব চাষিদের সাহায্য করা৷ আমরা হাতি তাড়ানোর জন্য লঙ্কা ব্যবহার করি কেননা লঙ্কার ধোঁয়া হাতিদের নাকে আরো বেশি করে লাগে৷ হাতিরা মানুষের তুলনায় এক'শ গুণ বেশি ভালো শুঁকতে পারে কিনা!''
মরিচের ঘুঁটের ধোঁয়ায় নাকমুখ জ্বালা করে, যেন কাঁদানে গ্যাস৷ এখানে এত মানুষ বাস করা সত্ত্বেও হাতিদের জন্য জায়গা থাকবে – এই হলো বেনেটি লিকুকেলা-র লক্ষ্য৷ হাতিরা যে সব পথে হাজার হাজার বছর ধরে পরিভ্রমণ করছে, সেই সব রুটগুলো তাদের ফিরিয়ে দেওয়াই হলো মূল কথা৷ এখন তাদের বেঁচে থাকার মতো পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে৷ এলাকার রেঞ্জাররা নিয়মিতভাবে মুক্ত ‘করিডর'-গুলো ঘুরে দেখেন, হাতিদের গতিবিধির উপর নজর রাখেন আর চাষিদের যাতে বিপদ না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখেন৷ লিকুলেলা জানালেন, ‘‘হাতিদের পরিভ্রমণের যে পথটি বোটসোয়ানা থেকে জাম্বিয়া আর অ্যাঙ্গোলার দিকে চলে গেছে, আমরা তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি৷ দুঃখের বিষয়, পথটা ট্রান্স-জামবেজি হাইওয়ের উপর দিয়ে গেছে, যার ফলে হাতি ও মানুষ, উভয়েরই বিপদ ঘটতে পারে৷''
বাধাবিপত্তি
শুধু হাইওয়ে পার হওয়াই নয়, হাতিদের মাইগ্রেটরি রুট বিভিন্ন দেশের সীমান্ত পার হয়ে গেছে৷ কাজা, অর্থাৎ কাভাঙ্গো-জামবেজি সংরক্ষিত এলাকা আয়তনে ফ্রান্সের সমান – পাঁচটি দেশ এর মধ্যে পড়ে৷ রাজনৈতিক প্রতিবন্ধক ছাড়া আরো অনেক বাধাবিপত্তি দূর করতে হয়েছে৷ জাম্বিয়ার পরিবেশ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জেমস সাম্বি জানান, ‘‘এখানে একটা বেড়া ছিল৷ বেড়াটা এখান থেকে শুরু হয়ে ডিভুন্ডু অবধি প্রায় দু'শ কিলোমিটার গেছে৷ কাজেই বেড়াটা ৭০ কিলোমিটার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷''
আনুমানিক দু'লক্ষের বেশি হাতি কাজা সংরক্ষিত এলাকার বাইরে থাকে৷ সারা বছর ধরে তারা শত শত কিলোমিটার পরিভ্রমণ করে – ন্যাশনাল পার্কের বাইরেও৷ তবে সেখানেও আজ তারা মোটামুটি নিরাপদ, কেননা বহু গ্রাম ও এলাকা এই সব বন্য জীবজন্তু থাকার ফলে লাভবান হয়৷ অনেকে তাদের নিজস্ব সুরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি করেছে৷ বেনেটি লিকুকেলা এলাকার পৌরপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন৷ স্থানীয় মোড়লদের উৎসাহের কারণেই হাতিদের দীর্ঘ পরিভ্রমণের পথগুলি খোলা রাখা সম্ভব হয়েছে৷
মানুষ যা মূল্যবান বলে মনে করে, মানুষ তা রক্ষাও করে৷ উত্তর-পূর্ব নামিবিয়ায় পরিবেশ সুরক্ষা এই সহজ নীতিটির উপর ভিত্তি করে৷ শুধু সেই কারণেই হাতিরা তাদের নিজস্ব পথে যেতে পারে, যদিও পথে মানুষের তৈরি কিছু কিছু বাধা পড়তে পারে বৈকি!