মূত্র থেকে ইউরিয়া তৈরির প্রস্তাব মন্ত্রীর
৫ মার্চ ২০১৯গোমূত্র থেকে কী কী হতে পারে, তা নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং যোগগুরু রামদেবের নানা তত্ত্বের কথা কারও অজানা নয়৷ এবার মানুষের মূত্র সংরক্ষণ করার প্রস্তাব দিলেন আরেক বিজেপি নেতা৷ তিনি কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও জাহাজমন্ত্রী নীতিন গডকড়ি৷
সম্প্রতি নাগপুর পৌর কর্পোরেশনের এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি৷ সেখানে ‘অভিনব বিজ্ঞান ভাবনা'র জন্য তরুণ গবেষকদের পুরস্কৃত করার অনুষ্ঠান ছিল৷ সেখানে ভাষণ দিতে গিয়ে গডকড়ি বলেন, ‘‘কৃষির জন্য ভারতকে দুবাই থেকে ইউরিয়া আমদানি করতে হয়৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে খুব ভালো একটা সমাধান আছে৷ তা হলো, আমাদের দেশে যদি মূত্র সংরক্ষণ শুরু করা যায়, তা হলে অন্য দেশ থেকে ইউরিয়া আমদানি করতে হবে না৷ কারণ, ইউরিয়া আসে ইউরিন থেকে৷ আমাদের উচিত মূত্র সংরক্ষণ করে রাখা৷ দেশের সমস্ত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে মানব মূত্র সংরক্ষণ করতে বলেছি৷ সমগ্র দেশবাসীর মূত্র সংরক্ষণ করতে পারলে ইউরিয়ার জোগান নিয়ে আর ভাবতে হবে না৷’’
এর আগে নিজের প্রস্রাব সংরক্ষণ করার কথাও জানিয়েছিলেন গডকড়ি৷ শুধু তাই নয়, রীতিমতো দাবি করেছিলেন, দিল্লিতে তাঁর সরকারি বাংলোর বাগানের জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করেন নিজের সংরক্ষিত মূত্র৷
কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
গড়কড়ির ‘অভিনব উদ্ভাবনী ধারণা’ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য অরুনাভ মিশ্র বলেছেন, ‘‘ইউরিনের মধ্যে সামান্য ইউরিয়া আছে, এটা সত্যি৷ তবে, ৯৬ শতাংশই জল৷ দেশব্যাপী মূত্র সংগ্রহ করা এবং তা থেকে ইউরিয়া প্রস্তুত করার ধারণা বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবসম্মত কিনা তা বলা মুশকিল৷ দেশে-বিদেশে বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা করলেও তা নিয়ে আর এগোননি৷ কারণ, সম্ভবত ব্যাপারটা অত্যধিক ব্যয় সাপেক্ষ৷ বাণিজ্যিক কোনো প্রতিষ্ঠানও আজ অবধি মূত্র থেকে ইউরিয়া তৈরির পদ্ধতি চালু করেনি৷ যে-কোনো বস্তুর অনেক সোর্স থাকতেই পারে৷ সবসময় যে প্রতিটি সোর্স থেকে সেই নির্দিষ্ট বস্তু প্রস্তুত করতে হবে, এমন বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা নাও থাকতে পারে৷’’
তাঁর কথায়, ‘‘দেশের শাসক দলের নেতারা প্রায়শই এমন কথা বলে থাকেন৷ নতুন আইডিয়া দেন দেশকে৷ কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে অন্য কেউ চিরাচরিত প্রথার বাইরে কিছু বলতে গেলেই ওঁরা রে রে করে তেড়ে আসেন৷’’
এমনিতে মানুষের মূত্রে ইউরিয়ার স্বাভাবিক পরিমাণ দুই শতাংশ৷ ৯১ থেকে ৯৬ শতাংশ জল৷ তার সঙ্গে থাকে ইউরিয়া, সোডিয়াম, সালফেট, পটাসিয়ামসহ নানা উপাদান৷
গডকড়ির আরও আলোচিত বক্তব্য
নাগপুরের ঐ অনুষ্ঠানে গডকড়ি মূত্র ছাড়াও মানুষের চুলের বর্জ্য থেকে পাওয়া অ্যামাইনো অ্যাসিডের কথাও বলেছেন, যা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানান তিনি৷
এর আগে গডকড়ি জানিয়েছিলেন, তিনি নাগপুরে থাকেন৷ কিন্তু নাগপুরে পর্যাপ্ত চুল না পাওয়ায় প্রতিমাসে দক্ষিণের তিরুপতি মন্দির থেকে ৫ ট্রাক চুল আনেন৷ নিজে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত৷ ওই সংস্থাটি বিদেশে অ্যামাইনো অ্যাসিড বিক্রি রপ্তানি করে৷ দুবাই সরকার নাকি তাঁদের ১৮০ কন্টেনার এমন জৈব সার তৈরির অর্ডার দিয়েছে৷
গত নভেম্বরের মাঝামাঝি গডকড়ি জানিয়েছিলেন, ‘‘গরিব কৃষকের স্বার্থে দেশে ‘মূত্র ব্যাংক’ তৈরির পরিকল্পনা চলছে৷ প্রাথমিকভাবে কয়েকজন সুইডিশ বিজ্ঞানীর সঙ্গে শলাপরামর্শ চলছে৷’’ নাগপুরের ধাপেওয়াড়া এলাকার এক পরীক্ষাগারে এই বিষয়ে পরীক্ষা চলছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি৷
এছাড়া দিল্লির সরকারি বাড়িতে চুল দিয়ে জৈব সার তৈরি করে বাগানের গাছে ব্যবহার করার কথাও জানিয়েছেন গডকড়ি৷ তাঁর দাবি, এই ভাবে তিনি ২৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি করেছেন৷
গডকড়ির উপলব্ধি
তাঁর উদ্ভাবনী প্রস্তাব যে সবাই ভালোভাবে নেয় না তা জানেন গডকড়ি৷ এ নিয়ে আক্ষেপও করেছেন তিনি৷ বলেছেন, ‘‘আমার ভাবনাগুলো এতটাই অভিনব যে গতানুগতিক ধারণা থেকে বেরিয়ে সেগুলো কেউ প্রয়োগ করতে চায় না৷’’
এরপর বলেন, ‘‘নাগপুর পৌর কর্পোরেশনও তাঁকে সাহায্য করবে না৷ কারণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় মানুষকে চারদিকে না তাকিয়ে গবাদি পশুর মতো হাঁটতেই শেখানো হয়৷’’