1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড!

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৫ এপ্রিল ২০১৬

চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালি উপজেলায় কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা৷ জীবন দিলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেবেন না, তাদের কথা, এমন হলে স্থানীয়দের পরিবার উচ্ছেদ হবে, ঘটবে পরিবেশের বিপর্যয়৷

https://p.dw.com/p/1IPgz
Sundarbans Bangladesch Indien UNESCO Welterbe
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

বাঁশখালির গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকায় বাংলাদেশের এস আলম শিল্প গ্রুপের এসএস পাওয়ার লি. এবং চীনের সেপকো ইলেট্রিক পাওয়ার যৌথভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে৷ ২০১৯ সাল নাগাদ এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা৷

২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই প্রকল্পে ৬০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ এই অর্থের মধ্যে ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার আসছে চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে৷

আনু মুহাম্মদ

কিন্তু কাজ শুরুর আগেই, গত চারমাস ধরে স্থানীয় লোকজন এর বিরেধিতা করে আসছিলেন৷ বিশেষ করে লবণচাষী, কৃষিজীবী এবং জেলেরা এর বিরোধিতায় সেচ্চার হন৷ ঐ এলাকায় বসবাসরতরা পরিবেশ বিপর্যয়, পেশা হারানো এবং উচ্ছেদ আতঙ্কে প্রবল বিরোধিতা গড়ে তোলেন, যদিও স্থানীয় একটি গোষ্ঠী আকার বিদ্যুৎ প্রকল্পকে সমর্থন করছে কর্মসংস্থান হওয়ার আশায়৷

সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ প্রকল্পবিরোধীদের প্রতিবাদ মিছিলন ও সমাবেশকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে ত্রিমূখী সংঘর্ষে মোট চারজন নিহত হন৷ আহত হন ১৮ জন, যাদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আছেন৷

ঐ ঘটনায় মঙ্গলবার বাঁশখালি থানায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে৷ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যরাও আহত হয়েছেন৷'' পুলিশের এএসআই বাহার মিয়া বাদী হয়ে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ এবং তিন হাজার ২০০০ জন অজ্ঞাত আসামির নামে একটি মামলা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সংঘর্ষে জড়িত এমন তিনজনকে আমরা এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছি৷''

ওদিকে সংঘর্ষে নিহত আনোয়ার আলীর বড় ভাই বশির আহমেদও ৬ আসামির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত দেড় হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন৷ অপর একটি মামলা করেন সংঘর্ষে নিহত জাকের হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম৷ তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাত দেড় হাজার জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন৷

শাহেদা পিয়া

পুরো এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা

মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি শাহেদা পিয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সোমবারের ঘটনার পার এখন প্রকল্প এলাকার পরিবেশ থমথমে৷ তবে প্রতিবাদীরা আরো সংঘবদ্ধ হয়েছেন৷ তারা বলছেন, কোনোভাবেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে দেবেন না৷ তাদের অভিযোগ, এস আলম গ্রুপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নয় শিল্প করার কথা বলে কিছু জমি কিনেছিল৷ তবে তারও পুরো টাকা তারা দেয়নি৷''

তিনি জানান, ‘‘স্থানীয়রা অভিযোগ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে পাঁচ হাজার পরিবার উচ্ছেদ হবে৷ লবণচাষী এবং জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ পরিবেশেরও মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে৷'

শাহেদা পিয়া জানান, ‘‘তারা অভিযোগ করেছেন যে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীকে অর্থের বিনিময়ে এস আলম গ্রুপ হাত করেছে৷ তারাই সোমবার হামলা চালায়৷''

এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাঁশখালির এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অনিয়ম এবং অস্বচ্ছতায় ভরা৷ এখানে পরিবেশ সমীক্ষা করা হয়নি৷ আর সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য গোপন করে কিছু জমি কেনা হয়েছে অথচ প্রকৃত দাম দেয়া হয়নি৷ শুধু তাই নয়, এখানে সাত হাজার পরিবার উচ্ছেদ হবে অথচ জেলা প্রশাসন সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেছে যে, দেড়শ' পরিবার উচ্ছেদ হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন করতে হবে৷ বিদ্যুৎ প্রকল্পে সাধারণ মানুষের উপকার হলে তারা তার বিরোধিতা করবেন কেন? মানুষ মেরে এভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা যাবে না৷''

আনু মুহাম্মদের কথায়, ‘‘পরিবেশ, জীবিকা, বসতি, পেশা – এগুলো বিবেচনায় না নেয়ায় বাঁশখালিতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷''

এ সব ব্যাপারে জানতে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি৷

প্রসঙ্গত, পটুয়াখালিতেও চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আরেকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সই হয়৷ ২০১৯ সাল নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার কথা৷ সেখানেও স্থানীয়দের বিরোধিতা রয়েছে৷

এছাড়া ভারতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় রামপালে আরো একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে, যার বিরোধিতা করছেন পরিবেশবাদীরা৷

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াট এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট৷ প্রতিবছর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি অনুসারে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা দাঁড়াবে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে৷

বন্ধু, আপনি কি এই বিদ্যৎকেন্দ্রকে সমর্থন করেন? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান