‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা সোমবারও চলবে’
২৯ ডিসেম্বর ২০১৩বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে তাঁর দলের কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার জন্য গুলশানের বাসা থেকে বের হন স্থানীয় সময় বিকেল তিনটার দিকে৷ এরপর তিনি গাড়িতে উঠে রওয়ানা দিতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে বাড়ির গেটে আটকে দেন৷ তারা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাঁকে যেতে দেয়া হবে না৷ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের সদস্য কর্নেল (অব.) আব্দুল মজিদ জানান, তারা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তবে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, নয়াপল্টনে কোন জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷
খালেদা জিয়া বাসার সামনে তাঁর গাড়ির ভেতরেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন৷ এরপর তিনি গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে পুলিশ বেষ্টনীর কাছে যান৷ তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন এবং দাঁড়িয়ে থাকেন৷ এরপর গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বাড়ির ভেতর ফিরে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন৷ এসময় তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
এদিকে, রবিবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে৷ মালিবাগ রেলগেট এলাকা ও আবুল হোটেল এলাকার কয়েকটি গলি থেকে শিবির কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷ সংঘর্ষে মনসুর আলী নামে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও সংঘর্ষে অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান৷ রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালা জানান, পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে অ্যাকশনে যায়৷
এছাড়া, সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
এর আগে, প্রেসক্লাব থেকে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে তাদেরও বাধা দেয় পুলিশ৷ প্রেসক্লাবের সামনের এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আইনজীবীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে৷ দুপুরের দিকে প্রেসক্লাবের ভেতরে ও বাইরে সাংবাদিকদের ওপর আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
উল্লেখ্য, রবিবার সকাল থেকেই ঢাকার সব প্রবেশ পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের কর্মীরা অবস্থান নেন৷ ঢাকাসহ দূরপাল্লার যানবাহন আগে থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয়৷ আর ব্যাপক তল্লাশির মুখে পড়েন সাধারণ মানুষসহ ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা৷ ফলে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা কার্যত ঢাকায় ঢুকতে পারেনি৷
আর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চারপাশ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করায় ১৮ দলের কেউ সেখানে ঘেঁষতে পারেনি৷ মহিলা দলের একটি মিছিল সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে কয়েকজনকে আটক করা হয়৷
ঢাকা শহর এখন দৃশ্যত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ বিএনপির নেতা কর্মী বা শীর্ষ নেতাদের মাঠে দেখা যাচ্ছেনা৷ পুলিশ তাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিএনপি নেতারা৷