মার্তি মোরেনো-র ধাতব ভাস্কর্য
২৫ অক্টোবর ২০১৩স্পেনের ভাস্কর মার্তি মোরেনো বলেন, ‘‘আমার কাজগুলো এরকম অসমাপ্ত রাখতেই আমার ভালো লাগে: সম্পূর্ণ আর অসম্পূর্ণকে পরস্পরের মুখোমুখি করতে, যাতে দর্শক নিজেই ছবিটা পূর্ণ করে নিতে পারেন৷ আমি দিই কিছু কিছু উপাদান, এক ধরনের বিশেষ নকশা৷ সেই তথ্য নিয়ে দর্শককে বাকি ভাস্কর্যটা পূরণ করে নিতে হয়৷''
মার্তি মোরেনোর ভাস্কর্য এযাবৎ প্রধানত স্পেনেই প্রদর্শিত হয়েছে, যেমন তাঁর নিজের শহর ভ্যালেন্সিয়ার কাছে ভিয়া রেয়ালে৷ কিন্তু বিদেশেও তাঁর ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যাবে৷ তাঁর একটি দু'মিটার উঁচু ভাস্কর্য শিকাগোর একটি হোটেলে রাখা আছে৷ কিন্তু কী বলতে চান মোরেনো তাঁর ধাতব ভাস্কর্যগুলি দিয়ে? ‘‘এই কাজগুলো দিয়ে আমি সেই অনুভূতিটাকেই অভিব্যক্তি দিতে চাই, যা বর্তমানে আমাদের সকলের অনুভূতি বলে আমার ধারণা: ক্ষণভঙ্গুরতা এবং অসহায়তা৷ আর আমি দেখাতে চাই, সব কিছুই অতি দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়৷''
কয়েক বছর হল মোরেনো এই সব লোহালক্কড় নিয়ে কাজ করছেন৷ মূলত ডু-ইট-ইওরসেল্ফ সুপারস্টোর থেকে তিনি নাটগুলো কিনে থাকেন৷ সেগুলো সঠিক ফর্মে আনার জন্য তিনি প্লাস্টার-অফ-প্যারিসের মডেলও ব্যবহার করে থাকেন৷ কিন্তু আইডিয়াটা পেলেন কোথা থেকে?
‘‘আমি লোহার মতো কোনো শক্ত পদার্থ খুঁজছিলাম৷ তখন আমার মাথায় নাটগুলো নিয়ে কাজ করবার আইডিয়া আসে৷ নাটগুলো একটা ফর্মে বসাতে হবে৷ একদিন আমার স্টুডিও-য় এক বাক্স নাট খুঁজে পাই৷ সেগুলো ফর্মে বসিয়ে দেখি, বেশ ভালোই হয়েছে৷''
একটি ভাস্কর্যের জন্য মার্তি দশ হাজার অবধি নাট একটিকে অন্যের সঙ্গে জোড়া দেন৷ তিনি জেনেশুনেই নানা ধরনের ছোট-বড়ো নাট ব্যবহার করেন, যাতে মূর্তির আকারটা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়৷ একটি ভাস্কর্য নিয়ে দু' থেকে চার মাস অবধি কাজ করেন৷ অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোতে রংও চড়ান৷ অথবা একটি বিশেষ লিকুইড ব্যবহার করে সেগুলোতে মরচে ধরান৷ তাঁর এক-একটি ভাস্কর্য বিক্রি হয় এক হাজার থেকে পনেরো হাজার ইউরো মূল্যে৷ কাজেই স্পেনে অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও মার্তি তাঁর ভাস্কর্য থেকেই জীবনধারণ করতে পারেন৷
মার্তি বলেন, ‘‘আমি নিজের তরফ থেকে বলতে পারি, আমার কাজ ভালোই চলেছে, মাঝেমধ্যে বিক্রি হচ্ছে৷ কিন্তু আর্টের বাজার কখনো ভালো চলে, কখনো খারাপ৷ হঠাৎ দারুণ সাফল্য আসে, অনেক কাজ বিক্রি হয়৷ তারপরে হয়তো এমন হল, কয়েক মাস বা বছর ধরে কিছু বিক্রিই হল না৷''
মার্তি প্রেরণা পান দৈনন্দিন জীবন থেকে, মানুষজনকে দেখে৷ মনে রাখার মতো মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় ধরে রাখেন৷ ‘‘ক্যামেরা দিয়ে আমি শহরের বাসিন্দাদের ধরে রাখার চেষ্টা করি৷ আমার ক্ষেত্রে সেটা ভ্যালেন্সিয়া, কিন্তু অন্য কোনো বড় শহরও হতে পারতো৷ চেষ্টাটা হল, মানুষদের অনুভূতিটাকে ধরে রাখা, যাতে পরে সেটা ভাস্কর্যে পরিণত করা যায়৷''
ভবিষ্যতে মার্তি বাইরের বাগান কিংবা খোলা জায়গার জন্য ভাস্কর্য নিয়ে কাজ করতে চান৷ কাজেই তিনি মুক্তাঙ্গণে এই আত্মপ্রতিকৃতিটি স্থাপন করে দেখছেন, তার এফেক্ট কেমন হয়৷ তার একটা সুবিধে হল: এক্ষেত্রে মরচে ধরাটাও শিল্পের অঙ্গ!