1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডয়চে ভেলের মুখোমুখি শামীম আহসান

সুলাইমান নিলয়
১৬ মে ২০১৭

সরকারের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দেশটির এই খাতের অন্যতম উদ্যোক্তা শামীম আহসান৷

https://p.dw.com/p/2czBv
শামীম আহসান
শামীম আহসান, বাগডুম ডটকমের চেয়ারম্যানছবি: S. Ahsan

বাংলাদেশের অনলাইন কেনাকাটা জগতের অন্যতম উদ্যোক্তা শামীম আহসান৷ তিনি বাগডুম ডটকমের চেয়ারম্যান৷ ২০১২ সালে অন্য দুই উদ্যোক্তার সঙ্গে তিনি বাগডুম প্রতিষ্ঠা করেন৷ সফটওয়ার প্রতিষ্ঠান ই-জেনারেশনের মালিকও তিনি৷ তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সভাপতি৷ ২০১৫-১৭ মেয়াদে এফবিসিসিআই’র পরিচালক হিসাবেও কাজ করেছেন৷ বাংলাদেশের অনলাইন কেনাকাটার বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা কোন পর্যায়ে আছে?

শামীম আহসান: গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরই বাংলাদেশের অনলাইন শপিং ১০০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের তরুণরা ইলেকট্রনিক ও ফ্যাশন আইটেমগুলো অনলাইনে কিনছে৷ তবে এখনো সকল লেনদেনের ৮০শতাংশের বেশি ‘ক্যাশ অন ডেলিভারির' মাধ্যমে হয়৷ ইলেকট্রনিক উপায়ে লেনদেন যাতে বাড়ে, সে ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে৷

আমাদের ডাক বিভাগ ও কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলো এখনো ই-কমার্সের জন্য প্রস্তুত নয়৷ এই দুই জায়গায় সরকার ও বেসরকারিভাবে একত্রে কাজ করতে হবে৷ যাতে আমরা গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় নিয়মিতভাবে ই-কমার্সের ডেলভারি করতে পারি৷ আমাদের কেনাকাটার ৪০ শতাংশের মতো ঢাকা থেকে কেনে৷ ৬০ শতাংশ গ্রাম-গঞ্জে বিভিন্ন জায়গা থেকে কেনে৷

একটা উন্নত দেশে ইউরোপ-অ্যামেরিকাতে ই-কমার্স ‘মেইন-ডিশ' না, এটা ডেজার্ট৷ খেলেও হয়, না খেলেও হয়৷ কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ই-কমার্স হচ্ছে, মেইন ডিশ৷ কারণ গ্রাম-গঞ্জে মানুষ ক্যাটস আই, ইয়োলোর পণ্য পায় না৷ তাদের জন্য ই-কমার্স ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না৷

Shamim Ahsan - MP3-Stereo

ডাক বিভাগ বা কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর কী ধরনের প্রস্তুতি আপনারা প্রত্যাশা করছেন?

আমাদের ডাক বিভাগ পুরোপুরি অটোমেটেড হবে৷ যাতে প্রতিটি পার্সেল কোন জায়গায় আছে, এটা তারা ট্রাক করতে পারবে৷ তাদের ডেলিভারি ভ্যান ও মটর সাইকেলের মতো আধুনিক যানবাহন ক্রয় করা দরকার৷ যাতে সময়মত পণ্য পৌঁছাতে পারে৷ তাদের জনবলকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷ যাতে তারা আরও ভালো সার্ভিস দিতে পারে৷

এখন কীভাবে আপনারা কীভাবে পণ্য পৌঁছে দেন?

এখন কিছুটা নিজেরা, কিছুটা তৃতীয়পক্ষের ডেলিভারি কোম্পানির সাথে কাজ করছি৷ সেক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে পণ্য পৌঁছাতে ৩-৪দিন থেকে ১ সপ্তাহ লেগে যায়৷ আমাদের কুরিয়ার কোম্পানি ও ডাক বিভাগ যদি আধুনিক হত, তাহলে হয়ত আমরা ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই ডেলিভারি করতে সক্ষম হতাম৷ ঢাকায় আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি করতে পারি৷ এখানে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো বেটার সার্ভিস দিতে পারে বা অনেকক্ষেত্রে আমরা নিজেদের লোক দিয়েই ডেলিভারি করে থাকি৷

বাজারে যাচাই বাছাই করে পণ্য কেনার মাঝে মান দেখার যে সুযোগ ক্রেতা পান, অনলাইন কেনাকাটায় সেটা কীভাবে নিশ্চিত হয়?

গ্রাহক যখন কোনো ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনেন, সেটার ব্রান্ড ভ্যালু কী সেটা দেখতে হবে৷ তাদের ওয়ারেন্টি কী আছে৷ তারা বেসিস বা ই-ক্যাবের সদস্য কিনা? কারণ এদের সদস্য হলে, সেক্ষেত্রে গ্রাহক যদি কোনো ই-কমার্স সাইট থেকে খারাপ সেবা পেয়ে থাকে, তারা সরাসরি অভিযোগ করতে পারে, বেসিস ও ই-ক্যাব তাৎক্ষণিক সেই সাইটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে৷

সে জায়গায় খেয়াল করতে হবে, তাদের রিভিউগুলো পড়তে হবে৷ হঠাৎ করে কারও থেকে কিনলে সেক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়া সম্ভাবনা থাকে৷

কেউ অভিযোগ করলে আপনারা কীভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন৷

আমাদের বাগডুম ডটকমের মাধ্যমে কেউ যদি কিছু কিনে প্রতিশ্রুতি অনুসারে পণ্য না পান, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তাকে ১০০ ভাগ টাকা ফেরত দেই৷ যে মার্চেন্ট গ্রাহকদের সাথে প্রতিশ্রুতি রাখেন না, তাকে সাইটে কালো তালিকাভূক্ত করি৷

কোন সাইটের বিরুদ্ধে বেসিসে অভিযোগ করলে সেটা কীভাবে নিষ্পত্তি হয়?

বেসিস বা ই-ক্যাব এ রকম কোনো অভিযোগ পেলে তারা তাৎক্ষণিক সেই ই-কমার্স সাইটকে বলে, তোমরা এটা সমাধান করে ফেল, যদি না করো, তাহলে বেসিস তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে৷ যেটা আমরা দেখি, ভালো সাইটগুলো কখনোই নিজেদের রেপুটেশন নষ্ট করতে চায় না৷ বাস্তবে যেটা হয়, অধিকাংশক্ষেত্রে ক্রেতাকে ওই পর্যন্ত যেতেই হয় না৷ এ ধরনের অভিযোগ পেলে নিজেরাই সেটা সুধরে নেয়৷

গত বাজেটের সময় দেখা গেছে, ই-কমার্সের ব্যবসায়ীরা মূসক ও কর বিষয়ে সরকার থেকে আলাদা সুবিধা দাবি করে৷ সব ব্যবসায়ীরা মূসক দিলে তাদের দিতে সমস্যা কোথায়?

যারা ই-কমার্সকে গ্রহণ করতে পেরেছে, এমন প্রত্যেকটা দেশে আমরা দেখেছি, সে সব দেশে জিডিপি এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেড়ে যায়৷ আমরা যদি অনলাইনে কেনাকাটা করি, মোবাইলে টাকা পরিশোধ করি, যত বেশি ইলেকট্রনিক লেনদেন হবে সেটা কোম্পানির অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে৷ আমেরিকাতে বিভিন্ন রাজ্যে মূসক উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল, সে কারণেই সেখানে আমাজান ও ইবে'র উত্থান হয়েছে৷ অ্যামেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ইলেকট্রনিক লেনদেন ভূমিকা রেখেছে৷

এটার কিন্তু অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে৷ লোকজন যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে, তেল পোড়ায়, মানুষের উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়, বাজারে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়৷ ই-কমার্স সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে৷ সে জন্য আমরা দাবি করেছিলাম৷ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, ই-কমার্সের উপর মূসক প্রত্যাহার হয়েছে৷ কিন্তু গত বছর কোনো এক কারণে গত বাজেটে কর্পোরেট কর আরোপ করা হয়েছে৷

‘অনলাইনে স্বস্তায় কেনাকাটা করা যায়' – এমন একটা বলা হয়৷ বাংলাদেশে এটা কতটুকু সত্যি?

বাংলাদেশে মূল ই-কমার্স সাইটগুলো অনলাইনে মার্কেট থেকে কমেই দিচ্ছে৷ অনেকক্ষেত্রে তারা তাদের মার্কেটিং বাজেট থেকে ‘সাবসিডি' দিয়ে পণ্য কিনছে

বাংলাদেশে কারণ দর্শানো ছাড়া ক্রেতারা পণ্য ফেরত দিতে পারেন কিনা?

আমাদের বাগডুম ডটকমে এটা আছে৷ বেশিরভাগ পণ্যের দুই সপ্তাহ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০ দিন পর্যন্ত কোনো ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করেই তাকে টাকা ফেরত দিয়ে দেয়া হয়৷ আমরা গ্রাহককে যে সুবিধা দিচ্ছি, গ্রাহক পণ্য অর্ডার করবেন, সেটা তার বাসায় যাবে, সে পণ্যটা দেখবে, পছন্দ না হলে তখনই ফেরত দিয়ে ফেলতে পারবে, সেক্ষেত্রেও ‘ডেলিভারি চার্জ' দিতে হবে না৷ এটা আমরা করছি, আরও দুই একটা সাইট করছে৷

প্যাপল চালু হওয়ার অগ্রগতি কতটুকু?

প্যাপলের অগ্রগতি অনেকদূর হয়েছে৷ ‘জুম' নামে তাদের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডাচ বাংলা ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ আংশিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে৷ রেমিটেন্স আসবে৷ কিন্তু প্যাপলের সব ফিচারগুলো এখানে থাকবে না৷ তাদের সব ফিচার খুব অল্প দেশেই আছে৷ ভারতে তাদের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো না৷ সে কারণে উন্নয়নশীল দেশে তারা ধীরে ধীরে এগুচ্ছে৷ আমি মনে করি, আমাদের আইসিটি মন্ত্রণালয় অনেক চেষ্টা করছে৷ কিন্তু প্যাপল একটি স্বাধীন কোম্পানি, এটা তাদের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত৷ তাকে জোর করে, এখানে ব্যবসা চালু করা সম্ভব না৷

বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার সম্পর্কিত কোন আইনে অনলাইন কেনাকাটা নিয়ে কিছু বলা হয়নি৷ আপনারা এ সব আইন আপডেট করা প্রয়োজন মনে করেন কিনা?

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে৷ আমরাও তাদেরকে নিয়ে এই আইনকে আরও আধুনিক করতে কাজ করছি৷ আশা অদূর ভবিষ্যতে আমরা ই-কমার্সের ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে নতুন আইন করতে সক্ষম হবো৷

সরকারের কাছে কোনো দাবি রয়েছে কিনা?

চারটি দাবি রয়েছে, ই-কমার্সের উপর থেকে যেন কর্পোরেট কর উঠিয়ে দেয়া হয়৷ ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল পেমেন্ট বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন সকল ব্যাংকে উৎসাহ দেয় বা বাধ্য করে, যাতে সকল কাস্টমার ক্রেডিট কার্ড-ডেবিট কার্ড হাতে পায়৷ ডাক বিভাগকে আধুনিকীকরণ এবং সরকার ই-কমার্স বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম হাতে নেয়৷ এই চারটা পদক্ষেপ নিলে দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি কয়েক বছরের মধ্যে মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হবে৷

সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো, লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য