1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিডিয়া ট্রায়ালের কারণ ও রকমফের

২৪ জুলাই ২০২০

কেউ গ্রেপ্তার হলে, বিশেষ করে সেটা যদি হয় আলোচিত ঘটনা, তাহলে ‘মিডিয়া ট্রায়াল'-এর হওয়ার অভিযোগ উঠছে৷ কেন ওঠে এমন অভিযোগ? এটা নিয়ে সাংবাদিকরাই বা কী ভাবছেন?

https://p.dw.com/p/3fquw
Türkei Demo für Medienfreiheit in Istanbul
ছবি: Getty Images/AFP/O. Kose

ভুয়া করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রশ্নটি আরো জোরালো৷ কিছু সংবাদমাধ্যমতার  বিরুদ্ধে মূল অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে৷ তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ছবি প্রকাশেই অনেক উৎসাহ দেখাচ্ছেন তারা৷ এটা রিজেন্ট হাসপাতালের মো. সাহেদকে গ্রেপ্তারের পরও ঘটছে৷ সংবাদমাধ্যম যেন বিচারের আগেই তার বিচার করে ফেলছে৷ মূল অভিযোগের চেয়ে রগরগে কাহিনি প্রকাশেই কিছু সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ বেশি৷ এক্ষেত্রে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই এগিয়ে৷

বাংলাদেশে বন্দুক যুদ্ধে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীরা'  নিহত হয়৷ ধরা পড়ে ‘প্রতারক'৷ অভিযোগের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কেউ কেউ হয়ে যান ‘খুনি', ‘ধর্ষক' অথবা ‘মক্ষিরানী'৷

এসব ঘটনা নিয়ে যে সাংবাদিকরা কাজ করেন, তাদের কথা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যখন কাউকে কোনো অপরাধের অভিযোগে আটক করে, তখন তারা প্রেস ব্রিফিং বা প্রেস রিলিজে এসব শব্দ ব্যবহার করে৷ তারা সেসব শব্দ উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখেন৷ তবে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম তাদের কাটতি বাড়াতে এই শব্দগুলো ব্যবহারে আগ্রহী হয়৷ দুই বছর আগে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বিচার হওয়ার আগে কোনো অপরাধে কেউ আটক হলে, তার ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল৷ কিন্তু কয়েকদিন সেই নিষেধাজ্ঞা সব পক্ষ মানলেও এখন আর কেউ মানছে না৷

একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘‘সাংবাদিকতার যে নীতিমালা রয়েছে, তা সবাই যে মানেন তা নয়৷'' তবে তিনি মানার চেষ্টা করেন৷ বিচারের আগেই তিনি বিচার করার ঘোর বিরোধী৷ আর যে অভিযোগ সেই অভিযোগের মধ্যেই থাকতে চান তিনি৷ তবে এই নীতির চর্চা বাংলাদেশে প্রবল নয়৷ তার মতে,‘‘ যারা সাংবাদিকতায় পড়াশুনা করেছেন বা ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তারা নীতি মানার চেষ্টা করেন৷ আর নিউজ ম্যানেজার কেমন, কতটুকু দক্ষ তার ওপরও  নির্ভর করে অনেক কিছু৷''

‘যারা সাংবাদিকতায় ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তারা নীতি মানার চেষ্টা করেন’: নাদিয়া শারমিন

ফটো সাংবাদিকরাও এ ধরনের ঘটনার ছবি সম্পর্কে কিছুটা হলেও সতর্ক৷ তবে দৈনিক সংবাদের প্রধান ফটো সাংবাদিক সোহরাব আলম বলেন, ‘‘আমরা ডকুমেন্টেশনের জন্য সব ধরনের ছবিই তুলি৷ পরে এডিটিং টেবিলে সিদ্ধান্ত হয় কোন ছবি যাবে আর কোন ছবি যাবে না৷বাংলাদেশে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার আসামির ছবি বিনা দ্বিধায়ই প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম৷ তবে নারী ভিকটিম, বিশেষ করে ধর্ষণের শিকার নারীর ছবি প্রকাশিত হয় না৷ কেউ কেউ বলছেন, আমরা বরং ‘ধর্ষকের' ছবি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করি৷ কিন্তু বিচারে অপরাধী প্রমাণ হওয়ার আগেই ‘ধর্ষক' হিসবে কারো ছবি প্রকাশ করা কতটা যুক্তিযুক্ত এবং নৈতিক তা নিয়ে দ্বিধা আছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে৷''

সংবাদমাধ্যম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্রিফিং বা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনেকটা যাচাই না করেই প্রকাশ করে৷ আর তাদের ভাষাও ব্যবহার করে৷ দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক জামিউল আহসান শিপু বলেন, ‘‘আমাদের অফিস থেকে সেরকমই করতে বলা হয়৷ তারপরও আমরা নানা প্রশ্ন করে আসল ঘটনা জানার চেষ্টা করি৷ কিন্তু কখনো কখনো যাচাইয়ের সুযোগ থাকেনা৷ আর তারা যেহেতু ছবিও দেয়, তাই আমরাও দিই৷ তবে তারা শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ আরো যেসব শব্দ ব্যবহার করেন তা আমরা উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখি৷''

তবে যাচাই করা উচিত বলে মনে করেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক কামাল হোসেন তালুকদার৷ তিনি বলেন,‘‘আমি নানা সোর্স ব্যবহার করে তথ্য যাচাইয়ের চেষ্টা করি৷ আর যিনি অভিযুক্ত, তাকে যেন অপরাধী প্রতিপন্ন না করি, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকি৷ তাকে অভিযুক্তই লিখি, অপরাধী বলি না৷''

ছবি বা ফুটেজ নেয়ার সময় কয়েকটি দিক লক্ষ্য রাখেন একুশে টেলিভিশনের সিনিয়র ক্যামেরা পার্সন আলি আহমেদ রুবেল৷ লাশের ফুটেজ নেন না৷ আর নিলেও এমনভাবে  নেন যাতে আতঙ্ক বা ভয়ের সৃষ্টি না হয়৷ তবে নারী পুরুষ যেই হোন না কেন  আসামির ছবি নিতে কার্পণ্য করেন না৷ তিনি জানান, ‘‘অপরাধী শিশু হলে, ধর্ষণের শিকার কোনো নারী অথবা কেউ নিজেকে সংবাদ মাধ্যমে দেখাতে না চাইলে আমি তাদের ফুটেজ নেই না৷''

‘আমরা নানা প্রশ্ন করে আসল ঘটনা জানার চেষ্টা করি’: জামিউল আহসান শিপু

এই বিষয়গুলো রিপোর্টার, ফটোগ্রাফার বা ক্যামেরা পার্সনের বাইরে নিউজ ম্যানেজারদের ওপরও অনেকটাই নির্ভরশীল৷ কারণ, তাদের হাত দিয়েই এগুলো প্রকাশ হয়৷ তাদের ভাষাই শেষ পর্যন্ত ছাপা হয়৷

দৈনিক সমকালের বার্তা সম্পাদক মশিউর রহমান টিপু মনে করেন, ‘‘রিপোর্টার বা ফটো সাংবাদিক যা-ই নিয়ে আসুন না কেন শেষ পর্যন্ত এডিটিং ডেস্কই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়৷ আমরা প্রতিবেদকদের ব্রিফ করি, গাইড লাইন দেই৷ তারপরও গেট কিপার হিসেবে তো আমরা আছি৷''

তারপরও সংবাদমাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন চলে আসছে৷ আর এমনভাবে অভিযোগের বিষয় তুলে ধরা হয় যে মনে হবে যেন তার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে৷ এটা সাংবাদিকতার নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে৷ মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে যায়,'' বললেন সমকালের এই বার্তা সম্পাদক৷