1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিত্রদের ৩২ আসন ছেড়ে স্বতন্ত্রদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

শেষ পর্যন্ত হিসাবনিকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল৷ জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীকদের ৬টি আসন ছেড়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে আওয়ামী লীগ৷ আর ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4aGnq
টানা তিন মেয়াদ ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)ছবি: Lucivu Marin/AFP/Getty Images

ফলে ২৬৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন৷ এসব আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে৷ তবে ‘কিংস পার্টি' খ্যাতি পাওয়া দলগুলোর আশার গুড়ে বালি পড়েছে৷ সবার প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগ তাদের কিছু আসনে ছাড় দেবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকেই আসন দেয়নি৷

মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর এখন কেমন ভোট হতে যাচ্ছে? জানতে চাইলে ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা তো ভোট হচ্ছে না৷ ভোট হল অনেক প্রার্থীর মধ্যে পছন্দের প্রার্থী বেছে নেওয়া৷'' 

‘এটাতো কোন নির্বাচন হচ্ছে না’

অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, ‘‘যারা ভোট করছে তারা কারা? হয় আওয়ামী লীগের, না হয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, আর তাও যদি না হয় তাহলে যাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হল তারা৷ ফলে বুর্জোয়া গণতন্ত্রে যে সরকারী দল আর বিরোধী দল বলে যে একটা বিষয় আছে এই নির্বাচনে সেটা হচ্ছে না৷ কারণ যারা ভোট করছে তারা তো কেউ সরকার বিরোধী না, সবাই মিত্র৷''

রোববার সকাল থেকে নির্বাচনী মাঠে খানিকটা উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে৷ জাতীয় পার্টি ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়নি, ফলে তারা নির্বাচন থেকে সরে যেতেও পারে৷ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের পার্টি অফিসে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন৷ বিকেল ৪টার দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু৷ তিনি বলেন, ‘‘সব বাধা অতিক্রম করে আমরা নির্বাচন করছি৷ কোন চাপ নয়, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটে এসেছি৷ আমাদের একটা দাবি ছিল যে একটা ভালো ভোটের পরিবেশ যদি সৃষ্টি হয়, তাহলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে৷ ইসি ও সরকারের আশ্বাসে মোটামুটিভাবে একটা আস্থা এসেছে যে তারা নির্বাচনটা ভালোভাবে করতে চান৷ সরকার ইসিকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা সহযোগিতা করবে৷ সেই কারণে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের পক্ষ থেকে সব প্রার্থীকে অনুরোধ করছি যে, আমরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো৷''

‘‘সাধারণ মানুষ ভোটে অংশ নেবে'' জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন যাতে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাবো৷'' 

আসন সমঝোতা প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘‘২৮৩ আসনে ভোট করছি৷ কিছু কিছু আসনে আমাদের সিনিয়র নেতা যারা আছেন; সেই সমস্ত আসনে তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে বা হবে এ রকম একটা অবস্থায় আছি৷ বাট নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি এটাই বড় কথা৷ সেই সংখ্যাটা আপনাদের জানতে পারবো না৷ সব বাধা অতিক্রম করে নির্বাচনটা আমরা করছি৷ সেটাই বড় কথা৷ আমরা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ঘোষণা দিচ্ছি৷''

আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৩টি সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া৷ রোববার বিকেলে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়ে কমিশন সচিব জাহাংগীর আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়৷ এর মধ্যে ৫টি আসন ইসির বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে৷ এছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) জন্য ২৬টি এবং ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের জন্য ৬টি আসন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ এই ৬টি আসনের মধ্যে জাসদ পেয়েছে তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি পেয়েছে ২টি আর আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি পেয়েছে একটি আসন৷''

বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারী দলের আসন ভাগাভাগির পর যে নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে সেটি কেমন হবে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটাতো কোন নির্বাচন হচ্ছে না৷ সাজানো নির্বাচন হচ্ছে৷ এভাবে কী ভোট হয়? ভোট হলে যথার্থ বিকল্প থাকতে হবে৷ বাংলাদেশে দু'টি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মানুষ বিকল্প খোঁজে৷ এখানে একটার পরিবর্তে কী আরেকটা নেওয়ার সুযোগ আছে? সমঝোতা করে সাজানো নির্বাচন হচ্ছে৷ এটা একটা কলঙ্কিত নির্বাচনের পাঁয়তারা৷ এই নির্বাচন কোনভাবেই আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে না৷''

কিংস পার্টির আশায় গুড়ে বালি

কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মো. আবু জাফর বলেছেন, ‘‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, এমন আশ্বাসে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন৷ এরপরও যদি দেখেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না বা নির্বাচনের পরিবেশ নেই, তাহলে বিএনএম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে৷''

ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তিনি৷ গত ২০ নভেম্বর বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দিয়ে ফরিদপুর-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন৷ তার আসনটিতে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে এমন আশা করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ 

‘এটা তো ভোট হচ্ছে না’

কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত অন্য দলগুলো যেমন সুপ্রিম পার্টি, তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনপির জোট ছেড়ে আসা কল্যাণ পার্টির কিছু নেতাকে জয়ী করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল৷ তাদের ভোট করার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতাও থাকবে৷ তবে এসব নেতাদের কারও আসনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেনি৷ সরকারের এ ধরনের অবস্থানে কিংস পার্টিগুলোও দারুণ অসন্তুষ্ট হয়েছে৷ তারপরও তারা মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না৷

শুধুমাত্র ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বিএনপি থেকে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন৷ ফলে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে লড়ছেন৷

তৃণমূল বিএনপির সমশের মবিন চৌধুরীকে সিলেটে এবং তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জে ভোট করছেন৷ তাদের জেতানোর আশ্বাস দেওয়া হয়নি আওয়ামী লীগের তরফ থেকে৷

২০০ আসন থেকে প্রার্থী সরিয়ে নিয়েছে জাকের পার্টি

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে সারা দেশে দুই শতাধিক আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাকের পার্টি৷ ১০টির কম আসনে প্রার্থী রেখে বাকি আসনগুলো থেকে দলটি প্রার্থী সরিয়ে নিয়েছে তারা৷ দলের মহাসচিব শামীম হায়দার জানিয়েছেন, নির্বাচনে তারা থাকছেন৷ তবে জাকের পার্টি এবার ২১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল৷ তারা কোনো জোটে না গিয়ে এককভাবে নির্বাচন করছে৷ নিজেদের প্রতীক গোলাপ ফুল নিয়েই তারা নির্বাচন করবে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না৷ কিছু আসনে যাতে পুরো মনোনিবেশ করা যায়, সে জন্য ২০০-এর বেশি আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে৷''

নির্বাচনের আমি, তুমি, ডামি কে বা কারা?