মিলের বরাদ্দ বাড়িয়েও সপ্তাহে মিলছে না গোটা ডিম
১৫ অক্টোবর ২০২২২০২০ সালে শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবেরের জন্য শেষবার বরাদ্দ বাড়িয়েছিল সরকার৷ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মুখে গত সপ্তাহে বরাদ্দ বাড়ানো হয়৷ কিন্তু যে পরিমাণ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, এই টাকায় শিক্ষার্থীদের পরিমাণমতো ও যথেষ্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দেওয়া সম্ভব হবে না৷
১২ কোটির গ্রাস
প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের কাছে পুষ্টির উৎস স্কুলের মিড-ডে মিল৷ অর্থাৎ দুপুর বেলায় স্কুল থেকে দেওয়া খাবারই নিম্নবিত্ত পরিবারের লাখো শিক্ষার্থীর পুষ্টির উৎস৷ এদিকে খাবারের টানে স্কুলে আসে পড়ুয়ারাও৷ আর একারণে সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে মিডি ডে মিল একটি কার্যকর উদ্যোগ৷
১১ কোটি ৮০ লক্ষ পড়ুয়া এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় রয়েছে৷ ২০২০ সালে শেষ বার এই খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়িয়েছিল কেন্দ্র৷
কিন্তু প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ডাল, সবজি থেকে শুরু করে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়তে থাকায় খাবার দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন স্কুল শিক্ষকরা৷ ফলে প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি উঠেছে বারবার৷ মিড-ডে মিল খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিও৷ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সেই সুপারিশে সায় দিয়েছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে বাড়ানো হয়েছে মাথাপিছু বরাদ্দ৷
বরাদ্দ কতটা বাড়ানো হলো?
পড়ুয়াপিছু মিড ডে মিলের রান্নার খরচ ৯.৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে৷ কিন্তু মাথাপিছু বরাদ্দ বেড়েছে এক টাকারও কম৷ প্রাথমিক স্তরে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একজন পড়ুয়ার জন্য বরাদ্দ ছিল চার টাকা ৯৭ পয়সা৷ সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁচ টাকা ৪৫ পয়সা৷ অর্থাৎ মাথাপিছু ৪৮ পয়সা বেড়েছে৷ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ ছিল সাত টাকা ৪৫ পয়সা৷ নতুন বরাদ্দ অনুযায়ী, তা মাথাপিছু আট টাকা ১৭ পয়সা৷
অর্থাৎ এই টাকায় ডাল, সবজি, নুন, মশলা, ডিম, জ্বালানির খরচ সবই মেটাতে হবে৷
শিশুর প্রোটিনে ঘাটতি
শিক্ষক মহলের অধিকাংশেরই মত, সামান্য এই বৃদ্ধিতে মিড-ডি মিল সংকটের সুরাহা হবে না৷ অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেওয়া যাবে না৷ আগে থেকেই প্রকল্প চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা৷ সোমবার থেকে শনিবার স্কুল খোলা থাকলেও অনেক জায়গায় পাঁচ দিন খাবার দেওয়া হচ্ছে পড়ুয়াদের৷ আবার সেক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট খাবার দেওয়া যাচ্ছে না৷ মেনুতে কাটছাঁট করতে হচ্ছে৷
জঙ্গলমহলের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় চ্যালেঞ্জ আরো বেশি৷ ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল এলাকার শিরীষবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্চিস্মান পাড়িয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রোটিনের জন্য ডিম, সয়াবিন দেওয়া দরকার৷ এসব দেওয়া যাচ্ছে না৷ খাবারের পরিমাণ কম দেওয়া হচ্ছে৷ রান্নাতেও কম তেল, কম মশলার ব্যবহার করা করা হয় খরচ বাঁচাতে৷’’
এই স্কুলে ২৫ জন পড়ুয়ার জন্য মিড-ডে মিলের আয়োজন করতে হয়৷ তাতে খরচ বেশি পড়ে বলে মত অর্চিস্মানের৷
পাতে অর্ধেক ডিম
পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ব্লকে জ্যোথাড়া জ্ঞানদাময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সংখ্যা ৪৭৷ এখানকার প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর মাইতি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৫০ জনের নীচে ছাত্রছাত্রী হলে খরচ বেড়ে যায়৷ সপ্তাহে একটা করে গোটা ডিম দিতে পারি না৷ কিচেন গার্ডেনে সবজি উৎপাদন হচ্ছে বলে কিছুটা সুবিধা হয়৷ তাও পুষ্টি ঠিকঠাক হয় না৷’’
চলতি মাস থেকে যে বরাদ্দ বেড়েছে, তাতে সংকট কাটবে না বলে মনে করেন ঝাড়গ্রাম জেলার করঙ্গাডাহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমীর বেরার৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্তরে মাথাপিছু ৪৮ পয়সা বৃদ্ধি প্রহসন ছাড়া কিছু নয়৷ এই টাকায় ডিম দেওয়া যায়? এখন ডিম অর্ধেক করে দিই বা ভুজিয়া বানিয়ে দেওয়া হয় যাতে সকলের পাতে পড়ে৷ ৪৮ পয়সায় বাড়তি কী দেওয়া সম্ভব?’’
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বরাদ্দ বেড়েছে না বলাই ভালো৷ গত দুই বছরে যতটা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তার তুলনায় বরাদ্দ কমেছে বলা যায়৷ এখন দেশের প্রতি তিন জন শিশুর এক জন অপুষ্টিতে ভোগে৷ মিড-ডে মিলের খাতে আরো টাকা না বাড়লে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণ হবে না৷’’