মিয়ানমারে নিহত রোহিঙ্গাদের ‘তালিকা' প্রকাশ
১৭ আগস্ট ২০১৮তবে আপাত সাধারণ এই মানুষটা আরো কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সঙ্গে নিয়ে এমন এক কাজ করেছেন যা উন্নয়নসংস্থা, বিভিন্ন দেশের সরকার, এমনকি সাংবাদিকদের পক্ষেও করা সম্ভব হয়নি৷ তাঁরা গত বছর মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে সেদেশের সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন চলাকালে যারা নিহত হয়েছেন বলে শোনা গেছে, তাঁদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন৷ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সেদেশের নাগরিক মনে করে না৷ দেশটি রোহিঙ্গাদের এমন ‘বাঙালি' বা ‘মুসলমান' হিসেবে বিবেচনা করে, যারা অন্যদেশ থেকে সেদেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন৷
গত বছর আগস্টে রাখাইনে এক নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের উপর দমনপীড়ন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ সেসময় প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন৷ সেনা অভিযানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হন বলেও জানিয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা৷
বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কাজ করা সাহায্য সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স'-এর হিসেব অনুযায়ী, গত বছরের সহিংসতার প্রথম মাসেই অন্তত ৬,৭০০ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন৷ টেকনাফে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে জরিপ চালিয়ে তৈরি সেই হিসেবে শুধুমাত্র একমাসে নিহতদের সংখ্যা বলা হলেও তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি৷
রোহিঙ্গাদের নিজেদের তৈরি নিহতদের সাম্প্রতিক তালিকাটি অবশ্য বেশ বিস্তৃত৷ তাঁদের হিসেবে, সহিংসতায় প্রাণ হারানো রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ হাজারের বেশি৷ এতে অবশ্য শুধু গত আগস্টই নয়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে আরেক সহিংসতায় নিহতদের কথাও যোগ করা হয়েছে৷ তালিকাতে নিহতের নাম, বয়স, বাবার নাম, মিয়ানমারের ঠিকানা এবং কিভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল তার বিশদ বিবরণ রয়েছে৷
নতুন এই তালিকার বিষয়ে মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘‘আমি যখন নিজেই শরণার্থীতে পরিণত হয়ে যাই, তখন এ ব্যাপারে কিছু একটা করার তাগাদা অনুভব করি৷'' তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে এই তালিকা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতার এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে কাজ করবে৷
রোহিঙ্গাদের তৈরি তালিকার বিষয়ে কথা বলতে মিয়ানমার সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স৷ কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি৷ গত বছরের শেষের দিকে অবশ্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছিল যে, আগস্ট মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল৷ এছাড়া ‘রোহিঙ্গা জঙ্গিদের' বিরুদ্ধে ২৫ আগস্ট থেকে ৫ অক্টোবর অবধি সেনাঅভিযান চলাকালে ৩৭৬ জন রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধারের কথাও স্বীকার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী৷
এআই/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)