1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমার কি ফাঁদ পেতেছে?

৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বার বার গোলা নিক্ষেপ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত করেছে মিয়ানমার৷ দেশটির এই ধরনের কার্যকলাপকে ফাঁদ মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷

https://p.dw.com/p/4GP8R
বাংলাদেশ জানিয়েছে, মিয়ারমার সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে (ফাইল ছবি)
বাংলাদেশ জানিয়েছে, মিয়ারমার সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে (ফাইল ছবি)ছবি: Reuters/M. P. Hossain

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সীমান্তে সংঘাত বাধাতে চাইছে মিয়ানমার৷ এর মাধ্যমে দেশটিতে থাকা বাকি ছয় লাখ রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের৷

বিষয়টিকে ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করে তারা বাংলাদেশকে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন৷

বাংলাদেশের সঙ্গেই ‘উল্টো' আচরণ

যুদ্ধবিমান থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শনিবার দুইটি মর্টার শেল ছোড়া এবং দুইটি সামরিক হেলিকপ্টারের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় রোববার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং খোও ময়েকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর৷ একই সঙ্গে এই ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে ঢাকা৷ এই নিয়ে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয়বার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হলো৷

কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট মনে করেন না সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেন (অব.) শহীদুল হক৷ তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমার অতীতে চীন ও থাইল্যান্ডের আকাশ সীমাও লঙ্ঘন করেছে৷ যে জন্য তারা ক্ষমা চেয়েছে, দুঃখ প্রকাশ করেছে৷ ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেনি৷ কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে উল্টো তারা বার বার ঘটনা ঘটাচ্ছে৷ বাংলাদেশ প্রতিবাদ করছে৷ কিন্তু তারা দুঃখও প্রকাশ করছে না৷”

তিনি বলেন, ‘‘এখন বিশেষ করে উত্তর রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ব্যাপক সেনা অভিযান চালাচ্ছে৷ তারই প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি৷’’

‘মিয়ানমার যদি সংঘাত বাধাতে পারে তাহলে তাদের সুবিধা’

বাকি রোহিঙ্গাদেরও পাঠাতে চায় মিয়ানমার?
এরইমধ্যে এই অভিযানের ফলে রাখাইন থেকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোকজন ভারতের মিজোরামে প্রবেশ করছে৷ রাখাইন ছাড়াও নো-ম্যানস ল্যান্ডেও রোহিঙ্গারা রয়েছেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘‘আসলে মিয়ানমার এক ধনের ফাঁদ পেতেছে৷ তারা সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করতে চাইছে৷ সংঘাত তৈরি করতে চাইছে৷ সেটা করতে পারলে তাদের ক্যাম্পে এবং সেখানে নিয়ন্ত্রণে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া সহজ হবে৷’’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল ( অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান অবশ্য মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তেমন নেই৷

‘‘কারণ সেখানে যে রোহিঙ্গারা এখনও আছে তাদের সংখ্যা নগণ্য৷ তারাও আবার নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারিতে আছে৷ তারা সহসা বেরিয়ে এসে অন্য জায়গার যাওয়ার সম্ভাবনা আমি আপাতত দেখছি না,” বলেন তিনি৷
 

দেশ ছাড়ার পাঁচ বছর পরও অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গারা

‘সামরিক প্রস্তুতিও প্রয়োজন’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, "বাংলাদেশের কোনো সংঘাতে জড়ানো ঠিক হবে না৷ মিয়ানমার সেই উসকানিই দিচ্ছে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে রোহিঙ্গা একটি বড় ইস্যু৷ আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এসব নিয়ে তারা অবশ্যই বাংলাদেশের ওপর ক্ষুব্ধ৷ তারা চাইছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন এড়িয়ে যেতে৷ কিন্তু বাংলাদেশকে কূটনৈকিতকভাবেই এগোতে হবে৷ সেটা আরো জোরদার করতে হবে৷ মিয়ানমার যদি সংঘাত বাধাতে পারে তাহলে তাদের সুবিধা৷”

পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কূটনৈতিক প্রস্তুতির পাশাপাশি সামরিক প্রস্তুতিও থাকা উচিত৷”

মেজর জেনারেল ( অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামানের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান মিয়ানমার আমলে নিচ্ছে না৷ আমলে নিলে তারা যে অভিযান আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চালাচ্ছে সেটা শুরুর আগে আরো চিন্তা ভাবনা করত৷ তিনিও বলেন, ‘‘তাই আমাদের অবস্থান আরো শক্ত হওয়া দরকার৷”

আমাদের অবস্থান আরো শক্ত হওয়া দরকার: আ ন ম মুনীরুজ্জামান

‘নাগরিক সমাজেরও প্রতিবাদ করা উচিত’

এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হলেও নাগরিক সমাজ থেকে যে প্রতিবাদ হওয়া উচিত তা হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ৷ 

তা হলে সরকারে জন্য সুবিধা হতো বলে মনে করেন মেজর জেনারেল(অব.) শহীদুল হক৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের কাছে যদি কঠিন বার্তা যেত তাহলে মিয়ানমার দুই দিনের মধ্যে এইসব তৎপরতা বন্ধ করে দিত৷”

এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ারমার সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে৷ সেখানে সীমান্ত নিরাপত্তা ও টহল জোরদার করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশটির কোনো নাগরিককে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না৷

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা সবমিলিয়ে ১২ লাখের মতো৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান