‘মুক্তমনা বইছে মুক্তমতের ঝাণ্ডা’
৯ এপ্রিল ২০১৪মুক্ত-মনা শব্দটি ইংরেজি ‘ফ্রিথিংকার' শব্দটির আভিধানিক বাংলা৷ বর্তমান সমাজে প্রচলিত ধর্মীয় উগ্রবাদ, কুসংস্কার, অদৃষ্টবাদের বিপরীতে একটি বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে এই ব্লগ৷ তাদের লড়াই ধর্মীয়, আদর্শগত, কিংবা দর্শনগত ‘কুসংস্কার আর ড্রগমা'-র বিরুদ্ধে, বিজ্ঞানভিত্তিক মুক্তচিন্তার পথে যাঁরা এগিয়ে যেতে চান – তাঁদের পক্ষে৷
মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অভিজিৎ রায় জানান, ২০০১ সালে একটি ইয়াহু গ্রুপের মাধ্যমে মুক্তমনার যাত্রা শুরু৷ পরে একে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটে রূপান্তর করা হয় এবং বছর চারেক আগে শুরু হয় মুক্তমনা বাংলা ব্লগ৷ ইংরেজি মাধ্যমেও মুক্তমনা কাজ করছে৷
কেন মুক্তমনা
শুরুটা কীভাবে হয়েছিল – এমন প্রশ্নে ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগকে অভিজিৎ বলেন, ‘‘কুসংস্কার, ড্রগমা এবং যেগুলো মানুষের প্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সে ধরনের বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করা এবং সেগুলো দূর করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, বা কী কী কাজ করা যায় – সেগুলো নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যেই মূলত মুক্তমনা গঠন করি৷''
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই প্রকৌশলী বলেন, মুক্তমনা যখন যাত্রা শুরু করে, সে সময় ইন্টারনেটে ধর্ম, দর্শন বা আদর্শগত বিষয়ে বাংলায় ‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং' ছিল কার্যত অনুপস্থিত৷ দক্ষিণ এশীয় প্রেক্ষাপটে মুক্তমনাই প্রথম বাংলায় এসব বিষয়ে আন্তর্জালিক আলোচনা চক্র শুরু করে, আজ যা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন ফোরামে৷
‘‘আপনি দেখবেন, যাঁরা একটু ক্রিটিক্যালি চিন্তা করেন, যাঁরা একটু প্রগতিশীল আলোচনা করেন, তাঁদের মুক্তমনা ব্লগার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়৷ এই মুক্তমনা নামটা এসছে আমাদের কাছ থেকে৷ আমরা মনে করি, এটা একটা বিশাল অ্যাচিভমেন্ট৷''
অভিজিৎ বলেন, ‘‘মুক্তমনার যে আদর্শিক সংজ্ঞা, তা বহু আগে থেকেই ছিল, আমরা জানি যে চার্বাকের সময় থেকে ড্রগমাকে প্রশ্ন করা, অথোরিটিকে প্রশ্ন করার যে চল ছিল – সেই ঝাণ্ডাই আমরা বহন করছি৷''
‘কুসংস্কার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে' কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ২০০৭ সালে জাহানার ইমাম পদক পায় মুক্তমনা, যা একটি বড় অর্জন বলে মনে করেন অভিজিত৷
সেকুলারিজম
তিনি মনে করেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের শুরুর দিকে সেকুলারিজমের নামে যার চর্চা হয়েছে তা আসলে ছিল ‘সর্ব ধর্ম সমন্বয়'৷ অথচ সেকুলারিজমের সংজ্ঞা অনুযায়ী রাষ্ট্র থাকবে ধর্ম থেকে আলাদা৷
‘‘আমাদের যাঁরা রাষ্ট্রীয় চিন্তক, তাঁরা কখনোই সেকুলারিজমের মর্ম উপলব্ধি করেছেন বলে আমি মনে করি না৷ এবং তাঁরা এই জিনিসটাকে আমার মতে ‘একটু ভিন্ন' বা কঠিনভাবে বললে ‘বিকৃতভাবে' উপস্থাপন করেছেন৷''
অভিজিতের মতে এর প্রভাব, কখনোই ভালো হয়নি৷ রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্ম মেশায় বহু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নির্ধারক হিসাবে দেখা গেছে ‘ফতোয়াবাজ মোল্লাদের'৷ আর কেবল বাংলাদেশ নয়, পুরো ভারতবর্ষেই এটা হয়েছে৷ এর ফলে হয়েছে গুজরাটের দাঙ্গা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস বা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘটনা৷
মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের পর সেই সর্ব ধর্ম সমন্বয়, সেটাও আমরা হারিয়ে ফেলি৷ এখন তো বিষয়টি চলে গেছে হেফাজত মোল্লাদের হাতে৷ তারা বয়ান করে, কীভাবে রাষ্ট্র চলবে, কে কি লিখবে...তারা মনে করে, যে সমালোচনাগুলো তাদের বিপরীতে যায়, সেসব ব্লগারদের হত্যা করা জায়েজ আছে৷''
এটি কোনো ‘সভ্য রাষ্ট্রের নিয়ামক' হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন অভিজিত৷
কার পক্ষে রাষ্ট্র?
অভিজিতের অভিযোগ, মুক্ত চিন্তার প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রও সমর্থন করছে না, বরং কাজ করেছ মৌলবাদী শক্তি ও শাসক শ্রেণির পক্ষে৷
কিছুদিন আগে সংসদে পাস হওয়া তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাকে ‘কালা কানুন' আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, মূলত প্রগতিশীল ও মুক্ত চিন্তার ব্লগররারই এর শিকার হচ্ছেন৷
মুক্তমনা চায়, একটি সভ্য রাষ্ট্রে সবাই যেভাবে ধর্মমত নির্বিশেষে নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন, সেই পরিবেশ তৈরি হোক বাংলাদেশেও৷ তা না হলে, বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি অমঙ্গলই বয়ে আনবে৷
সেরা ব্লগ প্রতিযোগিতা
ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড’-এর সেরা ব্লগ ক্যাটাগরিতে লড়ছে মুক্তমনা৷ ইউক্রেনীয়, রুশ, চীনাসহ ১৪ টি ভাষার প্রতিযোগীদের এ লড়াইয়ে মুক্তমনাই একমাত্র বাংলা ব্লগ৷ সেরা হওয়ার দৌঁড়ে মুক্তমনাকে এগিয়ে নিতে চাইলে প্রয়োজন বেশি বেশি ভোট৷
ভোট দিতে চাইলে ভিজিট করুন thebobs.com/bengali ওয়েবসাইট৷ এরপর সেখানে লগ-ইন করুন ফেসবুক, টুইটার, ভিকন্টাক্টে কিংবা ডয়চে ভেলের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে৷
বিভাগ বাছাই করে মুক্তমনা ব্লগের ঘরে বোতাম চেপে দিন আপনার ভোট৷ আগামী ৭ই মে পর্যন্ত প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একটি ক্যাটাগরিতে একটি করে ভোট দিতে পারবেন৷