1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্ন থেকে সামনের সারিতে সংগ্রামী রোকেয়া

১৪ ডিসেম্বর ২০১১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সূচনালগ্ন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন কাজী রোকেয়া সুলতানা৷ যুদ্ধের সময় বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/13S4b
Pushpita Prithwee, daughter of Kazi Rokeya Sultana, sent these photos and authorised DW to use these for website. Freiheitkämpferin Kazi Rokeya Sultana mit Ihrer Familie in Bangladesch Datum: 24.11.2010 Eigentumsrecht: Pushpita Prithwee, Dhaka, Bangladesh Stichwort: Bangla, bengali, Bangladesh, Bangladesch, Freiheitkämpferin, Kazi, Rokeya, Sultana, War, 1971, Liberation, Freedom, Fighter,
পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে মুক্তিযোদ্ধা কাজী রোকেয়া সুলতানাছবি: Pushpita Prithwee

১৯৪৮ সালের ১৬ই অক্টোবর বর্তমান মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন কাজী রোকেয়া সুলতানা৷ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী৷ একইসাথে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন তিনি৷ সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতি সেই ছাত্র জীবন থেকেই৷ এছাড়া দেশের বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতিতে নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্রেও তাঁর ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ৷ রোকেয়া এবং তাঁর সহকর্মী ছাত্র নেতারা তাই সত্তরের নির্বাচন পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্রী ও নারী সমাজকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন৷ অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের কাটতো মিছিল-সমাবেশ আর আন্দোলনের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে৷ আর সারাদিনের কর্মসূচি শেষ হতো শহীদ মিনার চত্বরে পরের দিনের জন্য নির্দেশনা ঘোষণার মধ্য দিয়ে৷ এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম তথা শরীরচর্চা কেন্দ্রের সামনের মাঠে শুরু করেন মেয়েদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি৷

এ সম্পর্কে ডয়চে ভেলের সাথে সাক্ষাৎকারে কাজী রোকেয়া সুলতানা বলেন, ‘‘আমরা যখন দেখলাম শতভাগ ছাত্রীরা বলছে যে, পাকিস্তানি বাহিনী যদি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাহলে আমরাও তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতেই রুখে দাঁড়াবো৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের অস্ত্র চালনার কোন দক্ষতাই ছিল না৷ তাই আমরা সেই মাঠে শুরু করলাম প্রশিক্ষণ৷ প্রাথমিকভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় রেঞ্জার ইউনিটের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি৷ আর বিশেষ করে আমাদের হাতে ভারি অস্ত্রশস্ত্র না থাকায় আমরা পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা অভিযানের জন্যই নিজেদের বিশেষভাবে প্রস্তুত করি৷'' তিনি জানান, ২০ মার্চের পর সাধারণ মানুষের বেশে পাক সেনাদের শহরের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ যাতে করে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহজ হয় পাক বাহিনীর পক্ষে৷ এসময়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে ছাত্রীদের তাই ঢাকায় আত্মীয় স্বজনের বাড়ি কিংবা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷

Bangladesh Unabhängigkeitsbewegung Flash-Galerie
মুক্তিযুদ্ধের কিছু প্রামাণ্য দলিলছবি: Public domain

২৫শে মার্চ কীভাবে ঢাকায় পাক সেনাদের অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন রোকেয়া এবং তাঁর সহকর্মীরা সে বিষয়ে তিনি জানান, ‘‘আমার বাড়ি ছিল ধানমন্ডিতে৷ তৎকালীন ইপিআর-এর প্রধান ফটকের কাছে৷ ২৫শে মার্চ যখন বেতার সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেল তখন আমার বাড়ির সামনে সবাই এসে জড়ো হয়ে জানালো যে উত্তর পাড়া থেকে তারা বের হচ্ছে৷ এর অর্থ হচ্ছে সেনানিবাস থেকে তারা বের হচ্ছে৷ আমরা স্পষ্টভাবে পরিচিত শব্দ ব্যবহার করতাম না৷ যাহোক, এসময় সবাইকে বলে দিলাম যে, এক পাও আমরা পিছু হটবো না৷ বালির বস্তা, ইটের বোঝা, গাছপালা যা কিছু আছে সেগুলো দিয়ে বড়পথগুলোতে ব্যারিকেড তৈরি করতে বলা হলো সবাইকে৷ ঠিক অল্প সময়ের মধ্যেই ঐ অঞ্চলের প্রায় সবদিকে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হলো৷ এরপরে আমার বাড়ির ছাদ থেকে দেখতে পেলাম প্রথমে পুলিশ লাইনে, দ্বিতীয়ত তৎকালীন ইপিআর এবং এরপরেই নিলক্ষেতে আগুন জ্বলছে৷ এভাবে রাত ১০ টা থেকে প্রায় একটা-দেড়টা পর্যন্ত মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম৷ এরপর মাইকে ঘোষণা শুনতে পেলাম উর্দু ভাষায়৷ বিশেষ করে সবাইকে সতর্ক করে দিচ্ছিল এবং বলা হচ্ছিল বাড়ির ছাদ থেকে পতাকা নামিয়ে ফেলতে৷ কিন্তু তবুও দেখা গেছে যারা পতাকা নামাতে বাড়ির ছাদে উঠেছে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়েছে৷ আমি দেখলাম এক বৃদ্ধ মানুষ তার স্ত্রীর শাড়ি গায়ে জড়িয়ে পতাকাটা নামাতে উঠেছে৷ আর গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল৷''

এরপর ২৮শে মার্চ আগরতলায় যাওয়ার জন্য সহকর্মীরা তাঁকে নিতে আসলেও তাঁর পিতার নির্দেশের কারণে সেসময় আর যাওয়া হয়নি৷ ফলে ঢাকা থেকে ডেমরায় গিয়ে কিছুদিন এক শ্রমিকের বাড়িতে ছিলেন তিনি৷ তবে সেখানে থেকেও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় কাজ করেছেন৷ এরপর ১৪ই এপ্রিল চলে যান কেরানিগঞ্জ এলাকায়৷ অবশেষ ৪ঠা জুন কলকাতায় পাড়ি জমান রোকেয়া৷ সেখানে গিয়ে পুরোদমে মুক্তিযুদ্ধের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি৷ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি এবং ত্রাণ সংগ্রহ করতেন৷ তখন থেকেই মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়মিত সমন্বয়ের মাধ্যমে নানা কাজে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন কাজী রোকেয়া সুলতানা৷

স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের পর কিছুদিন কমিউনিস্ট ধারার রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে দেশ গড়ার কাজ করেন মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া৷ তবে পরবর্তীতে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষা জগতে প্রবেশ করেন৷ সর্বশেষ লালমাটিয়া কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসর নিয়েছেন তিনি৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান