মৃত্যু দেবীর উপাসনা!
নতুন বছর উদযাপনের নানা রীতিনীতি রয়েছে, তার মধ্যে নানাবিধ পূজা-পার্বনও রয়েছে৷ কিন্তু মেক্সিকোর বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের উদযাপন একদমই ভিন্ন৷ নববর্ষ কাটান তাঁরা মৃত্যু দেবীর উপাসনা করে৷
দেবীর কত নাম
মৃত্যুর এই দেবী মেক্সিকোবাসীর কাছে লা সান্তা মুয়ের্তি নামে পরিচিত৷ তবে আরো অনেক নামে ডাকা হয় তাঁকে। অন্ধকারের দেবী, কৃ্ষ্ণমূর্তি, ছায়া মানবী, রাতের দেবীসহ আরো অনেক নামই আছে তাঁর৷ তবে মৃত্যু দেবী নামেই বেশি পরিচিত৷
আরোগ্যের দেবী!
নামে ‘মৃত্যু দেবী’ হলেও আদতে এই দেবতা রোগমুক্তি দেন৷ মেক্সিকোর আজটেক সভ্যতায় এই দেবীর আরাধনার ইতিহাস পাওয়া যায়৷ সেই ঐতিহ্যই ধরে রেখেছেন প্রাচীনপন্থি মেক্সিকানরা৷ তাঁরা বিশ্বাস করেন লা সান্তা মুয়ের্তি তাঁদেরকে সুস্বাস্থ্য, সৌভাগ্য, আরোগ্য, নিরাপত্তা দেবেন এবং সবসময় অসম্মান ও সহিংসতা থেকে দূরে রাখবেন৷
কঙ্কালমূর্তি!
সাধারণত দেবী মূর্তি মাটি বা পাথরে খোদাই করে তৈরি হয়৷ কিন্তু লা সান্তা মুয়ের্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় নারী দেহের কঙ্কাল থেকে৷ যে-কোনো নারী দেহের সম্পূর্ণ বা অর্ধেক কঙ্কাল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয় মৃ্ত্যুর এই দেবীকে৷ তবে ছোট ছোট রেপ্লিকা মূর্তি তৈরি হয় মাটি, প্লাস্টিক বা কাঠ দিয়ে৷ সেখানে কঙ্কালের অবয়ব ঠিক রাখা হয়৷ ভক্তদের বহনের জন্য রেপ্লিকা বানানো হয়৷
ধোঁয়া ফুঁকে আরাধনা!
এই দেবীকে সন্তুষ্ট করতে ভক্তরা মিছিল, হাঁটু মুড়ে পথ পাড়ি, মন্ত্র পড়ে পুস্পাঞ্জলি দেওয়াসহ অনেক কিছুই করেন৷ তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে আচারটি লা সান্তা মুয়ের্তির ভক্তরা পালন করেন, সেটি হচ্ছে ধোঁয়া ফুঁকা৷ সিগারেট, হুক্কা বা ধূপের ধোঁয়া মুখে নিয়ে দেবীর গায়ে ফেলে সম্মান জানানোর রীতি অনেক পুরোনো৷ যেখানেই দেবীকে দেখেন, ভক্তরা সেখানেই ধোঁয়া ফুঁকে দেন৷
দেবীর সাজ
শুধু কঙ্কাল প্রতিস্থাপন করেই দেবীর সাজসজ্জা শেষ হয়ে যায় না৷ গায়ে চড়ানো হয় পোশাক ও গয়না৷ কোথাও সোনার গয়না দেওয়া হয় সোনালি সিল্কের আলখেল্লার সঙ্গে, হুডি টুপির মতো মাথা ঢাকা থাকে৷ কোথাও সাধারণ কাপড়ের আলখেল্লা ও পয়সা ও পুতির গয়নায় জড়ানো থাকে৷কখনো কখনো পোশাকে যুক্ত থাকে পালক আর অন্যান্য অনুষঙ্গ হিসেবে থাকে ফসল মারাইয়ের কাস্তে ও কাঠের গ্লোব৷
যাজকদের ক্ষোভ
লা সান্তা মুয়ের্তির আরাধনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ মেক্সিকোর গির্জার যাজকরা৷ শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবার সিগারেট, গাঁজার ধোঁয়া ফুঁকে আরাধনাটাকে স্বাস্থ্যকর বলে মানছেন না তাঁরা৷ তবে তাঁদের নিন্দা ও ক্ষোভের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লা সান্তা মুয়ের্তির উপাসক৷ একবিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এই দেবীর উপাসক৷