প্রশ্নপত্র ফাঁস
১ অক্টোবর ২০১৫একদিকে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে৷ অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পরীক্ষার ফল বাতিল করে নতুন পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে৷ তাদের উপর নির্দয়ভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ৷ এমনকি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা শিক্ষার্থীদের থানায় ধরে নিয়েও নির্যাতন চালানো হচ্ছে৷ – এভাবেই সম্পূর্ণ পরিস্থিতির বর্ণনা করে অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেধাহীন এক সমাজের দিকে এগোচ্ছি আমরা৷ এক পর্যায়ে যার পক্ষে যেটা সম্ভব নয়, তার হাতে সেই দায়িত্ব যাওয়ার ফলে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে আমাদের সমাজ৷''
তাঁর মতে, ‘‘১০-১২ বছর আগে ছিল নকল৷ এখন নকল নেই, আছে প্রশ্ন ফাঁস৷ শুধু মেডিকেল নয়, সব ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে৷ এটা একটা বড় লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে৷ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে৷ এমনকি চিকিৎসকরাও জড়িয়ে পড়ছেন এই ব্যবসায়৷ এখন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা যখন চিকিৎসক হবে তখন তাদের হাতে চিকিৎসা সেবা কতটা নিরাপদ থাকবে, তা এক বিরাট প্রশ্ন৷ আমাদের মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হচ্ছে৷ জাতিকে এক সময় এর মাশুল দিতে হবে৷''
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল টোয়েন্টিফোর-এর প্রতিবেদন
গত ১৮ই সেপ্টেম্বর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়৷ ঐ দিন রাতেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে চিকিৎসক ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় দেশের এলিট ফোর্স ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা ব়্যাব৷ এরা হলেন – জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া (৪১), ডা. জেড এম এ সালেহীন শোভন (৪০), এস এম সানোয়ার (৩০) এবং মো. আখতারুজ্জামান তুষার (৩৮)৷ এঁদের মধ্যে জসিম পেশায় একজন ব্যবসায়ী৷ শোভন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে নোয়াখালীতে কাজ করছেন৷ সানোয়ার ই-হক কোচিং সেন্টারের একজন শিক্ষক এবং তুষার লাইলী-আবেদ কনস্ট্রাকশন নামে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক৷ প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে তাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে বলে ডয়চে ভেলের কাছে স্বীকার করেছেন র্যাব-এর পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান৷
ঐ ঘটনার পর ২১শে সেপ্টেম্বর প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন রংপুর মেডিকেল কলেজের ৩ চিকিৎসকসহ সাতজন৷ র্যাব-এর কাছে তাঁরা প্রশ্ন ফাঁসের কথা স্বীকার করেন৷ এতসব ঘটনার পরও বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অধিকাংশ সংবাপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, এটা একটা গুজব৷ শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, তা যৌক্তিক নয়৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে – তাহলে কি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালাতে হবে? তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এভাবে পুলিশ নিপীড়ন চালাবে?
টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রশ্ন ফাঁসের ফলে প্রতিযোগিতা বিনষ্ট হচ্ছে, শিক্ষা বাণিজ্যে রূপান্তর হচ্ছে৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে৷ আমি তো মনে করি, সরকারের একটি মহল এর সঙ্গে যুক্ত না থাকলে এভাবে প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে না৷ আমরা এখন যত কথাই বলি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রায় ভালো ফল অর্জন করেছি আমরা, কিন্তু আসলে ভেতরে ফাঁকা থেকে যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘কিছু শিক্ষার্থী যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে৷ তারা যেন সন্ত্রাসী, অপরাধী৷ আসলে তাদের কথা তো শুনতে হবে৷ কিন্তু সবাই যেন উট পাখির মতো মাথা গুজে বসে আছে৷ আমার তো মনে হয়, এর পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র আছে৷ মূল কথা হলো – এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন৷''