1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেয়েদের ভাতা, সস্তা গ্যাস, ফ্রি বিদ্যুৎ জেতাবে কংগ্রেসকে?

গৌতম হোড় নয়াদিল্লি
২৭ অক্টোবর ২০২৩

পাঁচ রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ভোটারদের মন পেতে কংগ্রেস জনমোহিনী প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছে।

https://p.dw.com/p/4Y5ud
সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস নেতারা।
সোনিয়া গান্ধীও এবার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। ছবি: Hindustan Times/IMAGO

মেয়েদের প্রতি মাসে ভাতা, বাসে বিনা পয়সায় ভ্রমণ, কৃষকদের হয় ঋণ মকুব বা বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণে অনুদান, ছাত্রদের ঢালাও সাহায্য, পাঁচশ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার, বিনা পয়সায় একশ ইউনিট বিদ্যুৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যভেদে মেয়েদের দেয়া টাকার পরিমাণ কম-বেশি হয়েছে মাত্র।

কর্ণাটকে এভাবেই বিজেপি-কে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গেও এর আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েদের ভোট কুড়াতে পেরেছিলেন মমতা। আর তেলেঙ্গানা ও মধ্যপ্রদেশে, ক্ষমতায় আসার জন্য এবং ছত্তিশগড়, রাজস্থানের মতো জায়গায় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য কংগ্রেসও এই ঢালাও প্রতিশ্রুতির রাস্তায় হেঁটেছে। 

কোথায় কী প্রতিশ্রুতি?

তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস ছয়টি গ্যারান্টির ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ, ক্ষমতায় এলে তারা এই সিদ্ধান্তগুলি রূপায়ণ করবে।

প্রথম গ্যারান্টির নাম মহালক্ষ্ণী। তাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নারীকে মাসে আড়াই হাজার টাকা দেয়া হবে। গ্যাসের সিলিন্ডার দেয়া হবে পাঁচশ টাকায়। সরকারি বাসে তারা গোটা রাজ্যে বিনা পয়সায় যাতায়াত করতে পারবেন।

কংগ্রেস জিতলে কমল নাথই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
কংগ্রেস জিতলে কমল নাথই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। ছবি: Imago/Hindustan Times/M. Zakir

গৃহজ্যোতি গ্যারান্টিতে প্রতি মাসে দুইশ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা পয়সায় দেয়া হবে। ইন্দিরাআম্মা গ্যারান্টিতে প্রতিটি গৃহহীন পরিবার বাড়ির জন্য জমি ও পাঁচ লাখ টাকা পাবে। আর যারা তেলেঙ্গানা রাজ্যের জন্য লড়েছিলেন, তারা ২৫০ বর্গ গজের জমি পাবেন বাড়ি বানাবার জন্য।

যুবা বিকাশম গ্যারান্টিতে প্রত্য়েক যুবক, যুবতী পাঁচ লাখ টাকার কার্ড পাবেন। প্রতিটি মণ্ডলে একটি করে ইন্টারন্য়াশনাল স্কুল হবে। চৌথা গ্যারান্টিতে প্রত্যেক সিনিয়র সিটিজেন মাসে চার হাজার টাকা পেনশন পাবেন। ১০ লাখ টাকার বিমা করানো হবে।

মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস আবার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথকে সামনে রেখে নির্বাচনে লড়ছে। সেখানে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি হলো, প্রত্যেক নারীকে মাসে এক হাজার পাঁচশ টাকা করে দেয়া হবে। প্রত্যেকের জন্য ২৫ লাখের স্বাস্থ্যবিমা করা হবে, অনগ্রসর-সহ অন্যদের সংখ্যা জানতে জাতিগত সমীক্ষা করা হবে।

কমল নাথের প্রতিশ্রুতি, দুই লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মকুব করা হবে এবং মধ্যপ্রদেশ আইপিএলের একটা টিম পাবে। এছাড়া প্রথম ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা পয়সায় দেয়া হবে। পরের দুইশ ইউনিট অর্ধেক দামে পাবেন উপভোক্তারা। সরকারি স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের মাসে পাঁচশ টাকা, নবম-দশমের পড়ুয়াদের মাসে এক হাজার টাকা এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের মাসে দেড় হাজার টাকা দেবে সরকার। 

কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, মেয়ের বিয়েতে সরকার এক লাখ টাকা দেবে।

রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের জন্য

রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের সরকার আছে। রাজস্থানে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি হলো, ক্ষমতায় এলে তারা পাঁচশ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার দেবে এবং পরিবারের নারী প্রধানকে বছরে দশ হাজার টাকা দেবে।

ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, ক্ষমতায় এলে আগেরবারের মতো কৃষি ঋণ মকুব করা হবে। জাতিগত সমীক্ষা করা হবে। ১৭ লাখ ৫০ হাজার গৃহহীনকে বাড়ি দেয়া হবে। আর চালের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য বাড়ানো হবে। আদিবাসীদের জন্য তেন্দু পাতার সংগ্রহমূল্য বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কংগ্রেস।

রাজস্তানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট।
অশোক গেহলটের সঙ্গে শচিন পাইলটের ঝগড়ার ফলে রাজস্থান কি হাতছাড়া হবে কংগ্রেসের?ছবি: Vishal Bhatnagar/NurPhoto/picture alliance

কৌশলেও বদল

কংগ্রেস এবার অনেক আগে থেকে ভোটের প্রচার শুরু করেছে। সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়ংকা, খাড়গেরা প্রচার করছেন। তাছাড়া অন্য রাজ্য থেকে কংগ্রেসের নেতা ও মন্ত্রীদের এই চার রাজ্যে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে তারা বিশেষ দায়িত্বে থাকবেন।

প্রতিশ্রুতিতে ফল হবে?

এই প্রতিশ্রুতি পালন করতে গেলে বিশাল আর্থিক দায় নিতে হয়। এমনিতে রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা যে খুব ভালো এমন নয়। তা সত্ত্বেও ভারতে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে এই ধরনের ঢালাও জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কেন্দ্রে বিজেপি য়েমন কৃষকদের সারা বছর ধরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে যায়। গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য বিমা করানো হয়েছে। তেমনই প্রতিটি দলই বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দেয়।

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তখনই ক্ষমতায় আসা যায়, যখন ওই দলের নেতাদের একটা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে, দলের মজবুত সংগঠন থাকে। কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে যত প্রতিশ্রুতিই দিক না কেন, তারা এখন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় তারা প্রধান বিরোধী দল। দুই রাজ্যে  দলের শক্তিশালী রাজ্য নেতারা আছেন।  দুই রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে। ফলে সেখানে এই প্রতিশ্রুতিতে কাজ হতেই পারে।''

তবে শরদ বলেছেন, ''কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দলও এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয় ও অতীতেও দিয়েছে। রূপায়ণও করেছে। ফলে সেখানে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেতা যাবে না। সেখানে দেখতে হবে কংগ্রেস ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে পারছে কিনা।''

কিন্তু সংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্যের মতে, ''দিল্লির অভিজ্ঞতা বলছে, প্রতিশ্রুতিতে বেশ ভালো কাজ হয়। দিল্লিতে 'পানি মাফ, বিজলি হাফ'-এর প্রভাব রীতিমতো পড়েছিল। মেয়েদের বাসে বিনা পয়সায় যাতায়াতের প্রভাবও গরিবদের উপর প্রবলভাবে পড়েছে। এই প্রতিশ্রুতি খারাপ না ভালো, এর আর্থিক দায় কোথায় গিয়ে ঠেকবে, এ সব প্রশ্নের মধ্য়ে না গিয়ে বলা য়ায়, এর প্রভাব পড়ে।''

জয়ন্ত মনে করেন, ''যারা কোনো দলের কট্টর সমর্থক নন, যে কোনোদিকেই ভোট দিতে পারেন, তাদের উপর এই ধরনের প্রতিশ্রুতির প্রভাব পড়ে। আর গরিবরা দেখে তাদের মাসে কতটা সাশ্রয় হচ্ছে। তারাও তখন এই প্রতিশ্রুতি বিচার করে ভোট দেয়।''

সমীক্ষা কী বলছে

এবিপি-সি ভোটার্স-এর সমীক্ষা বলছে,  ১১৯ সদস্যের বিধানসভায় তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস ৪৮ থেকে ৬০, বিআরএস ৪৩ থেকে ৫৫, বিজেপি এবং অন্যরা পাঁচ থেকে ১১ আসন পেতে পারে। মধ্যপ্রদেশের ক্ষেত্রে তারা বলছে, কংগ্রেস ১১৩ থেকে ১২৬টা এবং বিজেপি ১০৪ থেকে ১১৬টা আসন পেতে পারে। ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস ৪৫ থেকে ৫১টি এবং বিজেপি ৩৯ থেকে ৪৫টি আসন পেতে পারে। রাজস্থানের ক্ষেত্রে বিজেপি পেতে পারে ১২৭ থেকে ১৩৭টি আসন। আর কংগ্রেস ৫৯ থেকে ৬৯টি আসন।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷