মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন
৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯কেপ ভ্যার্দের একটি সংগঠন যৌনাঙ্গচ্ছেদ কে মানবাধিকার লংঘন বলে মনে করছে, ঐ সংগঠনে কাজ করছেন কাফুই আজা মাগবো জনসন৷ আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ এগিয়ে এসেছে যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধ করতে৷ তবে সবাই পেরে উঠছে না৷ সে প্রসঙ্গে মেইগা জানালেন, এখানে এফজিএম বন্ধ করতে আইন করা হয়েছে, আইন হয়েছে গৃহ নির্যাতনের বিরুদ্ধেও, তবে এসব আইন বাস্তবে রূপান্তর করা বেশ কঠিন কাজ৷
দীর্ঘদিন ধরে এফজিএম এর প্রথা প্রচলিত রয়েছে আফ্রিকা ছাড়িয়ে আরো বেশ কিছু দেশে৷ সমস্যাটি এখন আর আফ্রিকার একার নয়৷ শুরুতেই বলা হয়েছে, জার্মানি এ বিষয়ে বেশ সোচ্চার৷ জার্মানিতে এমন অসংখ্য অভিবাসী বসবাস করে যারা এমন দেশ বা সমাজ থেকে এসেছে যেখানে এফজিএম প্রচলিত৷ আশংকা করা হয়, ঐতিহ্য অনুযায়ী গোপনে তারা তাদের মেয়েদের এফজিএম করান৷ জার্মান আইনজীবী আনা লেনা জানালেন, জার্মানিতে এই প্রথা পুরোপুরি বে-আইনী৷ এটিকে দেখা হয় মানবাধিকার লংঘন হিসেবে৷ এবং কেউ যদি তাঁর মেয়েকে এফজিএম করায় তাহলে তার দশ বছর কারাদণ্ড হবে৷ তিনি বলেন, মানবাধিকার লংঘন রোধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য৷
যারা নিজেদের কন্যা সন্তানের ওপর এফজিএম প্রয়োগ করেছেন, এইরকম কয়েক জন বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে, জার্মানিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে আইনজীবী আনা লেনা আরো জানালেন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে বাচ্চা মেয়েটি ভয়ে মুখ খুলছে না, সে কোন কথাই বলছে না৷ নিজের বাবা মায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে তারা তখনো শেখেনি – অথবা দেখা যায় বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়া সে কিছুতেই মুখ খুলবে না৷ এমনকি সেই গোষ্ঠীর কেউই এ বিষয়ে কিছু বলছে না৷
সুদানের নাগরিক কাছালা নির্দ্বিধায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, কিভাবে তার ওপর এফজিএম করা হয়েছিল৷ তখন তাঁর বয়স ছিল খুবই অল্প৷ সে বলল, হ্যাঁ, আমার এখনো, স্পষ্ট মনে আছে যেদিন আমার ওপর এই জঘন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল৷ আমি ভুলি নি৷ আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম, কিছুতেই রাজী হই নি৷ কিন্তু আমার পরিবার আমাকে বার বার বোঝায়, আমাকে অসংখ্য উপহার কিনে দেয়৷
এ প্রসঙ্গে খার্তুমের মহিলারোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাদ এল ফাদিল জানান, পুরো বিষয়টি মেনে নেয়া বেশ কষ্টকর, বিশেষ করে যখন তারা বুঝতে পারে কী হতে যাচ্ছে বা কী হয়েছে৷ বাচ্চা প্রসবের সময় তারা যে যন্ত্রণা ভোগ করে তা ভাষায় বলে বোঝানো মুশকিল৷ এই প্রথার পক্ষে আবার মহিলারাই সওয়াল করেন৷ এসব মহিলারা তাদের ছোট শিশু কন্যা সন্তানদের রেহাই দিচ্ছেন না, তাদের মেয়েদের ওপর, নাতীদের ওপর চালিয়ে যাচ্ছেন এফজিএম৷
পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একটি মেয়ের ওপর করা হচ্ছে এফজিএম৷ এ ফলশ্রুতিতে তারা সারাজীবন ভোগ করে আমানবিক যন্ত্রণা৷ এর ফলে অনেকে মা হবার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে৷ অনেকে অত্যধিক রক্তক্ষরণে মারাও যায়৷ ৬০ বছরেরও বেশী সময় ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে এই প্রথা বন্ধ করার৷ যে সব দেশে এফজিএম এর প্রচলন সবচেয়ে বেশী, সুদান তার মধ্যে অন্যতম৷
২৩ বছর বয়সের নাদা মুদাথীর আওয়াদ, আবু সাইদ মসজিদে এসেছে৷ তাকে ঘিরে আরো প্রায় ১৫ জন মহিলা৷ সবাই জানতে চায় নাদা আওয়াদের কথা৷ কী হয়েছিল তাঁর? নাদা আওয়াদ জানালেন, অনেক ছোট বেলায় ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার কথা৷ নাদা জানান, হ্যাঁ, আমার ওপর যখন এই অস্ত্রোপচার করা হয় তখন আমি অনেক ছোট৷ আমি তখনো পুরোপুরি সাবালিকা হই নি৷ সমস্যা হচ্ছিল তখন থেকেই৷ যদিও টাইপ-১ এফজিএম করা হয়েছিল কিন্তু সেটিও ছিল প্রচণ্ড কষ্টকর৷ একজন ধাত্রী তা করেছিল৷ তাকে সুদানের অর্থমূল্যের ৫০ টাকা দেয়া হয়েছিল৷ যারা ধনী তারা আরো বেশী পয়সা খরচ করে থাকেন৷ এছাড়া ধাত্রীকে অনেক ধরনের দামী উপহারও দেয়া হয়৷
সুদানে এফজিএম এর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে প্রচারাভিযান৷ তাতে সামিল হয়েছে নাদা আওয়াদও৷ মাত্র ৫০ জন মহিলাকে দিয়ে শুরু হয়েছে এই প্রচারাভিযান৷ আবু সাইদ মসজিদে উপস্থিত সবাইকে সে বোঝানোর চেষ্টা করছে এফজিএম এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা৷ এফজিএম কীভাবে একটি মেয়ের জীবনকে ধ্বংস করতে পারে সে কথা৷ যেভাবেই হোক এফজিএমকে রোধ করতে হবে৷ সে জানায়, আমার বয়স ছিল খুবই কম৷ সে সময় সবাইকে এই অস্ত্রপচার করানো হতো, মনে হতো তা খুবই স্বাভাবিক৷ শুরুতে খোলাসা করে কিছুতেই বল হতো না৷ বাচ্চা মেয়েরা বুঝতেও পারতো না কী করা হচ্ছে বা কী করা হবে৷ উপহারের লোভে, টাকা পয়সার লোভে আমাদের বোঝানো হয়েছিল এবং না বুঝেই আমরা রাজী হয়েছিলাম৷ শুধু বলা হতো যা করা হচ্ছে তা তোমার ভালোর জন্যই করা হচ্ছে৷