মোটরবাইক রাইড শেয়ারিংয়ে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা
যানজট থেকে বাঁচতে ঢাকায় অনেকে মোটরবাইক রাইড শেয়ারিং ব্যবহার করেন৷ তবে চালকরা যেমন পুলিশের হয়রানির শিকার হন, তেমনি যাত্রীরাও চালকদের কাছ থেকে হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন৷ আছে চালকদের নিয়ম না মানার অভিযোগও৷
রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোটরবাইক
ঢাকার কারওয়ান বাজার, গুলশান, বনানী, মহাখালী, মগবাজারসহ একাধিক রাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি মোড়েই রাইড শেয়ারিং সেবা দিতে চালকরা মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ এদের কারণে অনেক সময় যানজট তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত একাধিক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য৷
অনিয়ম ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত
ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের অনিয়ম ঠেকাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়ে থাকে৷ ঢাকার কলেজ গেটে কর্তব্যরত একজন ম্যাজিস্ট্রেট জানান, মোটরবাইকের কাগজপত্র না থাকা, অবৈধ পার্কিং, উলটোপথে বাইক চালানোসহ ট্রাফিক আইন ভাঙার কারণে চালকদের সচেতন করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে জরিমানা করা হয়ে থাকে৷
ফুটপাথে মোটরবাইক চালানোই যেন নিয়ম
ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে নিয়মমাফিক ট্রাফিক সিগন্যাল পড়লেই চালকরা ফুটপাথে মোটরবাইক তুলে দিচ্ছেন৷ রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের একাধিক চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূলত ‘সময় বাঁচাতেই’ তারা এ ধরণের অনিয়ম করে থাকেন৷
যাত্রীদের অভিযোগ
নিয়মিত রাইড শেয়ারিং সেবা নেন এমন একজন ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ৷ রাইড শেয়ারিংয়ে তার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, শুরুর দিকে চালক এবং রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো নিয়মকানুন কড়াভাবে পালন করলেও এখন আর কেউ এসবের তোয়াক্কা করে না৷ পছন্দসই গন্তব্য না হলে রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করা, গন্তব্য জানতে চাওয়া, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়৷
‘বক্সে গেলে টাকা ছাড়া কথা নাই’
প্রায় তিন বছর থেকে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপে মোটরবাইক চালাচ্ছেন মোঃ আব্দুর রহিম৷ ঢাকার রাস্তায় প্রতিকূলতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রধান সমস্যা পুলিশ৷ আমাদের কাগজপত্রে কোনো সমস্যা নাই৷ গাড়ি ধরলেই পুলিশ কমপক্ষে দুই হাজার টাকার মামলা দিতে চায়৷ আর সেটা না করলে দুইশ থেকে পাঁচশ টাকা ঘুস দিয়া গাড়ি ছাড়ানো লাগে৷’’
অসহনীয় যানজট, চাহিদা বেড়েছে মোটরবাইকের
মেট্রোরেলের চলমান কাজ, দফায় দফায় রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি, অবৈধ পার্কিংসহ নানাবিধ কারণে ঢাকার রাস্তায় যানজট অসহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে৷ আর এতেই ব্যাপকভাবে বেড়েছে মোটরবাইকের রাইড শেয়ারিং সেবার চাহিদা৷
অ্যাপ ব্যবহারে চালকদের অনীহা
সরকারের রাইড শেয়ারিং নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট অ্যাপ ছাড়া কোনো চালক গাড়িতে যাত্রী বহন করতে পারেন না৷ কিন্তু অধিকাংশ চালকের সাথে কথা বলে অ্যাপ ব্যবহারে তাদের অনীহার কথা জানা গেল৷ এমন এক চালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, অ্যাপ ব্যবহার করলে আয়ের একটা বড় অংশ দিতে হয় কোম্পানিকে৷ তাছাড়া যাত্রীরা উলটাপালটা রিপোর্ট করে রেটিং কমিয়ে দিলে ট্রিপ পেতে সমস্যা হয়৷ এসব কারণে অ্যাপ ব্যবহার করতে চাই না আমরা৷’’
অদক্ষ চালক, ঝুঁকিপূর্ণ চালনা
ঢাকার গাবতলী-সদরঘাট রুটের বাসচালক শাহীন আলম জানান, রাস্তায় গত ২-৩ বছরে অস্বাভাবিকহারে মোটরবাইক বৃদ্ধি পেয়েছে৷ রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অনেক চালকই অদক্ষ, সামান্য প্রশিক্ষণে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নেমে পড়েছেন৷ সময় বাঁচাতে এ চালকদের ঝুঁকিপূর্ণ চালনার কারণে বড় যানবাহনের চালকদের অনেক সময়েই বিপদের সম্মুখীন হতে হয়৷
আইন না ভাঙলে আমরা মামলা দেই না
ঢাকার কারওয়ান-পান্থপথ সিগন্যালে কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সারওয়ার হোসেন সাম্প্রতিক ঘটনা এবং মোটরবাইক চালকদের পুলিশের ব্যাপারে হয়রানির ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ‘‘ট্রাফিক আইন না ভাঙলে আমরা মামলা দেই না৷ সেক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা করা হয়, স্বাভাবিকভাবেই তারা নারাজ থাকবেনই৷ আর অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে ঢালাওভাবে পুলিশকে দোষারোপ করা উচিত না বলে মনে করি আমি৷’’
ট্রাফিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘‘ঢাকার যানবাহনের ৫৬ শতাংশ মোটরসাইকেল৷ শুধু শাসন করে, চাপ দিয়ে বা আইন প্রয়োগ করে এখানে শৃঙ্খলা আনা যাবে না৷ ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে হবে৷ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরণের সংস্কার ছাড়া এ পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব না৷’’