ভারত-জাপান বন্ধন
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪প্রধানমন্ত্রী মোদীর জাপান সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে কূটনৈতিক মহল৷ এশিয়া মহাদেশে আর্থিক ও সামরিকভাবে চীনের শক্তি বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন ভারত ও জাপান৷ চীনের আগ্রাসী মনোভাব রুখতে আগামী দিনে ভারত ও জাপান কিভাবে একসঙ্গে এগোবে – সেই কৌশলগত বিষয়গুলি নিয়ে মত বিনিময় হয় দু'দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে৷ জাপানি শিল্পপতিদের এক বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চীনের নাম উল্লেখ না করে জাপানের সঙ্গে পূর্ব চীন সমুদ্রের সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে আঞ্চলিক ভূখণ্ড বিবাদে পরোক্ষভাবে চীনের ‘সম্প্রসারণবাদ' মানসিকতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন৷
বিশ্বে এখনো দেখা যাচ্ছে অন্য দেশের ভূখণ্ডে সমুদ্রপথ ‘কব্জা' করার প্রবণতা৷ মোদী এবং শিনজো আবে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা পোক্ত করে চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা শক্তির বার্তা দিয়েছেন৷ প্রত্যাশামত ভারত-জাপান বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি সই না হলেও বিশেষ স্ট্র্যাটিজিক ও বৈশ্বিক পার্টনারশিপ সংক্রান্ত টোকিও ঘোষণা-পত্রে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড়তর করার কথা বলা হয়৷ তবে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে – বলা হয় এ কথাও৷ পরমাণু ইস্যুতে জাপান বরাবরই স্পর্শকাতর৷ ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর সেটা আরো বেড়েছে৷ টোকিও অবশ্য পরমাণু সরবরাহ গোষ্ঠীতে দিল্লির সদস্যপদ সমর্থন করে৷
মোদীর জাপান সফরের বড় সাফল্য অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ৷ আগামী পাঁচ বছরে জাপান ভারতে বিনিয়োগ করবে ৩৫০০ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বা ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা৷ বিনিয়োগ করা হবে পরিকাঠামো উন্নয়ন, স্মার্ট সিটি প্রকল্প, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প, শিক্ষা স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি এবং সাধের বুলেট ট্রেন যা চলবে আমেদাবাদ-মুম্বই রুটে৷ বুলেট ট্রেন চালাতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে প্রায় ১০০ কোটি টাকা৷ অন্যদিকে জাপানি প্রকল্পগুলিকে দ্রুত ছাডপত্র দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত৷ আরো উন্মুক্ত করা হবে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি৷ জাপান-ভারত বিনিয়োগ প্রোমোশন পার্টনারশিপ নিয়ে উভয় নেতা খুবই আশাবাদী৷
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর জাপান যাত্রা শুরু করেন কিয়োটো শহর দিয়ে৷ তাঁর ঐ সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবরউদ্দিন জানান, ‘‘কিয়োটো শহর আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের এক প্রতীক৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্বাচনি কেন্দ্র বারাণসীকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চান৷ কূটনৈতিক মহল মনে করে, ভারতে ‘পুবে-তাকাও' নীতি পূর্ব এশিয়ার দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন মোদী৷ আবের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই আন্তরিক৷ মোদীকে স্বাগত জানাতে আবে ছুটে গেছেন কিয়োটোতে৷ মোদী তাই বেশ খোস মেজাজে তাঁর জাপান সফর শেষ করেছেন৷ বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-জাপান কৌশলগত সহযোগিতা এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে ভারসাম্য আনতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে৷