ম্যানিং কি ‘নায়ক’ না ‘অপরাধী’?
১৯ ডিসেম্বর ২০১১মার্কিন সৈনিক ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের বিরুদ্ধে বিচার পূর্ব-শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে দু'দিন -- শুক্র এবং শনিবার৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিক্সকে মার্কিন গোপন নথি সরবরাহ করেছিলেন তিনি৷ গ্রেপ্তারের পর ম্যানিংকে প্রথম জনসমক্ষে হাজির করা হয় শুক্রবার৷ শুনানির প্রথমদিনেই অবশ্য তাঁর আইনজীবী ডেভিড কমুস আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ন হন৷ তিনি সামরিক আদালতের সভাপতি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পল আলমানজা'র বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন এবং তাঁর অপসারণ দাবি করেন৷ আলমানজা অবশ্য এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন৷
ম্যানিংয়ের যখন শুনানি চলছিল, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ফোর্ট মিয়াদ সেনাঘাঁটির বাইরে গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিতি ছিল৷ এছাড়া কিছু প্রতিবাদকারীকেও দেখা গেছে সেখানে৷ ফলে সামরিক আদালতে শুনানি চলাকালে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷
ম্যানিংয়ের কী ধরনের শাস্তি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে৷ তবে, ২০১০ সালের মে মাসে গ্রেপ্তারের পর থেকে ম্যানিং অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন৷ তখন ২২ বছর বয়সি এই তরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভয়াবহ৷ সেটি হচ্ছে, ইরাক এবং আফগানিস্তান যুদ্ধ বিষয়ক লাখ লাখ গোপন নথি, কূটনৈতিক তারবার্তা, মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিমান হামলার ভিডিও ফুটেজ গোপনে ডাউনলোড করে উইকিলিক্সকে সরবরাহ করেছেন তিনি৷ এসব গোপন নথির প্রকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক কূটনৈতিক বিপর্যয়৷
যাহোক, আটকের পর বেশ কয়েকমাস নির্জন কারাগারে ছিলেন ম্যানিং৷ কোন ধরনের সংবাদ তাঁর কাছে পৌঁছাত না, অন্য কোন কয়েদি তাঁর কাছে যেতে পারতো না৷ দিনে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য নিজের ছোট্ট কুঠরি থেকে বের হতে পারতেন তিনি৷ ম্যানিংয়ের আইনজীবী'র দাবি, কারাগারে কয়েক রাত তাঁকে জোরপূর্বক নগ্ন অবস্থায় রাখা হয়েছিল৷
কারাগারে ম্যানিংয়ের এই করুন দশাকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অমানবিক হিসেবে আখ্যা দেয়৷ চলতি বছরের এপ্রিলে দুই নামজাদা মার্কিন আইনজীবী সেদেশের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা'র কাছে একটি চিঠি পাঠান৷ তাদের ভাষ্য ছিল, ম্যানিংকে কারাগারে যে অবস্থায় রাখা হয়েছে তা অমানবিক, অনৈতিক এবং আইন বহির্ভূত৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৫০ জনের বেশি আইনজীবী এই চিঠিকে সমর্থন জানান৷
এরপর ম্যানিংকে ক্যানসাস'এর একটি সামরিক কারাগারে স্থানান্তর করা হয়৷ সেখানে অন্যান্য কয়েদিদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পান তিনি এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও দেওয়া হয় তাঁকে৷
ম্যানিং কী নায়ক নাকি অপরাধী? এই বিতর্ক মার্কিন জনগণকে কার্যত দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে৷ সেদেশের কিছু রাজনীতিবিদ ম্যানিংকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবি জানিয়েছে৷ অন্যরা তাঁকে নায়ক মানছে এবং আশা করেছে তিনি বিচার প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি পাবেন৷ ইন্টারনেটে ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের মুক্তির দাবিতে শরিক হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং সেদেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ম্যানিংকে দোষী মনে করছেন৷ তবে, অভিযোগ প্রমাণ হলেও তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে না, এমনটা মনে করেন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক অধ্যাপক ম্যানফ্রেড নোয়াক৷ তিনি বলেন, গোপন নথি প্রকাশ হওয়ায় কোন একজন সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে, এরকম কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করা গেলে ম্যানিংয়ের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু সেটা একরকম অসম্ভব কাজ৷
মার্কিন অতীত ইতিহাস কিন্তু ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের পক্ষেই যাচ্ছে৷ ১৯৭১ সালে পেন্টাগনের বেশ কিছু গোপন নথি নিউ ইয়র্ক টাইমস'এর এক সাংবাদিকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন ডানিয়েল এল্সব্যার্গ৷ এই ঘটনাও গড়ায় আদালতে, কিন্তু সেখানে জয় হয় ডানিয়েল'এর৷ ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের ক্ষেত্রেও এমনটা হবে, এই প্রত্যাশা করছেন খোদ ডানিয়েল৷ তাঁর কাছেও একজন নায়ক ব্র্যাডলি ম্যানিং৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম