ম্যালেরিয়া দ্রুত নির্ণয়ের ব্যবস্থা
১৬ মার্চ ২০১৪ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটস একটি স্বয়ংক্রিয় মাইক্রোস্কোপের আদিরূপ নির্মাণ করেছে, যেটা ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হতে পারে৷ পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷ এক্ষেত্রে মাইক্রোস্কোপ সম্বলিত একটি সাদা বাক্স কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করা হয় এবং যিনি রোগটি পরীক্ষাটি করবেন, তাঁর কাজ হলো একটি কার্টিজে ১০টি স্লাইড স্থাপন করা৷
ফ্রাউনহোফার ফিউচার ফাউন্ডেশনের ম্যালেরিয়া প্রকল্পের প্রধান আন্দ্রেয়াস রাইমান ডয়চে ভেলেকে জানান যে, এভাবে সিস্টেমটি স্লাইডগুলো স্ক্যান করে একসঙ্গে৷
জার্মানির বন শহরে ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের এক মেডিকেল টেকনিকাল সহযোগী সাবিনে নাক্টসহাইম জানিয়েছেন, সাধারণ পদ্ধতিতে কোনো রোগীর দেহে ম্যালেরিয়া আছে সন্দেহ হলে তাঁর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে সেই রক্তে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে রঞ্জিত করা হয় এবং স্লাইডে রেখে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা হয়৷
রোগীর রক্তে যদি ম্যালেরিয়া পরজীবী থেকে থাকে, তবে কালো বেগুনি রঙের কিছু স্পট বা দাগ দেখা যায়৷ তবে এগুলি খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন৷ সাধারণ মাইক্রোস্কোপে এভাবে পরজীবী খুঁজে বের করায় অভ্যস্ত না হলে খুব সহজে তা দৃশ্যমান হয় না৷ এ কারণে সবাই এই পরীক্ষা করতে পারেন না৷ খুব কম সংখ্যক মানুষই জানেন সঠিকভাবে ম্যালেরিয়ার জীবাণু নির্ণয় পদ্ধতি৷ এমনকি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইনস্টিটিউটগুলিও এই রোগ নির্ণয়ের জন্য সুদূর আফ্রিকা থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসে, জানান আন্দ্রেয়াস রাইমান৷
বলা বাহুল্য, এ সব অভাবই এবার পূরণে করতে যাচ্ছে জার্মানির ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের তৈরি ১০ স্লাইড বিশিষ্ট নতুন যন্ত্রটি, যা কিনা স্লাইডগুলো উপর-নীচে নড়াচড়া করতে পারে৷ তাছাড়া এ সময় মাইক্রোস্কোপের অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টার্গেট এলাকাগুলোর দিকে নজর দেয়৷ কী ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে তার ছবি তুলতে থাকে ক্যামেরা এবং কম্পিউটার মেমোরিতে সেই তথ্যগুলো জমা রাখে সঙ্গে সঙ্গে৷ তারপর অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া পরজীবীর ছবির সাথে মিল আছে এমন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন স্লাইডগুলো খুঁজে বের করে যন্ত্রটি, ফলে সহজেই সম্ভব হয় রোগ নির্ণয়৷ শুধু তাই নয়, পরজীবীর সংখ্যা কম না বেশি – তাও বের করে দিতে পারে এ যন্ত্রটি৷ পরে অবশ্য একজন চিকিৎসককে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়৷
এই পদ্ধতির সুবিধা হলো ডিজিটাল যেসব ছবি এভাবে তোলা হবে, তা অন্য দেশের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়ে রোগ নির্ণয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে৷ এতে সময়ও বাঁচবে অনেক৷ বলা বাহুল্য, এই পদ্ধতিতে আফ্রিকার ম্যালেরিয়া কেন্দ্রগুলোতে খুব সহজেই রোগ নির্ণয় করা যাবে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ম্যালেরিয়া প্রোগ্রাম-এর কো-অর্ডিনেটর আন্দ্রেয়া বসমান বলেছেন, ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় যথেষ্ট ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ নেই৷ তাই তাঁর মতে, নতুন এই পদ্ধতিটি আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া নির্ণয়ে এবং ভ্যাকসিনেশনে বেশ সাহায্য করবে৷