যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী উত্তর কোরিয়া
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮পিয়ংচাং-এর শীতকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয় গত রবিবার৷ তার আগেই কানাঘুষো শোনা যায় যে, দুই কোরিয়াকে আরো কাছাকাছি আনার উদ্যোগ অলিম্পিকের পরেও বজায় রাখার প্রচেষ্টা করা হবে৷
বর্ণাঢ্য সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার উচ্চপদস্থ জেনারেল কিম ইয়ং চল যেখানে বসেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভানকাসহ মার্কিন প্রতিনিধিদল তার মাত্র কয়েক আসন দূরে আসন গ্রহণ করে৷ জেনারেল চল অতীতে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর উপর একাধিক আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে৷
ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ভবন, তথাকথিত ‘ব্লু হাউস’ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, জেনারেল চল-এর প্রতিনিধিদল বলেছে, উত্তর কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ‘খুবই আগ্রহী’৷
দক্ষিণ কোরিয়ার ইওনহাপ সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাতে এই মন্তব্য করা হয় ও বলা হয় যে, উত্তর কোরিয়ার সৌল ছাড়া ওয়াশিংটনের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো উচিত৷
চল ও মুনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে ব্লু হাউসের মুখপাত্র কিম অয়-কিওম বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট মুন উল্লেখ করেন যে, দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কের উন্নতি ও কোরিয়া উপদ্বীপ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রসঙ্গের বুনিয়াদি সমাধানের জন্য যথাশীঘ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সংলাপ সংঘটিত হওয়া প্রয়োজন৷’’
পারমাণবিক প্রসঙ্গটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ
কোরিয়া উপদ্বীপ সংক্রান্ত প্রসঙ্গাবলীর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচি ও কোরিয়া উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রবর্জিত এলাকা করার কথা বলেন৷
রবিবার শীতকালীন অলিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে চল ও মুনের মধ্যে সাক্ষাৎটি সংঘটিত হয়৷ অলিম্পিক চলাকালীন এটা ছিল উত্তর কোরিয়া প্রশাসনের উচ্চপদস্থ সদস্যদের সঙ্গে মুনের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ – যার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের ছোটবোন কিম ইও জং-ও ছিলেন৷
অলিম্পিকের আগে জেনারেল চলকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে প্রতিবাদ প্রদর্শন করা হয়েছিল, কেননা, অতীতে যে টর্পেডো আক্রমণে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি জঙ্গিজাহাজের ৪৬ জন নৌসেনার মৃত্যু ঘটে, তার সঙ্গে চল-এর যোগ ছিল বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে৷
ট্রাম্প প্রশাসন নিশ্চিত করে কিছু বলছে না
পিয়ংইয়াং যে নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কে আন্তরিক, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক প্রস্তাবের অর্থ তাই কিনা, তা অপেক্ষা করে দেখা হবে বলে হোয়াইট হাউস রবিবার জানায়৷
‘‘পিয়ংইয়াং আলোচনায় আগ্রহী – আজকের এই বার্তা নিরস্ত্রীকরণের পথে প্রথম পদক্ষেপের আভাস দিচ্ছে কিনা, সময়ের অগ্রগতিতে আমরা তা দেখবো’’ বলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স একটি লিখিত বিবৃতিতে মন্তব্য করেন৷ ‘‘ইত্যবসরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বহির্বিশ্বকে পূর্বাপর স্পষ্ট করে দিতে হবে যে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলি থেকে কোনো ফললাভ হবে না৷’’
স্যান্ডার্স স্বয়ং পিয়ংচাংয়ের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন৷ তিনি আরো বলেন যে, উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচি পরিত্যাগ না করা অবধি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ‘সর্বাধিক চাপ অভিযান’ চালিয়ে যাবেন৷
শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করে যে, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা লঙ্ঘণ করছে, এমন একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ চীন ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপে উষ্মা প্রকাশ করে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের পরিবর্তে তাদের স্বকীয় নিয়মকানুন প্রয়োগের অভিযোগ করে৷
এসি/এসিবি (ইওনহাপ, এএফপি, এপি)