যুদ্ধে ঘর হারানো মানুষদের প্রাচীন জীর্ণ স্থাপনায় বসবাস
মোহাম্মদ ওথমান ছোটবেলায় বেড়াতে যেতেন প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোতে৷ ভাবেননি সেরকম কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনেই একদিন আশ্রয় নিতে হবে তাকে৷ সিরিয়ার যুদ্ধ এমন অবস্থায় ফেলেছে অনেক পরিবারকে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ওথমানের নতুন জীবন
আড়াই বছর ধরে এমন একটি জায়গায় বাস করছেন ওথমান৷ মারাথ আল-নুমানের কাছের এক গ্রামে সুন্দর, ছিমছাম বাড়ি ছিল তাদের৷ কিন্তু বাশার আল আসাদের বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড যুদ্ধের কারণে বাড়ি-ঘর ছেড়ে এখানে চলে আসতে হয় তাকে৷
সন্তানরা আর স্কুলে যায় না
এক সময় এমন জায়গাগুলোতে স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে বেড়াতে আসতেন ওথমান৷ এখন নিজের বাড়ি নেই, বাড়ির ভাড়া দেয়ার টাকাও নেই বলে বাধ্য হয়ে বসবাস করেন এমন জায়গায়৷ চার সন্তান তার৷ টাকার অভাবে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারেন না৷
সাপ, বিচ্ছুর সঙ্গে বসবাস
তুরস্ক সীমান্তের কাছের সারজাবলেহ অঞ্চলে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই প্রাচীন অট্টালিকায় বসবাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ৩০ বছর বয়সি ওথমান বলেন, ‘‘এখানে গ্রীষ্মে বিচ্ছু, সাপ আর ধূলার সঙ্গে লড়তে হয় আমাদের৷ সঙ্গে জীবনের যাবতীয় চাপের ব্যাপারগুলো তো থাকেই৷ শীতে প্রচণ্ড শীত পড়ে এখানে৷ স্বাস্থ্যসেবার নাম-গন্ধ নেই৷ এখানে জীবন বড় কঠিন৷’’
ভূস্বামী থেকে জলপাই-কুড়ানি
মারাত আল-নুমানের কাছের গ্রামে বাড়ি ছিল, চাষের জমি ছিল৷ প্রাণ বাঁচাতে সব ফেলে চলে এসেছেন পঞ্চম শতকের এই স্থাপনার আশ্রয়ে৷ সংসার চালাতে নানা ধরনের মৌসুমী কাজ করেন ওথমান৷ কখনো জলপাই কুড়ান, কখনো যে কাজে ডাক আসে তা-ই করেন৷ কোনো কাজ না পেলে ধারের টাকায় চালাতে হয় সংসার৷ ওপরের ছবিতে এক নারীর জলপাই তোলার দৃশ্য৷
খাররাপ ক্যাম্প
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সিরিয়া যুদ্ধে ঘর-ছাড়া হয়েছেন কমপক্ষে ২৮ লাখ মানুষ৷ তাদের মধ্যে ১৭ লাখ নিজের দেশেই ঘর-ছাড়া৷ তাদের একটা অংশের আশ্রয়স্থল এই ধরনের প্রাচীন ভবন৷ স্থানীয়রা এমন ভবন বা ভবনকে ঘিরে গড়ে ওঠা আশ্রয় কেন্দ্রের নাম দিয়েছেন ‘খাররাপ ক্যাম্প’, অর্থাৎ ধ্বংসাবশেষের শিবির৷
পশুপালক মাহমুদ আবু খলিফা
সারজাবলেহর কাছেই ইডলিব৷ সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশেও কিছু প্রাচীন ভবন রয়েছে৷ একটির নাম বাবিস্কা৷ সেখানে বাস করে ৮০টির মতো পরিবার৷ স্ত্রী আর সাত সন্তান নিয়ে মাহমুদ আবু খলিফাও থাকেন সেখানে৷ ঘর-বাড়ি ছেড়ে এলেও ভেড়াগুলো সঙ্গে নিয়ে এসেছেন৷ ৩৫ বছর বয়সি তরুণের পরিবারের জীবিকা এখন ভেড়াগুলোর ওপরই নির্ভরশীল৷
বাড়ি ফেরা হবে?
নিজেদের বাড়িতে কখনো ফিরতে পারবেন কিনা ওথমান, মাহমুদরা তা জানেন না৷ তবে সেই দিনের অপেক্ষাতেই দিন গোণেন তারা৷ আশায় বুক বাঁধেন বারবার- একদিন শান্তি ফিরবে, সেদিন তাদেরও আবার বাড়ি-ঘর থাকবে!