যে গাছ কাত হয়ে গজায়
৯ মার্চ ২০১৫‘মাধ্যাকর্ষণ জীববিজ্ঞানী' আলিনা শিক-এর তত্ত্বাবধানে যে গাছগুলো রয়েছে, সেগুলো ওপরদিকে গজায় না৷ বরং একটি চাতুরি করে গাছগুলোকে বুঝতেই দেওয়া হয় না, মাধ্যাকর্ষণের টানটা কোনদিকে! এ ভাবে হয়তো একদিন দেয়ালেই গাছ বসানো যাবে, বলে বিজ্ঞানীদের আশা৷
হোয়েনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিস্ট ড. আলিনা শিক বলেন: ‘‘এই কাত হয়ে গজানো গাছটাকে এবার অন্যত্র লাগানো হবে, যেমন কোনো বহুতল ভবনের দেয়ালে৷ অপরদিকে আমরা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে গাছটার বাড়ের উপর নজর রাখছি, ঘোরানোর ফলে তার কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে৷''
আলিনা শিক-এর কর্মস্থল হোয়েনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিনহাউস-গুলিতে সূর্যমুখী, আরালিয়া ইত্যাদি নানা ধরনের গাছ কাত হয়ে গজাচ্ছে৷ তাদের মধ্যে কোনোটাই আলোর দিকে বেঁকে যায় না; তার কারণ, যে টবে গাছটা বসানো, সেটা ক্রমাগত ঘুরে যাচ্ছে৷
ক্লিনোস্টাট এবং স্ট্যাটোলিথ
টবগুলো একটি ঘোরা চাকতির ওপর বসানো, সেই চাকতি ঘোরে মোটর ও চেন দিয়ে৷ এগুলোকে বলা হয় ‘ক্লিনোস্টাট', যার আবিষ্কার আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে, উদ্ভিদের উপর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করার জন্য৷ আলিনা শিক'এর ব্যাখ্যান:
‘‘এক্ষেত্রে গাছটা শুধু একদিক থেকে নয়, সব দিক থেকে আলো পাচ্ছে৷ যার অর্থ, গাছের কোনো অংশ ছায়ায় থাকছে না, ফলে ফটোসিন্থেসিস-এর হার বেড়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া দেখা হচ্ছে, আলো কিংবা মাধ্যাকর্ষণের মতো বাহ্যিক উপাদান বদলে গেলে গাছের অভ্যন্তরীণ রসায়নে কোনো অদল-বদল হয় কিনা৷ শেষমেষ আমরা দেখব, গাছের কাঠের উপর তার কী প্রভাব পড়ে৷ কাত হয়ে যে গাছ গজিয়েছে, নিজের ওজন থেকেই তার উপর অনবরত চাপ ও টান পড়ে, কাজেই তার কাঠের গুণগত বৈশিষ্ট্য অন্যরকম হতে পারে৷''
বিজ্ঞানী হিসেবে আলিনা শিক জানতে চান, গাছের বড় হওয়ায় আলো এবং তাপ ছাড়া মাধ্যাকর্ষণ কী ভূমিকা পালন করে৷ এক্ষেত্রে প্রথমেই জানতে হবে, গাছেরা মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করে কিনা৷ সেজন্য আগে বুঝতে হবে, গাছেরা সাধারণত খাড়া হয়ে গজায় কেন:
‘‘উদ্ভিদরাও অন্যান্য প্রাণীদের মতো তথাকথিত স্ট্যাটোলিথ-এর মাধ্যমে মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করে – ছবিতে আমরা যেমন দেখতে পাচ্ছি৷ এই ‘ভারীত্বের কণাগুলি' মাধ্যাকর্ষণের ফলে নীচে পড়ে গিয়ে তলার কোষটির উপর চাপ দেয় – ঠিক এখানে যেমন দেখা যাচ্ছে৷ সাধারণ পরিস্থিতিতে উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া হবে, শিকড়গুলো নীচের দিকে বাড়বে, বাকি ডালপালা ওপর দিকে উঠবে৷''
সবুজ স্থাপত্য
টব একটানা ঘুরে যাওয়ার ফলে গাছেদের মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করার ক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে:
‘‘এ ভাবে ঘোরার ফলে স্ট্যাটোলিথগুলো আর নীচের দিকে পড়ে না, তলার কোষের উপর চাপ দেয় না৷ কাজেই গাছটি আর মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করতে পারে না এবং কাত হয়েই গজাতে থাকে৷''
কাত হয়ে গজানো গাছ দেখলে মানুষজন আজও চমকে যান, খুশি হন৷ তথাকথিত পরিবেশ-বান্ধব, ‘সবুজ' স্থাপত্যেও ইট-কাঠ-পাথরের দেয়াল থেকে কাত হয়ে গজানো গাছ খুব সুন্দর মিলে যাবে৷ গাছে ভরা দেয়াল বাড়ির শীততাপ, আর্দ্রতা ও ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে:
‘‘কাত হয়ে গজানো গাছ বাড়ির দেয়ালে বাগান করায় কাজে দিতে পারে – সবুজ স্থাপত্য! সে ক্ষেত্রে গাছগুলো অবিরাম ঘুরে যাওয়ার ফলে গরম আর ধোঁয়াশা কমানো যায় কিনা, তাও দেখা হচ্ছে৷ আবার ঘোরানো গাছ বাড়িতে ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ কাত হয়ে গজানো ঘুরন্ত গাছ দেয়ালে বসালে তা সুন্দর দেখাবে বৈকি৷''
বিশ্বের সব দেশেই আজ শহরের কেন্দ্রে জায়গা নেই বলে হাই-রাইজ বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে৷ এ যাবৎ গাছপালা সেই সব বাড়ির দেয়ালে লতানো ছিল কিংবা বারান্দার টবে লাগানো ছিল৷ এবার তারা দেয়াল থেকে কাত হয়ে গজাতে পারবে৷
তবে সেটা যে কবে ঘটবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷ আলিনা শিক একটি কোম্পানি সৃষ্টি করে বিনিয়োগকারী খুঁজছেন – তবে তাঁর কাত হয়ে গজানো গাছ বাজারে আসতে আরো কিছুদিন সময় লেগে যাবে৷