যোগীর ধাক্কা, প্রভাবশালী ওবিসি মন্ত্রীর সদলে ইস্তফা
১২ জানুয়ারি ২০২২উত্তরপ্রদেশে স্বামীপ্রসাদ মৌর্যের পরিচয় শুধু অনগ্রসর নেতা বলেই নয়, পাঁচবারের বিধায়ক একসময় মায়াবতীর দলে দুই নম্বর নেতা ছিলেন৷ পূর্ব ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে অনগ্রসরদের উপর তার বিপুল প্রভাবও আছে৷ পাঁচ বছর আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ ভোটের মুখে মঙ্গলবার তিনি মন্ত্রিপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এবং বিজেপিও ছাড়ছেন বলে জানিয়েছেন৷ তারপরেই তার তিন অনুগামী বিধায়কও দল ছাড়ছেন বলে জানিয়েছেন৷ আরো কয়েকজন ছাড়তে পারেন বলে বিজেপি নেতাদের আশঙ্কা৷
স্বামীপ্রসাদ মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরেই সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব টুইট করে বলেছেন, ‘‘স্বামীপ্রসাদ মৌর্য খুবই জনপ্রিয় অনগ্রসর নেতা এবং তিনি সামাজিক ন্যায়ের জন্য লড়াই করেন৷ তাকে ও তার সব অনুগামীকে সমাজবাদী পার্টিতে স্বাগত জানাই৷ সবাই মিলে পরিবর্তন আনব৷''
মৌর্য কেন ইস্তফা দিলেন
রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেলের কাছে মৌর্য যে ইস্তফার চিঠি পাঠিয়েছেন, সেখানেই তিনি লিখেছেন, যোগীর শাসনে গত পাঁচ বছরে দলিত, অনগ্রসর, কৃষক, বেকার যুবক, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা হয়নি৷ তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে৷ তাই তিনি মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন৷ তিনি বিষয়টি দলের মঞ্চে বহুবার তুলেছেন৷ তারপরেও কোনো কাজ হয়নি৷
যোগী এই ইস্তফা নিয়ে কোনো কথা বলেননি৷ উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য বলেছেন, ‘‘স্বামীপ্রসাদ কেন ইস্তফা দিয়েছেন তা আমি জানি৷ কিন্তু তাড়াহুড়ো করে ইস্তফা দেয়ার দরকার ছিল না৷ আলোচনা করলেই সমস্যা মিটে যেত৷''
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজ্য বিজেপি নেতার বক্তব্য, স্বামীপ্রসাদ আসলে তার ছেলের প্রার্থীপদ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন৷ তার মেয়েকে গতবার বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছিল এবং তিনি জিতেছিলেন৷ বিধানসভা নির্বাচনে ছেলে হেরে গিয়েছিলেন৷ এবার ছেলের জন্য নিরাপদ আসন চাইছিলেন৷ যা না পাওয়ায় তিনি ইস্তফা দিলেন৷
উত্তরপ্রদেশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘স্বামীপ্রসাদ মৌর্যের ৭০ থেকে ৮০টি বিধানসভা আসনে প্রভাব রয়েছে৷ ফলে তিনি বিজেপি ছাড়লে সেটা যোগীর ধাক্কা তো বটেই৷ তবে স্বামীপ্রসাদ গত বিধানসভা ভোটের সময় নিজের অনুগামীদের জন্য ১৫টি আসন চেয়েছিলেন এবং পেয়েছিলেন৷ তার মধ্যে ১২ জন জিতেছিলেন৷ তার ছেলে সহ তিনজন জিততে পারেননি৷''
শরদের বক্তব্য, ‘‘এবারও ১৫টি আসন চান তিনি৷ কিন্তু তাকে মাত্র পাঁচটি আসন দিতে চেয়েছিল বিজেপি নেতৃত্ব৷ তাই তিনি দল ছাড়লেন৷ তাছাড়া তিনি যোগী মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চেয়েছিলেন৷ পাননি৷ শ্রমের মতো কম গুরুত্বের মন্ত্রক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল৷ তবে তার দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত মূলত অনুগামীদের জন্য আসন না পাওয়ার কারণে৷''
কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
স্বামীপ্রসাদ মৌর্য দীর্ঘদিন মায়াবতীর বিএসপিতে ছিলেন৷ তিনি ছিলেন অঘোষিত দুই নম্বর নেতা৷ মায়াবতী যখনই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, স্বামীপ্রসাদ মন্ত্রী হয়েছেন৷ বিএসপি সরকারে না থাকলে তিনিই বিধায়কদলের নেতা হয়েছেন৷ তার পরিচিতি ও প্রভাব দুটোই রয়েছে৷
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘ওবিসি বা অনগ্রসরদের একটা অংশের মধ্যে স্বামীপ্রসাদের যথেষ্ট প্রভাব আছে৷ তিনি অখিলেশের সঙ্গে হাত মেলালে সমাজবাদী পার্টির লাভ এবং বিজেপির ক্ষতি হতে পারে৷''
জয়ন্তের মতে, ‘‘বিজেপি এবার মনে করছে, আগেরবারের তুলনায় তাদের জাঠ ভোট কমবে৷ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের ভোটেও তারা কম পাবে৷ দলিত ও আদিবাসী ভোটের পরিমাণও বাড়বে না৷ তাই তারা এখন ব্রাক্ষ্মণ ও অনগ্রসর ভোটের উপর জোর দিয়েছে৷ স্বামীপ্রসাদের দল ছাড়ার প্রভাব তাদের কৌশলের উপর পড়তেই পারে৷''
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত মনে করেন, ‘‘গোয়ার পর উত্তরপ্রদেশে বিজেপির মন্ত্রী, বিধায়করা দল ছাড়লেন৷ এতদিন বিজেপিতে নেতারা যোগ দিতেন৷ এখন দেখা যাচ্ছে, বিজেপি যে রাজ্য়ে ক্ষমতায় আছে, সেখানে মন্ত্রী ও নেতারা বিরোধী দলে যোগ দিচ্ছেন৷ এটাও ইঙ্গিতবহ৷ আর উত্তরপ্রদেশে স্বামীপ্রসাদ যথেষ্ট প্রভাবশালী নেতা৷ তিনি সদলবলে বিজেপি ছাড়লে ক্ষতি তো হবেই৷''
তবে শরদ মনে করেন, ‘‘এখনো সব সমীক্ষা উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-কে এগিয়ে রেখেছে৷ ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ভোট শুরু হবে৷ হাতে এখনো সময় আছে৷ অখিলেশ লড়াই করছেন, সাড়াও পাচ্ছেন৷ ফলে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন চিত্তাকর্ষক জায়গায় চলে গেল৷''
জিএইচ/জেডএইচ (পিটিআই, এএনআই)