যৌন অপরাধ বাড়িতেই হয় সবচেয়ে বেশি
১১ নভেম্বর ২০১৪আদালতের নির্দেশে করা ভারতীয় পুলিশের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷ দিল্লির ৪৪টি থানা এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে আদালতে পেশ করা এক হলফনামায় পুলিশ জানিয়েছে যে, চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের অভিযোগ দিল্লি পুলিশের কাছে আসে৷ তদন্ত করে দেখা যায় এরমধ্যে ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন বাড়ির আত্মীয়স্বজন এবং জানাশোনা ব্যক্তি৷ এই অপরাধ যেহেতু বাড়ির ভেতরে চার দেয়ালের মধ্যে হয়ে থাকে, তাই তা আন্দাজ করা বা রোধ করা পুলিশের ক্ষমতার বাইরে৷ সমীক্ষার প্রেক্ষিতে আদালত মন্তব্য করেছেন যে, পরিসংখ্যানই শেষ কথা হতে পারে না৷ পরিসংখ্যান হওয়া উচিত বিশ্লেষণ-ভিত্তিক, অপরাধীর মনস্তাত্বিকতা-ভিত্তিক৷
সবচেয়ে কষ্ট হয় আমার, যখন ভাবি যৌন নিগৃহীতা যে নারী পরিবারের পরিজন বা খুবই পরিচিত পুরুষটিকে বিশ্বাস করেছিল, আস্থা রেখেছিল, নিজেকে নিরাপদ ভেবেছিল, শেষপর্যন্ত সেই কিনা হলো ভক্ষক! বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে যৌন লালসা মেটাল৷ বিশ্বাস, আস্থার কানাকড়ি দাম নেই তাঁর কাছে৷ শিক্ষাদীক্ষা, রুচি, শালীনতা ও লজ্জা সংকোচের গলা টিপে আদিম রিপুর তাড়না সমাজকে এক লাগাম ছাড়া কদর্য অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ এই আদিম রিপুর তাড়না মানুষের মধ্যে সহজাত জানি৷ কিন্তু তাই বলে অনাচারকে কি মেনে নেওয়া যায়৷ কিভাবে এই জঘন্য অপরাধের ব্যাখ্যা করবো, তা আমার জানা নেই৷ এই তো কয়েকদিন আগের ঘটনা৷ সংবাদ মাধ্যমে বড় বড় অক্ষরে ছাপানো, ১৭ বছরের কিশোরীকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ করে যাচ্ছিল তাঁরই জন্মদাতা পিতা৷ ভয়ে লজ্জায় তা সয়ে যেতে যেতে একদিন সহ্য করতে না পেরে প্রতিবেশী মহিলাকে জানায় সেকথা৷ তিনি তাঁকে পুলিশের কাছে নিয়ে যান এবং ডাক্তারি পরীক্ষার পর তাঁর পিতাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ পশুও বোধকরি নিজের ঔরসজাত সন্তানকে রেয়াত করে, কিন্তু মানুষ করেনা, অবাক লাগে ভাবতে৷
দিল্লি পুলিশের সমীক্ষায় আরেকটি তথ্য কম অবাক করে না৷ ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণ ঘটনার পর ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা দমনে আইনকানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে৷ রাজধানী দিল্লি মহানগরী মেয়েদের কাছে এক বিপজ্জনক স্থান হয়ে উঠছে৷ মহিলারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে৷ ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে, হয়নি মহিলাদের সুরক্ষা৷ এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা মহিলাদের নিরাপত্তার দিক থেকে দিল্লিকে বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে বিপজ্জনক শহর বলে আখ্যায়িত করেছে৷ আফগানিস্তান, কঙ্গো, সোমালিয়া ও পাকিস্তানের পরে ভারতের স্থান৷ এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে আমি বলি দিল্লি তুমি মুখ ঢাকো লজ্জায়৷ প্রশ্ন এর আসল কারণ কি? আইন-শৃঙ্খলা দুর্বল নাকি বিচার ব্যবস্থা কমজোর৷ নাকি সরকারের নীতি নির্দেশিকা নিরর্থক, নাকি সমাজের মানসিকতা রুগ্ন৷ কেউ কেউ আবার মনে করেন, কন্যাভ্রুণ হত্যা, কন্যা সন্তানকে জন্মের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ফলে লিঙ্গ অনুপাতের ব্যবধান অন্যতম কারণ৷ আবার সমাজের অন্য মহল থেকে অন্য কথা ভেসে আসে৷ এক রক্ষণশীল সংগঠন পুরুষদের দোষ না দিয়ে মনে করে, মেয়েদের উত্তেজক পোশাক পরা উচিত নয়৷ তা না হয় বুঝলাম৷ কিন্তু তাহলে মুসলিম মেয়েদেরও কেন এই অনাচারের শিকার হতে হয়?