1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমান অধিকারবাংলাদেশ

'রাষ্ট্রই আদিবাসীদের কোণঠাসা করছে'

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আদিবাসীদের নিয়ে অনেক দিন ধরে গবেষণা করছেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ৷ সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে সংঘাত ও আদিবাসী সংকটের নানা দিকে নিয়ে তিনি ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলেছেন৷

https://p.dw.com/p/4l9zx
পাহাড়ে আদিবাসীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
পাহাড়িদের তাদের জীবন, ফসল, প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে বলে মনে করেন গবেষক পাভেল পার্থছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

ডয়চে ভেলে: পাহাড়ে এই সময়ে সংঘাত, হত্যার কারণ কী?

পাভেল পার্থ: বাংলাদেশে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর যে ‘মব ভায়েলেন্স' দেখছি তার সঙ্গে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের এই সময়ের সংঘাত সহিংসতা মিলিয়ে দেখলে হবে না৷ এটা আলাদা ধরনের ঘটনা৷ এর একটি ঐতিহাসিক চরিত্র আছে৷ এর অনেক মাল্টি লেয়ার এবং আন্ডার লাইন কজ আছে৷ এবারো বলা হচ্ছে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ৷ এই বাইনারী বিভাজন করে আসলে এই দেশের বাঙালি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে৷ জনমনে অবিশ্বাস তৈরি করা হচ্ছে৷ তবে এখানে বাঙালি জাতির জাত্যাভিমান আছে৷ কর্তৃত্ববাদ আছে পার্বত্য চট্টগ্রামে৷ দীঘিনালায় এর আগেও এইরকম ঘটনা ঘটেছে৷ এর আগে লংগদু গণহত্যা হয়েছে৷ লোগাং গণহত্যা হয়েছে৷ এই সবগুলো বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাবে এর বহু স্তরিক কারণ আছে৷


ডয়চে ভেলে: সেই কারণগুলো কী?
 

একজনকে কথিত সাইকেল চুরির অপবাদে গণপিটুনিতে হত্যা করা হলো৷ তিনি বাঙালি৷ পরে মামলায় যাদের অভিযুক্ত করা হলো তারাও বাঙালি৷ কিন্তু ওর প্রতিক্রিয়ায় যে চারজন নিহত হলেন তারা কেউই কিন্তু বাঙালি নয়৷ তারা আদিবাসী৷ তাহলে এটা পাহাড়ি আদিবাসীর সংঘাতের কোনো বিষয় ছিলো না৷ কিন্তু পাহাড়িদের ওপর হামলা৷ তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট কেন পোড়ানো হলো৷ এর উদ্দেশ্য কী? জুলাই বিপ্লবে কিন্তু এই প্রজন্ম অনেক ধরনের গ্রাফিতি এঁকেছে৷ তার মধ্যে ঢাকায় আমরা ওই গ্রাফিতিও দেখেছি যেখানে প্রশ্ন করা হয়েছে, কল্পনা চাকমা কোথায়? পাহাড়ে সেনাশাসন কেন? এই ধরনের মৌলিক প্রশ্ন কিন্তু উঠেছে৷ এই সব প্রশ্নের জবাব আমাদের খুঁজতে হবে৷
 

ডয়চে ভেলে: আমি সরাসরি আপনার কাছে কারণগুলো জানতে চাইছি৷
 

আমরা এখন নিউ লিবারেল কলোনির মধ্যে বাস করছি৷ ব্রিটিশ পিরিয়ডে দেখেছি কীভাবে শাসন করা হয়েছে৷ পুঁজির বিস্তার ঘটেছে এখন৷ ওই অঞ্চলে যে জেনেটিক বিষয় আছে তা পুঁজি দখল করছে৷ তার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের কার্পাস তুলামহল দখল৷ উন্নয়নের নামে, পর্যটনের নামে পাহাড় দখল৷ প্রাণবৈচিত্র্য এবং ওই এলাকার নিজস্বতা ধ্বংস করা৷ এই কাজগুলো চলছে৷ আসলে এখানেই কারণ খুঁজে পাওয়া যায়৷

 
ডয়চে ভেলে: পার্বত্য চট্টগ্রমকে কি তাহলে আলাদাভাবে দেখা হচ্ছে?


পার্বত্য চট্টগ্রামে কিন্তু অনেক বাঙালি আগ থেকেই, প্রাচীনকাল থেকেই পাহাড়িদের সঙ্গে বসবাস করছেন৷ সেটা কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেনি৷ কিন্তু অনেক বাঙালিকে সেখানে ৭৮ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক কারণে নেয়া হয়েছে৷ যাদের বলা হচ্ছে সেটেলার৷ সরকারি ডকুমেন্টে বলা হচ্ছে বাঙালি সেটেলার৷ এখানে রাষ্ট্রই আদিবাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের কোণঠাসা করেছে৷ রাষ্ট্র এখানে এই রাজনীতি করেছে৷ ডেমোগ্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে৷ বিদ্বেষ উসকে দিয়েছে৷ আমরা যদি এখন ১৯০০ সন বা পরবর্তী সময়ের পরিসংখ্যান দেখি তাহলে দেখব খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিতে ওই সময়ের তুলনার আদিবাসী এখন কমে গেছে৷

সংবিধানে যেন আদিবাসীদের জাতিগত স্বীকৃতি দেয়া হয়: পাভেল পার্থ

ডয়চে ভেলে: রাষ্ট্র কি তাহলে তাদের দমন করে মুনাফা লোটার কাজ করছে?
 

রাষ্ট্র যে আদিবাসীদের সমূলে উৎখাত করতে চায় বিষয়টি তেমন না৷ বিষয়টি হলো ওই এলাকায় যেসব ন্যাচারাল রিসোর্স আছে নদী, ছড়া, পাহাড়, বন বা ওখানকার যে কমিউনিটি আছে তাদের নিজস্বতা ধ্বংস করে মুনাফার জন্য উন্নয়নের নামে নানা প্রকল্প করছে রাষ্ট্র৷ নানা গোষ্ঠীকে সেটা করতে দিচ্ছে৷
 

ডয়চে ভেলে: পার্বত্য শান্তি চুক্তিও তো বাস্তবায়ন হচ্ছে না৷


সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না৷ সেটা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হতো৷ সেখানে ভূমি ব্যবস্থাপনা একটা বড় বিষয়৷ ভূমির মালিকানা আছে৷ সেনা ক্যাম্পগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের কথা আছে৷ শুধু শান্তি চুক্তি কেন? দেশে যে প্রচলিত আইন আছে তাও পাহাড়ে কার্যকর হচ্ছে না৷ পরিবেশ আইন, বন আইন সেগুলো কার্যকর হলেও অনেক কাজ হতো৷


ডয়চে ভেলে: পাহাড়ে নানা সশস্ত্র গ্রুপের কথা বলা হয়৷ আবার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথাও তো বলা হয়৷
 

আসলে এই যে বিচ্ছিন্নতাবাদের লেন্সে পাহাড়কে দেখা হয়৷ এটা আসলে একটি প্রবল কর্তৃত্ববাদী লেন্স৷ এটা একটা স্টোরিও টাইপ লেন্স৷ আসলে পাহাড়িদের তাদের জীবন, ফসল, প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে৷ সবুজ বিপ্লবের নামে তাদের ফসল বিলুপ্ত করা হচ্ছে৷ এখানে রাষ্ট্র, বহুজাতিক কোম্পানি, আছে কর্পোরেট পুঁজি৷


ডয়চে ভেলে: পাহাড়ে নির্যাতন, বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগের ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী? সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী?


রাষ্ট্রে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে সার্বভৈৗমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা প্রশ্নে৷ কিন্তু মেরিয়ট হোটেল বলেন, সেনা ক্যাম্প বলেন, আর কর্পোরেট ট্যুরিজমের নামে যে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে সেখানে আমরা পাহাড়কে বুঝতে পারছি কিনা? আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দরদ আর ইনসাফের রাজনীতি তৈরি করছি কিনা৷ প্রচুর প্রবণতা আছে৷ প্রচুর উদাহরণ আছে যে আমরা সেটা করছি না৷

 
ডয়চে ভেলে: তাহলে এই সময়ে রাষ্ট্রের চরিত্রে কোনো পরিবর্তন দেখছেন?


জুলাই বিপ্লবের পর তো একটা প্রবণতা আছে৷ আমরা তো সবাই বৈষম্য বিলোপের কথা বলছি৷ ওই জনপদের মানুষের তো আলাদা আলাদা জাতিগত পরিচয় আছে৷ সংবিধানে তার স্বীকৃতি দরকার৷ এখন সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের কথা হচ্ছে৷ সেটা হলেও যেন সংবিধানে তাদের জাতিগত স্বীকৃতি দেয়া হয়৷