পরিবেশ সম্মেলন
১৩ এপ্রিল ২০১২আন্দ্রে কোরিয়া দো লাগো৷ এই ব্যক্তিটির কথা এখন বেশ শোনা যাচ্ছে পরিবেশ বিশ্বে৷ পরিবেশ বিশ্ব বললে অবশ্য বিষয়টা স্পষ্ট হবেনা৷ কারণ, প্রথমে জেনে রাখা ভালো যে আবহাওয়া পরিবর্তনের যে ঝুঁকির সামনে এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে এই গ্রহ, তাতে উন্নয়নের পরিকল্পনা করলেই যথেষ্ট নয়, দেখতে হচ্ছে সেই পরিকল্পনা কোনোভাবে পরিবেশের ওপরে ক্ষতিকারক প্রভাব যাতে না ফেলে৷ সে জন্যই প্রয়োজন স্থিতিশীল উন্নয়ন৷ আর স্থিতিশীল বা টেঁকসই উন্নয়নের রাস্তা দেখাতে পারবে আসন্ন রিও প্লাস টোয়েন্টি সম্মেলন৷ আর সেকথাই সম্প্রতি জোরগলায় গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরলেন এই সম্মেলনের পয়েন্টসম্যান বলে পরিচিত আন্দ্রে কোরিয়া দো লাগো৷
ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরো'তে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে আগামী জুন মাসে৷ তার জন্য সময় বেশি হাতে নেই৷ ব্রাজিল চাইছে গোটা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলি এখন থেকেই এ বিষয়ে প্রচার আর অন্যান্য উপায়ে কাজকর্মের মাধ্যমে সম্মেলনটিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে উঠেপড়ে লাগুক৷
১৯৭২ সাল থেকে যে স্থিতিশীল উন্নয়ন নিয়ে কাজ শুরু করেছে গোটা বিশ্ব, সেই লক্ষ্যে রিও প্লাস হতে চলেছে চতুর্থ সম্মেলন৷ এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ১০০ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের যোগদান চাইছে রিও৷ সঙ্গে সেইসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরকেও৷ এই সম্মেলনেই বিশ্বের কর্পোরেট বা বাণিজ্য জগতের নেতৃস্থানীয় সংস্থাগুলির একটি আলাদা ফোরামের আয়োজনও করা হবে৷ সম্মেলনের লক্ষ্য হবে বিশ্বের স্বাস্থ্য বিষয়ক দিকটিকে পর্যালোচনা করা, সঙ্গে উন্নয়ন, খাদ্য সুরক্ষা, পানীয় জলের পরিবহণের উপায় নির্দ্ধারণ, জীবনচর্যা বা লাইফস্টাইলের মান উন্নয়ন, জ্বালানির সঠিক এবং পরিমিত ব্যবহারের পন্থা সন্ধান, জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা এবং অবশ্যই পরিবেশের সুরক্ষার দিকনির্ণয়৷
তবে স্থিতিশীল উন্নয়নই যেহেতু এই রিও প্লাস টোয়েন্টির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, সুতরাং সেদিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে সম্মেলনের আয়োজক দেশ ব্রাজিল৷ বলা হয়েছে, সে কারণেই চেষ্টা করা হবে সেই স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে তাকিয়েই খাদ্য নিরাপত্তা, পানীয় জল ও অন্যান্য প্রয়োজনে জল সুরক্ষা, গ্রিন জব বা পরিবেশের ক্ষতিকারক নয় এমন সব চাকরির সংখ্যা বাড়ানো এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে সেইসব বস্তুর উৎপাদনে বৃদ্ধি করা, যাকিনা দীর্ঘমেয়াদী৷
তবে এ ধরণের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ক্ষেত্রে যা সচরাচর হয়ে থাকে, রিও প্লাস'ও তার ব্যতিক্রম নয়৷ এই ক্ষেত্রগুলিতে আন্তর্জাতিক স্তরে যে সমস্ত লক্ষ্যমাত্রা আগেই ধার্য করা রয়েছে, রিও প্লাস সেগুলিতেও অংশ নেবে৷ যেমন ধরা যাক জাতিসংঘ নির্দ্ধারিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল৷ বিশ্বের দারিদ্র পীড়িত ১৯২টি দেশের জন্য দারিদ্র দূরীকরণের যে বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে ২০০০ সালে, রিও প্লাস তার জন্যও বেশ কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই নিচ্ছে৷
রিও প্লাস সম্মেলনের সাফল্যের ওপরে বা সেখানে নেওয়া কিছু আগামীর সিদ্ধান্তের এওপরে অতএব নির্ভর করছে স্থিতিশীল উন্নয়নের পরবর্তী ভবিষ্যত৷ সুতরাং, ব্রাজিলের এই প্রত্যাশা আদৌ ভুল নয় যে রিও প্লাস'কে সফল করতেই হবে৷ সেজন্য বিশ্ব নেতৃত্বের সহযোগিতা চাইছে রিও ডি জেনেইরো৷ তাছাড়া, সম্মেলনের পয়েন্টসম্যান আন্দ্রে কোরিয়া দো লাগো একথাও বলেছেন, এই সম্মেলন মঞ্চ থেকেই নাকি প্রমাণ হয়ে যাবে গোটা বিশ্বের পরিবর্তনের মাত্রাটা কতটা ৷ সেই পরিবর্তন এতটাই যা মানুষ এখনও কল্পনাই করতে পারছে না৷
ডয়চে ভেলের তরফে এই সম্মেলনের জন্য একটি চমৎকার পরিকল্পনা দাখিল করা হয়েছে৷ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির কাছে ডয়চে ভেলের প্রস্তাব, তারা যে যার দেশ থেকে স্থিতিশীল উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোটো, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাক৷ সেগুলিকে ডয়চে ভেলে এমনভাবে পেশ করবে যাতে তার থেকে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় উঠে আসে৷ ডয়চে ভেলে এই প্রকল্পের নাম দিয়েছে ‘ভয়েসেস অব টুডে - আইডিয়াজ অব টুমরো'৷
আসল কথা হল, উন্নয়নশীল দেশগুলির উন্নয়নের পন্থা আর উন্নত দেশগুলির উন্নয়ন কামনার মধ্যে বিভেদভাব৷ স্থিতিশীল উন্নয়ন তখনই বাস্তবায়িত হতে পারে, যখন এই দুটি মতবাদ একসুরে গান গায়৷ আর সেটাই হল আগামীর সেরা পথ৷ রিও প্লাস টোয়েন্টি সম্মেলন সেই লক্ষ্যে কতটা কাজ করতে পারে, সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী কয়েকটা সপ্তাহ৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, এএফপি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ