জার্মানিতে আরও কড়া লকডাউনের সম্ভাবনা
১৫ জানুয়ারি ২০২১গত মাসে দেশজুড়ে লকডাউন জারি করে এবং সেই কড়াকড়ির মেয়াদ চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত বাড়িয়েও জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না৷ বৃহস্পতিবার দৈনিক মৃত্যুর হার ছিল ১,২৪৪, যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে৷ দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ২৫,১৬৪৷ এমন পরিস্থিতিতে বৈজ্ঞানিক ও রাজনৈতিক মহলে আরও কড়া পদক্ষেপ নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে৷
রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের প্রধান লোটার ভিলার এই পরিসংখ্যান সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের আসল সংখ্যা সম্ভবত আরও অনেক বেশি৷ নববর্ষ উৎসবের দিনগুলিতে যথেষ্ট পরীক্ষা না হওয়ায় বাস্তব পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট হচ্ছে না৷ তাঁর মতে, জার্মানিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আরও অনেক কমিয়ে আনতে হবে৷ সেই লক্ষ্যে তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে আরও কড়া পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন৷ ভিলার বলেন, বর্তমান নিয়মের অনেক ব্যতিক্রম থাকায় এবং সেই লকডাউন যথেষ্ট কড়া হাতে কার্যকর না করায় তেমন কাজ হচ্ছে না৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বরাবর আরও কড়া বিধিনিয়মের পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন৷ কিন্তু সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থনের অভাবে সে বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন করা এতকাল সম্ভব হয় নি৷ বৃহস্পতিবার তিনি আবার বিধিনিয়ম আরও কড়া করতে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন৷ ২৫ জানুয়ারি নির্ধারিত বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষার বদলে আগামী সপ্তাহেই তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান৷
বর্তমান লকডাউনের মেয়াদ যে ৩১ জানুয়ারির পরেও বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে আর তেমন কোনো সংশয় দেখা যাচ্ছে না৷ লকডাউনের আওতায় বিধিনিয়ম কীভাবে আরও কড়া করা যায়, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ মানুষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ আরও কমিয়ে আনতে দেশজুড়ে গণপরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ রাখার প্রস্তাব শোনা যাচ্ছে৷ সেইসঙ্গে প্রকাশ্যে সাধারণ মাস্কের বদলে এফএফপি-২ মাস্ক বাধ্যতামূলক করার পক্ষেও চাপ বাড়ছে৷ আগামী সোমবার থেকে বাভেরিয়া রাজ্যে এই নিয়ম কার্যকর হবে৷
জার্মানিতে করোনার টিকা কর্মসূচি যথেষ্ট দ্রুত এগোচ্ছে না বলে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেন, দেশের জনসংখ্যার এক শতাংশ – অর্থাৎ প্রায় ৮৪০,০০০ মানুষ ইতোমধ্যেই টিকা নিয়েছেন৷ তাঁর মতে, চলতি বছরেই করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে৷
জার্মানিতে করোনা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বা অন্য কোনো দেশে মিউটেশনের কারণে রূপান্তরিত ভাইরাস কতটা দায়ী, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না৷ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মানুষের শরীরে এমন ভাইরাসের অস্তিত্ব প্রমাণিত হওয়ায় কড়া লকডাউনের পক্ষে সমর্থন বাড়ছে৷ এমনটা না করলে আগামী সপ্তাহগুলিতে আরও ছোঁয়াচে এই কোভিডের সংস্করণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ভ্রমণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে৷
এসবি/জেডএইচ (ডিপিএ, এএফপি)