রোবট যখন পোর্ট্রেট আঁকে
২১ মার্চ ২০১৭একটি ড্রয়িং ক্লাসের আঁকা ছবি৷ কিন্তু কোনো সাধারণ আঁকার ক্লাস নয়৷ এ ক্লাসের সব ছাত্রই রোবট৷ এই আঁকিয়ে যন্ত্রগুলোকে নিয়েই বার্লিনের ডিক্সিট আলগোরিৎসমি আর্ট গ্যালারিতে একটি ইনস্টলেশন রাখা হয়েছে৷ ইনস্টলেশনটির নাম ‘পল নামের পাঁচটি রোবোট', কেননা, প্রতিটি রোবোটের নামই ‘পল'৷ সব ‘পল'-এরই আছে একটি করে চোখ, অর্থাৎ ক্যামেরা – এবং একটি করে আঁকার ‘হাত'৷
ডিক্সিট আলগোরিৎসমি আর্ট গ্যালারির পেটার-ব্রাউন হিমেরিশ বলেন, ‘‘পুরোটাই সাবেক অর্থে আঁকার ক্লাস, যেখানে পাঁচজন ছাত্র আঁকা শিখছে৷ আসলে তারা রোবট৷ আঁকার ক্লাসের ‘ছাত্রদের' আঁকার ক্ষমতায় ফারাক আছে, কিন্তু তারা সবাই অখণ্ড মনোযোগের সঙ্গে ছবি এঁকে থাকে৷''
ছবি আঁকছে ‘পল'
ওদের প্রত্যেকের আঁকার ধরনও আলাদা৷ একজন ‘পল' যদি বাস্তবধর্মী আঁকে, তো আরেকজনের স্কেচগুলি প্রধানত বিমূর্ত – প্রায় বিষাদপূর্ণ বলা চলে৷
একটি পোর্ট্রেট সেশনে লাগে মোট ৩০ মিনিট৷ কিন্তু অন্য সব আঁকার স্কুলের মতো এখানেও কোনো ছাত্রের আঁকা আগেই শেষ হয়ে যায়, কারো হয়ত আবার একটু বেশি সময় লাগে৷
পোর্ট্রেট মডেল টর্স্টেন প্লাৎস বললেন, ‘‘বেশ মজা লেগেছে, কেননা, এই ছোট ছোট যন্ত্রগুলো শুধু যে কাজ করেছে, শুধু তাই নয়, বরং দেখেছেও বটে: আমাকে দেখেছে, তারপর আবার তাদের ড্রয়িংয়ের দিকে তাকিয়েছে৷ আমি এটা প্রত্যাশা করিনি৷ ওটা একটা খুব মজার ব্যপার, খুব মজার অভিজ্ঞতা৷''
শিল্পী হতে গিয়ে রোবটের আবিষ্কর্তা
লন্ডন ইউনিভার্সিটির গোল্ডস্মিথস কলেজে এই আঁকিয়ে রোবটগুলিকে সৃষ্টি করা হয়৷ তাদের আবিষ্কারক পাত্রিক ত্রেসে৷ ত্রেসে ফরাসি৷ শিল্পকলা ও প্রযুক্তি, ত্রেসে চিরকালই এ দু'টি ব্যাপারে আগ্রহী৷ তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশুনো করার পর তিনি ছবি আঁকা শুরু করেন৷
একটি মানসিক রোগের চিকিৎসার সময় হঠাৎ নিজের হাতে আঁকার ইচ্ছে চলে যায় ত্রেসের – জানালেন তিনি৷ কাজেই আঁকার কাজটা আজ তিনি রোবটদের হাতেই ছেড়ে দেন৷ কিন্তু তাই বলে তাঁর কাছে রোবটরা কিছু স্বাধীন, নিরপেক্ষ শিল্পী হয়ে ওঠেনি৷
শিল্পী ও বিজ্ঞানী পাত্রিক ত্রেসে বললেন, ‘‘সব কিছুতেই তো কম্পিউটার টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়৷ শিল্পকলাতেই বা হবে না কেন? রোবটদের ব্যাপারটা একটু স্পেশাল হলেও, এমনিতেই বহু শিল্পী নানান ভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন৷ কম্পিউটার তো শুধু একটা কাজের জিনিস৷''
পাত্রিক ত্রেসে আজও নিজেকেই এই প্রতিকৃতিগুলির আঁকিয়ে মনে করেন৷ তিনি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে সেগুলো আঁকেননি, কিন্তু এই যন্ত্রগুলি তাঁর শিল্পীসত্তার অঙ্গ৷ ত্রেসে বললেন, ‘‘ব্যাপারটা জটিল, কেননা, ওরা আমার কাছে যন্ত্র, সব প্রোগ্রাম করা৷ অন্যদিকে ওরাই আমার ক্যারিয়ার তৈরি করে দিয়েছে৷ কাজেই ওরা এক ধরনের আত্মপ্রতিকৃতিও বটে৷ আমার আর রোবটগুলোর সম্পর্ক বেশ জটিল৷ কিন্তু আমার কাছে ওরা পুতুলও বটে, এমন সব পুতুল যারা অধিকাংশ সময় ঠিক আমি যা চাই, তা-ই করে৷''
আর্ট গ্যালারিতে
বার্লিন৷ আঁকিয়ে রোবটরা এখানে একটি আর্ট গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে৷ পাত্রিক ত্রেসেরও একাধিক পোর্ট্রেট টাঙানো রয়েছে – পাঁচ ধরনের অঙ্কণশৈলীতে৷ তারপরও চেনা যায়, অন্তত আংশিকভাবে৷
তবে রোবটরা যে সব কিছু আঁকতে পারে, এমন নয়৷ হিমেরিশ বললেন, ‘‘আমি ঐ পাঁচটি রোবটকে দিয়ে আমার কুকুরের পোর্ট্রেট আঁকানোর চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু কুকুরটাকে চেয়ারে বসানো সত্ত্বেও রোবটরা আঁকাই শুরু করেনি৷ তার কারণ সম্ভবত এই যে, ওরা শুধু মানুষের মুখ চিনতে জানে৷ কাজেই ওরা কুকুর দেখে চিনতে পারেনি, ছবিও আঁকেনি৷''
শুধু মানুষের প্রতিকৃতি হলেও, খারাপ আঁকেনি কিন্তু রোবটরা৷
যন্ত্ররা জীবনের বহু দিকে ও বিভাগে মানুষের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে৷ তাহলে ছবিই বা আঁকবে না কেন?