1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়’

১২ অক্টোবর ২০১৭

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা গণমাধ্যম বাড়িয়ে বলছে বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং লাইং৷ আবারও বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়, তারা বাঙালি৷

https://p.dw.com/p/2li0c
Myanmar Min Aung Hlaing, General
ছবি: picture alliance/AP Photo/Aung Shine Oo

মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার এক বৈঠক করেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান৷ সেখানে তিনি বলেছেন, পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাড়িয়ে বলছে গণমাধ্যমগুলো৷ ঐ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাখাইনে ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রবেশের অনুমতি চাইলে সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গারা আছেন তাদের সরকার থেকে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় বেশি৷ আর মাছ ধরার জন্য জলাশয় তো রয়েছেই৷''

এরপর সেই আলোচনা নিয়ে নিজের ফেসবুক পাতায় একটি পোস্ট দেন মিন৷ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘‘তারা কোনোভাবেই মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়৷ নথিপত্র প্রমাণ করে, তারা কখনো রোহিঙ্গা নামেও পরিচিত ছিল না৷ ঔপনিবেশিক আমল থেকেই তারা বাঙালি ছিল৷'' তিনি আরও বলেছেন, ‘‘বাঙালিদের সঙ্গে ভাষা-সংস্কৃতির মিল থাকায় হয়ত তারা সেখানে নিরাপদ বোধ করছে৷''

তবে ইতিহাসবিদরা বলছেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশের সময় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেড়েছে৷ কিন্তু এর আগে থেকেই তারা সেখানে বসবাস করে আসছিলো৷

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর যা বলছে:

মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী রোহিঙ্গাদের সাথে নৃশংস আচরণ করে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে রাখাইন ছাড়তে বাধ্য করেছে এবং তাদের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি সব পুড়িয়ে দিয়েছে, যাতে তাদের আর ফেরার সম্ভাবনা না থাকে৷ এমনটাই মনে করছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর৷

সংস্থার এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান জ্যোতি সাংঘেরা বুধবার রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধের জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরলে তাদের আটক হওয়ার আশংকার কথা জানিয়েছেন তিনি৷ 

জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘গ্রামগুলো যদি পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়ে থাকে এবং তাদের জীবন ও জীবিকার সম্ভাবনা একেবারে নষ্ট করা হয়ে থাকে, তাহলে ফিরে যাওয়ার পর তাদের বন্দি করা বা ক্যাম্পে আটকানো হতে পারে৷''

জাতিসংঘের রাজনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান জেফরি ফেল্টম্যান শুক্রবার মিয়ানমার সফর করতে পারেন বলে জানিয়েছে তাঁর অফিস৷

সেনাবাহিনীর নিপীড়নের জের ধরে আগস্ট মাসের শেষ থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৫ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা৷ এদের মধ্যে ৬৫ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘২৫শে আগস্ট মিয়ানমারে পুলিশের ঘাঁটিতে বিদ্রোহীদের হামলার আগে থেকেই হত্যা, নির্যাতন ও শিশুদের ধর্ষণ করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর অভিযান শুরু হয়৷''

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার যাইদ বিন রাআদ আল-হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের সব সম্পদ ধ্বংস করেছে, উত্তর রাখাইনের প্রায় সব গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে৷ এতেই বোঝা যায় রোহিঙ্গাদের কেবল তাড়ানোই তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে৷'' 

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায়ই সশস্ত্র রাখাইন বৌদ্ধদের সঙ্গে নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি, জমি, সংরক্ষিত খাবার, শস্য ও প্রাণিসম্পদ নষ্ট করতো এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে৷ এর ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ‘প্রায় অসম্ভব' হয়ে পড়েছে৷

‘পরিকল্পিত, সমন্বিত ও যথাযথ পদ্ধতি' অনুসরণ করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদে এই অভিযান চালিয়েছে৷ পুলিশের ঘাঁটিতে বিদ্রোহীদের হামলার মাসখানেক আগেই ৪০ বছরের কম বয়সি রোহিঙ্গাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তা শুরু হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা৷

রাখাইনে সহিংসতা অব্যাহত আছে

আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা ও চাপ অব্যাহত থাকলেও রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা থামেনি৷ সোমবারই বাংলাদেশে নতুন করে ১১ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশের কথা তুলে ধরে জ্যোতি সাংঘেরা বলেছেন, ‘‘এতে স্পষ্ট যে, সেখানে এখনো উচ্ছেদ, বাস্তুহারা, পালাতে বাধ্য করা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে৷ এছাড়া তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখনো তাদের দেখলেই খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে৷ আর তখনই তারা আতঙ্কে পালাতে বাধ্য হচ্ছে৷''

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে রাখাইনের রাথেডং এলাকার ১২ বছরের একটি মেয়ের বক্তব্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মমতার চিত্র উঠে এসেছে৷ মেয়েটি বলেছে, ‘‘ভয়াবহ আতঙ্কের এক পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম আমি৷ আমার চোখের সামনে ওরা আমার বোনকে গুলি করেছে৷ ওর বয়স মাত্র ৭ বছর৷ সে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে পালিয়ে যেতে বলেছে৷ আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি৷ কেননা সেখানে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা ছিল না৷ প্রচুর রক্তক্ষরণে সেখানেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে৷ আমি নিজেই তাঁকে দাফন করেছি৷'' এই মেয়েটি এখনো জানে না তার মা ও চার ভাইয়ের খবর৷ তার বাবাকে একমাস আগেই সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে কারাবন্দি করেছে৷

এপিবি/জেডএইচ (এপি, এএফপি, রয়টার্স) 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য