1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডউন অব্যাহত, তবু খুলতে পারে কারখানা

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১৩ এপ্রিল ২০২০

লকডাউন চলছে, প্রতিটি রাজ্যে বেশ কয়েকটি এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই এ বার জরুরি ক্ষেত্রে উৎপাদন চালুর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সরকার। তবে যাবতীয় সতর্কতা বজায় রেখে কারখানা চালু করা হবে।

https://p.dw.com/p/3aoqS
ছবি: Reuters/A. Abidi

লকডাউন ঘোষণার পর থেকে এতদিন মন্ত্রী, সচিব, যুগ্ম সচিব সহ অফিসাররা বাড়িতে বসেই কাজ করছিলেন। সোমবার থেকে তাঁদের অফিসে যাওয়া শুরু হল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও তাঁদের অফিসে যেতে শুরু করলেন। যুগ্মসচিব ও তাঁর ওপরের পদমর্যাদার অফিসাররা অফিসে যাচ্ছেন। বাকি কর্মীদের সময় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। অর্ধেক কর্মী একদিন আসবেন, অর্ধেক পরের দিন। তবে হট স্পটে যাঁরা থাকেন, তাঁরা আসবেন না। দূরে যাঁরা থাকেন, তাঁদেরও আসতে হবে না। যাঁরা গাড়ি পান, তাঁরা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন। বাকিদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তবে শুধু মন্ত্রী, আমলা বা সরকারি বাবুদের অফিসে যাওয়া চালু হচ্ছে তাই নয়, ধীরে ধীরে বেশ কিছু ক্ষেত্র খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ বানিজ্য ও শিল্প প্রমোশন সচিব গুরুপ্রসাদ মহাপাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে, লকডাউন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কী কী ক্ষেত্র খুলতে পারে এবং সেখানে কী ভাবে কাজ হবে। কোন কারখানা খুলবে, কোনটা নয়, তা ঠিক করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। এ ক্ষেত্রে জেলা কর্তৃপক্ষ নীতিনির্দেশিকা মেনে ব্যবস্থা নেবেন। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছে, বড় কারখানা, যেখানে জীবাণুশূন্য করার ব্যবস্থা আছে, তারা সামাজিক দূরত্বের নীতি মেনে ২৫ শতাংশ কর্মী দিয়ে শিফট চালু করতে পারবেন। মাঝারি ও ছোট শিল্প, যাদের রপ্তানির দায়বদ্ধতা আছে, সেখানে কাজ শুরু করা যেতে পারে।

কোন কোন ক্ষেত্র অগ্রাধিকার পাবে, তার একটা তালিকাও তৈরি করে দিয়েছেন ওই সচিব। তার মধ্যে আছে, রঙ. সব ধরনের খাদ্য ও পানীয়, প্লাস্টিক তৈরির কারখানা, অলংকার,  বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকায় থাকা সব কারখানা, ওষুধ, রবার বুট, অ্যানেস্থেশিয়া ব্যাগ, ভেন্টিলেটার, রবার ভালভ সহ চিকিৎসার কাজে লাগে এমন সব সামগ্রী। কাঠ, প্লাই ভিত্তিক শিল্প, কাচ সহ যে সব জায়গায় খুব কম লোক দিয়ে কাজ করানো যেতে পারে সে জায়গাগুলিও খোলার পরিকল্পনা চলছে। সেই সঙ্গে নির্দেশিকায় বলে দেওয়া হয়েছে, যে সব কারখানায় শ্রমিকদের ঠিকমতো থাকার ব্যবস্থা আছে, তারা অগ্রাধিকার পাবে। আর সামাজিক দূরত্ব ও কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেই হবে। জেলা প্রশাসন নজরদারি করবে।

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকারি জানিয়েছেন, তিনি জাতীয় সড়ক তৈরি ও সারাইয়ের কাজ শুরু করে দিচ্ছেন। রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে তাঁর কথা চলছে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, চার-পাঁচটি রাজ্যে কাজও শুরু হয়েছে। এ ভাবেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্ষেত্রকে সচল করতে চাইছে কেন্দ্র। দেশভর জেলাগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে কেন্দ্র। যে সব জেলায় করোনা আক্রান্তের খবর নেই, সেগুলি হলো সবুজ জেলা, যেখানে করোনার আক্রমণ বেশি হয়েছে সেটা হলো লাল জেলা। সবুজ জেলাতেই শিল্প খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। হলুদ জেলা একেবারে নিরাপদ কি না দেখে তারপর অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

কেন্দ্রীয় সরকারের এক আধিকারিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এই সিদ্ধান্তের পিছনে দুইটি কারণ আছে। প্রথমত, এখনই কাজ শুরু না করলে দিন পনেরো-কুড়ি পর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে টান পড়তে পারে। তাই উৎপাদন এ বার শুরু করতেই হবে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় সরকার গরিবদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছে। রাজ্য সরকারও দিয়েছে। তারা পরিযায়ী শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। দুই সরকারের ভাড়ারে টান পড়েছে। তাই এ বার শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে উৎপাদন শুরু করা হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রেও ফসল তোলার কাজ শুরু হয়েছে।'' 

সেন্ট্রাল বোর্ড অফ কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজের প্রাক্তন প্রধান সুমিত দত্ত মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''সরকার একেবারে ঠিক পথে এগোচ্ছে। এ বার যাবতীয় সতর্কতা বজায় রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি ক্ষেত্রের উৎপাদন শুরু করতে হবে। না হলে তো এমন সময় আসবে, লোকে আর খাবার পাবেন না, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাবেন না। আর আজ বললেই তো কাল উৎপাদন শুরু হবে না, পরশু জিনিস বাজারে আসবে না। তার জন্য অন্তত দিন সাতেক সময় লাগে। আর একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, এভাবে সতর্কতা মেনে উৎপাদন করতে গেলে খরচ বাড়বে। সেক্ষেত্রে জিনিসের দামও বাড়তে পারে।''