লিম্ফোডিমা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪মেয়েরাই বেশি আক্রান্ত হয়
লিম্ফোডিমায় আক্রান্তরা প্রায়ই নেতিবাচক ধারণার সম্মুখীন হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরাই এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়৷ এতে দেখা যায় দেহের ওপরের অংশটি হয়ত স্বাভাবিক কিংবা হালাকা পাতলা৷ কিন্তু নীচের অংশ অস্বাভাবিক স্থূল৷ এক্ষেত্রে শরীরের লিম্ফ-সিস্টেম ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে৷ টিস্যুর তরল পদার্থ ঠিকমতো প্রবাহিত হতে পারে না৷ শরীরের কোষে জমা হতে থাকে৷ লসিকা গ্রন্থি তাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে করতে পারে না৷
‘‘এটা হলো শরীরের জলনির্গমন পদ্ধতি এবং ইমিউন সিস্টেম একে ব্যবহার করে'', বলেন জার্মানির হামবুর্গের ব্যার্নহার্ড নখট ইন্সটিটিউটের ব্যার্নহার্ড ফ্লাইশার৷
অন্য অসুখ বা দুর্ঘটনাও দায়ী
বেশিরভাগ লিম্ফোডিমা রোগীর অসুখটা অন্য কোনো অসুখ বিসুখ বা দুর্ঘটনার কারণে হয়ে থাকে৷ যেমন স্তন ক্যানসারের অপারেশন হওয়ার পর লসিকা নালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কিংবা রেডিয়েশন দেওয়া হলে বা কারো স্ট্রোক হলেও লিম্ফোডিমা দেখা দিতে পারে৷ রোগটির চিকিৎসায় বিশেষ ধরনের ফিজিও থেরাপির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে ম্যাসেজ দেওয়া হয়, যাতে তা উদ্দীপিত হয়৷ এই কাজটা নিয়মিত করতে হয়৷ কারণ রোগটা ক্রনিক৷ এছাড়া বিশেষ ধরনের আঁটসাঁট মোজাও রোগীদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়৷ তা তিনি যে বয়সেরই হন না কেন৷
শৈশবেও রোগটি হতে পারে
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত অসুখ-বিসুখ বা দুর্ঘটনা থেকে এই রোগটি হয়৷ কিন্তু বংশগত কারণে শৈশবেও এই অসুখটা হতে পারে৷ এক্ষেত্রেও মেয়েরাই আক্রান্ত হয় বেশি৷ তারা শুধু শারীরিক নয় মানসিক দিক দিয়েও পর্যুদস্ত হয়ে যায়৷ বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে, যখন বন্ধু-বান্ধবরা আঁটসাঁট প্যান্ট ও ফ্রক পরেন৷ মোটা উরু ও ভারি মোজার কারণে সমবয়সিদের হাসি-ঠাট্টার খোরাক হতে হয় তাদের৷ অনেকে মনে করেন অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া ও কম চলাফেরার কারণেই সম্ভবত তাদের এই অবস্থা৷ তবে খেলাধুলা রোগের লক্ষণ কিছুটা কমাতে পারলেও স্থায়ীভাবে ভাল করতে পারে না৷
লিম্ফোডিমার তিনটি স্তর রয়েছে, সবচেয়ে খারাপ হলো শ্লীপদ৷ নাম থেকেই বোঝা যায় হাতির মতো পদ বা পা৷
মশার কামড়েও হতে পারে
এশিয়া, আফ্রিকা, ও দক্ষিণ অ্যামেরিকার কিছু দেশে বহু মানুষ লসিকানালীর গোদ বা লিম্ফ্যাটিক ফিলারিয়াসিস-এ আক্রান্ত হয়৷ এই রোগেও লসিকা গ্রন্থি বন্ধ হয়ে যায়৷ তবে এটি একটি সংক্রামক রোগ৷ এক ধরনের মশা দ্বারা সংক্রমিত হয় এটি৷ মশার কামড়ের ফলে লার্ভটি লসিকা সিস্টেমে ঢুকে পড়ে৷ ধীরে ধীরে সেটি বড় আকারের কীটে পরিণত হয়৷ আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে তা দেখাও যায়৷
আনুমানিক ৮৩ দেশের ১২০ মিলিয়ন মানুষ এই সংক্রমণের শিকার৷ অনেক দেশে এক্ষেত্রে চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়৷ এর ফলে শুরুতেই রোগটিকে দমন করা সম্ভব হয় না৷ আর অসুখটি বেড়ে গেলে এটিকে আয়ত্তে আনা সহজ নয়৷
এ ব্যাপারে চলছে গবেষণা
এক্ষেত্রে কিছু গবেষণা হচ্ছে৷ ট্রপিক্যাল মেডিসিন সংক্রান্ত ব্যার্নহার্ড ইন্সটিটিউটেও এ ব্যাপারে গবেষণা চলছে৷ ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি, এই কীটগুলির ভেতরে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে৷ যা কীটটির বেঁচে থাকার জন্য জরুরি৷ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এই ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করা যায়৷ সাথে সাথে কীটও মরে যায়'', বলেন ব্যার্নহার্ড ফ্লাইশার৷
তবে এই চিকিত্সা বাচ্চা বয়সেই করা প্রয়োজন৷ কিন্তু যেসব অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ বেশি, সেখানে কাজটি একেবারেই সহজ নয়৷