লোকসভা নির্বাচনের সময় যে রাজনীতিকেরা জেলে থাকতে পারেন
১৯ মার্চ ২০২৪দিন কয়েক আগে তেলেঙ্গানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে সাবেক সাংসদ ও বর্তমানে বিধান পরিষদের সদস্য কে কবিতাকে গ্রেপ্তার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, কে কবিতা দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়ার মতো আপ নেতাদের সঙ্গে চক্রান্ত করে আবগারি নীতির সুবিধা নিতে তাদের একশ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।
ইডি-র অভিযোগ, কবিতা দিল্লির নতুন আবগারি নীতি তৈরি করা এবং রূপায়ণের ক্ষেত্রে লাভবান হয়েছিলেন। বিনিময়ে তিনি আপ নেতাদের একশ কোটি টাকা দেন। এই চক্রান্ত ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ইডি।
কবিতা বলেছেন, তিনি অন্যায় করেননি। মোদী সরকার ইডিকে কাজে লাগিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে তেলেঙ্গানায় যাতে বিজেপি ঢুকতে পারে, তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ২৩ মার্চ পর্যন্ত কে কবিতা ইডি হেফাজতে থাকবেন। তারপর আদালত ঠিক করবে, তিনি জামিন পাবেন নাকি ইডি হেফাজতে বা জেলে থাকতে হবে।
দিল্লির ছবি
দিল্লিতে ওই আবগারি কেলেঙ্কারির অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া, সাংসদ সঞ্জয় সিং ও নেতা বিজয় নায়ার জেলে।
মনীষ সিসোদিয়া ২০২৩ সালের মার্চ থেকে জেলে আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, আবগারি নীতি তৈরির সময় তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও এই দুর্নীতি নিয়ে জেরা করতে চায় ইডি। কেজরিওয়াল আগে ইডি-র কাছে গিয়ে তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে এসেছেন। কিন্তু গত কয়েক মাসে তাকে বারবার ইডি ডাকলেও তিনি যাননি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ইডি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে ডাকছে।
আপ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে বেআইনি অর্থপাচার ও আয়ের সূত্র সম্পর্কে অস্বচ্ছ্বতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২২-এর মে থেকে তিনি জেলে বন্দি। ২৪ ঘণ্টা আগে সুপ্রিম কোর্ট সত্যেন্দ্র জৈনের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
এর আগে মণীশ সিসোদিয়া ও সঞ্জয় সিংয়ের জেলে থাকার মেয়াদও বাড়িয়ে দিয়েছে আদালত।
একসময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপ দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছিল। তাদের দলের এতজন নেতা এখন দুর্নীতির দায়ে জেলবন্দি।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির দায়ে সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনো জেলে আছেন। আরেক মন্ত্রী মানিক ভট্টাচার্যও জেলে। তৃণমূলের দুই যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষও জেলে আছেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকেও সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে।
রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে। এই রেশন দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করতেই সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। তাদের মারধর খেয়ে ফিরে আসতে হয়। দীর্ঘ বিক্ষোভের পর দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে থাকা শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর হাইকোর্টের নির্দেশে তাকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
তার আগেই তার অনুগামী দুই তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহজাহান এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের হেফাজতে আছে। রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাকিবুর রহমান-সহ আরো কয়েকজনকে।
এর আগে বীরভূম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। তিনি এখনো জেলে আছেন। ফলে এই নেতাদের বাদ দিয়েই নির্বাচনী কৌশল তৈরি করতে হবে তৃণমূলকে।
তোলাবাজির অভিযোগে তৃণমূল নেতা দেবরাজ পালকে গতবছর গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
তামিলনাড়ুর ঘটনা
তামিলনাড়ুতে ক্ষমতাসীন ডিএমকে-র মন্ত্রী পনমুদিকে তিন বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।
তামিলনাড়ুতে এক নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অশোভন মন্তব্য করার জন্য বিজেপি নেতা এস শেখরকে এক মাসের জেল ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে লোকসভা ভোটের সময় তিনি অবশ্য জেলে থাকবেন না।
উত্তরপ্রদেশে যা হয়েছে
উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিধায়ক রামদুলার গোন্দকে নাবালিকা ধর্ষণের দায়ে ২৫ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ধর্ষিতাকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। পরে তাকে বিধানসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
২০২৩ সালের অগাস্টে বিজেপি সাংসদ রাম শঙ্কর কাথেরিয়াকে দাঙ্গাহাঙ্গামা ও ১২ বছর বয়সি্কে নির্যাতনের অভিযোগে দুই বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আগ্রার আদালত। পরে আগ্রার জেলা ও দায়রা আদালত তাকে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে।
গত জানুায়ারিতে বিজেপি বিধায়ক সুরেশ্বর সিং-এর বিরুদ্ধে ২১ বছরের পুরনো একটি মামলায় সাজা ঘোষণা করে আদালত। সেখানে তার দুই বছরের জেল হয়। দুই দিন পর জেলা বিচারক এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। এই দুই বিজেপি নেতা ভারতে লোকসভা ভোটে জড়িত থাকতে পারবেন।
নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী ও নেতা রাহুল গান্ধী এখন জামিনে আছেন। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ আছে। ছত্তিশগড়ের সাবেক কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে। ফলে তাদের প্রচার করা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই।
কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এবং তার বিরুদ্ধে পসকো আইনে মামলা করা হয়েছে।