বিজেপির নজর পশ্চিমবঙ্গে
২৯ এপ্রিল ২০১৪ভোটের প্রচারে গত রবিবার শ্রীরামপুরের এক জনসভায় সারদা কেলেঙ্কারি ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারকে তুলোধোনা করলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী৷ এবং কার্যত হুমকি দিলেন, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে সারদা কেলেঙ্কারি এবং লক্ষ লক্ষ পশ্চিমবঙ্গবাসীর কষ্টের সঞ্চয় আত্মসাৎ করার জন্য যারা দায়ী, তাদের সবার শাস্তি সুনিশ্চিত করবেন৷
আরও একটা বিষয় এই সঙ্গে বোঝা গেল যে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে পশ্চিমবঙ্গের দিকেও কিছুটা তাকিয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদী৷ এই রাজ্যে এতদিন কোনো ভোটেই বিজেপি বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি৷ তবু এবার পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের সবকটিতেই বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে৷ রাজ্যে এবার যেহেতু কোনো নির্বাচনি জোট হয়নি, সবকটি আসনেই বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির প্রার্থীদের চতুর্মুখী লড়াই হবে৷ ভোট কাটাকাটির সেই অঙ্কে কি একাধিক আসনে জেতার সম্ভাবনা তাদের চোখে দেখছে বিজেপি? কারণ নরেন্দ্র মোদী এই নিয়ে তিনবার পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এলেন এবং শোনা যাচ্ছে, আরও বার দুয়েক অন্তত আসতে পারেন!
তবে শুধুই এবারের লোকসভা ভোট নয়, ২০১৬ সালে এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের দিকেও নিশ্চিত লক্ষ রেখেছে বিজেপি নেতৃত্ব৷ তার একটা বড় কারণ, গত বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বামফ্রন্টের বিপর্যস্ত দশা৷ সাংগঠনিকভাবে ক্রমশই দূর্বল হচ্ছে বামফ্রন্ট৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্ররা ছাড়া এখনও বামপন্থিদের প্রচারে কোনো নতুন মুখ নেই৷ কোনো নতুন নেতা তৈরি হচ্ছে না উল্টে রেজ্জাক মোল্লা বা লক্ষ্মণ শেঠের মতো নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হচ্ছে বামফ্রন্ট৷ এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল-বিরোধী, বা সরকার-বিরোধী যে ক্ষোভ, রাগ, অন্তত সেটাকে আয়ত্বে এনে এ রাজ্যে পা রাখার জায়গা খুঁজছে বিজেপি, যার সুদূরপ্রসারী সুফল তারা পাবে৷ অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল নয়, আসন দখলের অঙ্কে রাজ্যের দ্বিতীয় এমনকি তৃতীয় বিরোধী দল হয়ে উঠতে পারলেও বিজেপি সন্তুষ্ট হবে৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা বুঝছেন বলেই মোদি এবং বিজেপির আক্রমণের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সুর চড়িয়েছেন৷ রবিবার মোদী শ্রীরামপুরের সভায় কটাক্ষ করেছিলেন, মমতার আঁকা ছবি সারদা চিটফান্ডের মালিক সুদীপ্ত সেন এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন বলে৷ সোমবার মুকুল রায় রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মোদীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার হুমকি দিলেন৷ আর রবিবার মমতা নিজেই নির্বাচনি জনসভা থেকে কটাক্ষ করেছেন, যিনি নিজের ঘর সামলাতে পারেন না, তিনি দেশ সামলাবেন কী! স্পষ্ট ইঙ্গিত স্ত্রীর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা মোদীর দিকে৷
৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজেপির প্রথম নির্বাচনি প্রচার সভায় রাজ্যবাসীর কাছে নরেন্দ্র মোদীর বার্তা ছিল, আপনারা রাজ্যে বামফ্রন্টকে হটিয়ে তৃণমূলকে জিতিয়েছেন, এবার কেন্দ্রে কংগ্রেসকে হটিয়ে বিজেপিকে জেতান৷ কিন্তু কেন্দ্রে সরকার গঠনে নির্ণায়ক ভূমিকা নেওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকা মমতা তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ‘‘দাঙ্গাবাজ মোদী''-কে ভোট না দেওয়ার কথা বলতে শুরু করেন৷ যদিও গুজরাটে মোদী ভোটে জেতার পর মমতা যখন কলকাতা থেকে ফুল পাঠিয়েছিলেন, তখনই কিন্তু মোদীর হাত, মমতার ভাষায় ‘‘রক্তে রাঙানো''! অবশ্য মমতা তখন বিজেপির এনডিএ জোটেও ছিলেন৷
এবার মমতার আক্রমণের পর নরেন্দ্র মোদীও ক্রমশ সুর চড়াচ্ছেন৷ ব্রিগেডের সভার পর ১০ এপ্রিল শিলিগুড়ির জনসভায় সুর সারদা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ ভাষণের শেষ দিকে ছুঁয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু শ্রীরামপুরে মোদী ছিলেন একেবারে আক্রমণাত্মক মেজাজে৷ এমন কথাও তিনি বলেছেন যে, বামফ্রন্ট ৩৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গের যা ক্ষতি করেনি, তৃণমূল সরকার ৩৫ মাসে তার থেকে বেশি ক্ষতি করেছে৷