শবরীমালা মন্দির নিয়ে ভারতে তুলকালাম
৩ জানুয়ারি ২০১৯কেরালা রাজ্যের শবরীমালা মন্দিরে দুই নারীর প্রবেশকে কেন্দ্র করে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে বিজেপি৷ ভাঙচুর করা হয়েছে শতাধিক বাস৷ ২৬৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ৷ সরকারপন্থিদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বিজেপির এক কর্মী৷
বুধবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ ভারতের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন দুই নারী৷ ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি নারীদের প্রবেশে বাধা দেয়া যাবে না - আদালত এমন রায় দেয়ার পর এই প্রথম কোনো নারী মন্দিরটিতে ঢুকলেন৷
এরপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো কেরালা রাজ্য৷ মন্দিরে নারী প্রবেশের প্রতিবাদে ডাকা বৃহস্পতিবারের হরতালে সহিংস হয়ে ওঠে হিন্দু উগ্রবাদীরা৷
এর আগে রাজ্যের বামপন্থি সরকার সিপিএমের কর্মীদের সাথে বিজেপির নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর সংঘর্ষে নিহত হন ৫৪ বছরের চন্দ্রন উন্নিথান৷
কেরালা পুলিশের মুখপাত্র প্রমোদ কুমার এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘নিহত ব্যক্তি বিজেপির (ভারতীয় জনতা পার্টি) একজন সদস্য৷ বুধবার রাতে তিনি মারা যান৷ এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরো ১৫ জন আহত হয়েছেন৷''
বিজেপির হরতাল ও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি থমথমে ছিল৷ গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও স্থাপনাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷
কিন্তু বিভিন্ন স্থানে সিপিএম কর্মীরা মন্দিরে নারী প্রবেশের পক্ষে রাস্তায় নেমে আসলে বিজেপির বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ লাগে৷ বিজেপি ও সংঘ পরিবারকে রীতিমতো ‘ক্রিমিনাল' আখ্যা দিয়ে হরতালের নামে সহিংসতা রুখতে রাস্তায় হাজার হাজার কর্মী জড়ো করে সিপিএম৷
বৃহস্পতিবার হরতালের শুরুতেই বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হয়ে সব ধরনের গাড়ি চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ করে দেয় বিজেপির কর্মীরা৷ এসময় রাজ্যজুড়ে শুরু হয় সিপিএম কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ৷
এর মধ্যেও চলাচল বন্ধ করেনি কেরালা রাজ্য নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস৷ এক পর্যায়ে হামলা চালিয়ে শতাধিক রাজ্য বাস ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা৷ এই ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিকেলে সব ভাঙা বাস নিয়েই একটি মিছিল বের করে কেরালা স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন- কেএসটিআরসি৷ সংস্থাটি জানিয়েছে শুধু বাস ভাঙার কারণেই প্রায় তিন কোটি ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের৷
বিভিন্ন স্থানে হরতালের খবর সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর বিজেপি কর্মীদের হামলার খবর এসেছে৷ কেরালা ইউনিয়ন অব ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট এরই মধ্যে হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ তাঁদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দিল্লি ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টসও৷
সুপ্রিম কোর্ট ঋতুমতী নারীদের ঐ মন্দিরে প্রবেশের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর৷ চার মাস কেটে যাওয়ার পরও ঋতুমতী কোনো নারী এর আগে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি৷
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘‘দুই জন নারী মন্দিরে প্রবেশ করেছেন৷ কেউ যদি ঐ মন্দিরে যেতে চান, তবে পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যাবে৷''
মন্দিরের এক মুখপাত্র জানান, মন্দিরের পুরোহিতরাও ঐ দুই নারীর প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷ তবে ঐ নারীরা বেরিয়ে যাওয়ার পর পুরোহিতরা মন্দির ধুয়ে ‘শুদ্ধ' করেছেন বলেও জানান তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বলছেন, দুই নারী মন্দিরে ‘হেলিকপ্টারে নয়', বরং ‘সবার সামনে দিয়েই' প্রবেশ করেছেন৷ তখন এ নিয়ে কোনো অভিযোগ বা বাধার সম্মুখীন না হলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ নিয়ে তুলকালাম সৃষ্টি হয়ে যাওয়াকে বিজেপি ও সংঘ পরিবারের ‘ধর্ম ব্যবহার করে রাজনৈতিক চাল' বলেও উল্লেখ করছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী৷
এমনকি, ‘নারী প্রবেশের অনুমতি' দিয়ে আদালতের নির্দেশ না মানতে পারলে শবরীমালা মন্দিরের প্রধান পুরোহিতকে মন্দির ছেড়ে যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন৷
এদিকে রাজ্যে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও চলছে সমালোচনা৷ কেন্দ্রীয় কংগ্রেস আদালতের রায়ের পক্ষে অবস্থান নিলেও, রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা মন্দিরে নারী প্রবেশের বিপক্ষে৷
এডিকে/জেডএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)