শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৭ দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষকেরা ছবিঘরে বিস্তারিত...
‘নিরুপায় হয়ে এই আন্দোলনে’
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের সদস্য সচিব জসীম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা টানা ৪৪ দিন এইখানে আন্দোলন করেছি, কিন্তু তেমন কোনো ফল পাইনি। এর আগেও ২০১৮ সালে আমরা আন্দোলন করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ৫% প্রবৃদ্ধি এবং বৈশাখী ভাতা দিয়েছিলেন। গত ৫ বছরেও আমাদের দাবির বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা নিরুপায় হয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।’’
‘ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে না’
দাপুনিয়া কাউয়ালটি ইসলামিয়া হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আফজালুর রশীদ বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষক, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুরুত্ব আমাদের কাছে সবার আগে। আমাদের এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে, তাই এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আর যদি সামান্য কিছু হয়ও, আমরা তবে সেটা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে অবশ্যই পুষিয়ে দেবো।’’
সদিচ্ছার অভাব?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নেতারা দাবি করেন, জাতীয়করণের জন্য প্রয়োজন ২৫০০ কোটি টাকা, এক্ষেত্রে সরকারের ইতিমধ্যে ব্যয় হচ্ছে ১৪২৫ কোটি টাকা। অতিরিক্ত যে ১০৭৫ কোটি টাকার প্রয়োজন, তার বিপরীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় ১২৪০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত থাকছে ১৬৫ কোটি টাকা। তাই তাদের মতে, জাতীয়করণে অর্থ কোনো সমস্যা নয়, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার।
‘এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরাই বেশি উপকৃত হবেন’
ভেলুয়ার চর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা বীথি রাণী পাল বলেন, ‘‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা হাজার হাজার টাকা দিয়ে পড়েন। আমাদের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ নিম্নবিত্ত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলে শিক্ষার্থীরা মাসিক ২০ টাকা বেতনে পড়তে হবে, এতে শিক্ষার্থী এবং নিম্নবিত্ত অভিভাবকেরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।’’
‘বারবার শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন কেন?’
হারদী মীর শামসুদ্দিন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবুল বাশার বলেন, ‘‘আন্দোলন শুরু হলেই কেবল শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সরকার আমাদের অযোগ্য মনে করলে শিক্ষকতা করতে দিচ্ছেন কেন? আমরা সরকার নির্ধারিত যথাযথ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্য দিয়েই শিক্ষক নির্বাচিত হই, এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।’’
‘বেতন-অবসর ভাতাতেও শুভঙ্করের ফাঁকি’
কেডিআরকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যাম সুন্দর দাস বলেন, ‘‘আমরা বর্তমানে ১২৫০০ টাকা যে বেতন পাই, সেখান থেকেও সরকার ১০% কেটে নেয়। চাকরি শেষে যে অবসর ভাতা পাই, সেটা বড় অঙ্কের ঘুস ছাড়া পাওয়া যায় না, আর তাতেও ৪-৫ বছর লেগে যায়। মোট কথা, আমাদের বেতন-ভাতাসহ সবকিছুতেই শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে।’’
‘জনসংখ্যার তুলনায় আরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন’
বল্লী আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রতন কুমার বলেন, ‘‘দেশে নিয়ম-কানুন আছে কোন এলাকায় কি পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। এক্ষেত্রে ব্যাঙের ছাতার মতো প্রতিষ্ঠান কেউ তৈরি করতে পারবে না। যদি করেও, সেখানেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা আছে। আমি মনে করি, যে পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশে আছে, জনসংখ্যার তুলনায় তা অপ্রতুল, আরো প্রয়োজন।’’
‘কোনো রাজনৈতিক ইন্ধন নেই’
নোয়াখালি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘‘মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন আমাদের এই আন্দোলনে নাকি রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে। সরকারের তো গোয়েন্দা বাহিনী রয়েছে, ওনারা যাচাই-বাছাই করে দেখুক এখানে আদৌ কোনো ইন্ধন আছে কিনা। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমরা পেটের তাগিদে এখানে এসেছি, কোনো দল বা গোষ্ঠী আমাদের ইন্ধন দেয়নি।’’
‘মাউশির সতর্কবার্তায় আমরা ভয় পাই না’
নাসিরুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর যে অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে এবং যে সতর্কবার্তা দিয়েছে, আমরা তাতে ভীত নই। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, এবার আমরা আমাদের দাবি পূরণ করে তবেই ঘরে ফিরবো।’’
‘আন্দোলন চলছে, চলবে...’
বেসরকারি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যে তালা আমাদের প্রতিষ্ঠানে লাগিয়েছি, তা খোলা হবে না যতক্ষণ না আমাদের দাবি মানা হয়। আমাদের সাথে একাত্ম আছেন দেশের ৬ লক্ষাধিক শিক্ষক। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে। এখান থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।’’
‘আগে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, পরে আলোচনা’
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)-র সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া বলেন, ‘‘আমার কাছে কিছুক্ষণ আগে একটা ফোন এসেছিল যে, আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী গাজীপুরে একটি মিটিং করছেন, আমরা যেন রাজপথ ছেড়ে দেই। আমি বলেছি, আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের জাতীয়করণের ঘোষণা দেবেন,তারপর আমরা আলোচনায় যাবো। এছাড়া রাজপথ ছাড়ার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।’’