শীতের প্রকোপে ইউক্রেনের দুরবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তা
২২ নভেম্বর ২০২২যুদ্ধের রাশ ইউক্রেন বা রাশিয়ার হাতে কতটা রয়েছে, সে বিষয়ে তর্কবিতর্ক থাকলেও ঋতু হিসেবে শীতকালের ক্ষমতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই৷ যুদ্ধক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য অংশে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামতে শুরু করেছে৷ রাজধানী কিয়েভে তুষারপাত শুরু হয়েছে৷ সেইসঙ্গে বৃষ্টি ও কাদার কারণে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম পরিবহণও বড় সমস্যা হয়ে উঠছে৷ রাশিয়ার লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ফলে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, পানি ও ঘর গরম রাখার উত্তাপ সরবরাহের অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ফলে দেশের ২৭টি অঞ্চলের মধ্যে ১৫টিতে চার ঘণ্টা বা আরো বেশি সময়ের জন্য ব্ল্যাকআউটের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ সেই সময় আরো বাড়ানো হতে পারে বলে বিদ্যুৎ সংস্থা জানিয়েছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউক্রেনের চলতিশীতকালকে ‘প্রাণঘাতী' হিসেবে সতর্ক করে দিয়েছে৷ সংস্থার ইউরোপের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. হান্স হেনরি পি ক্লুগে বলেন, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি অবকাঠামোর উপর হামলার অর্থ হলো অসংখ্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর পুরোপুরি চালু থাকতে পারছে না৷ সেখানে জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুতের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে৷ মরিয়া হয়ে শরীর গরম রাখার বিকল্প প্রচেষ্টার কারণে শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন৷
এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার হাত থেকে সদ্য পুনরুদ্ধার করা খেরসন ও মিকোলাইভের মতো অঞ্চলের বাসিন্দাদের উদ্ধার করে দেশের অন্য জায়গায় নিয়ে যাবার কাজ শুরু করেছে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ৷ উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেন, সরকার সেখানকার মানুষের জন্য পরিবহণ, বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে৷ বিশেষ করে নারী ও শিশু এবং অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে৷ ইউক্রেনে জ্বালানি সংরক্ষণের খাতিরে তিনি গত মাসে বিদেশে বাসরত ইউক্রেনীয়দের উদ্দেশে শীতকালে দেশে না ফেরার আবেদন জানিয়েছিলেন৷ কিয়েভসহ অন্যান্য জায়গার যে সব মানুষের কয়েক মাসের জন্য দেশের বাইরে থাকার সামর্থ্য রয়েছে, তাদের উদ্দেশ্যেও সেই আবেদন জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা৷
শীত আরো জাঁকিয়ে বসার আগে রাশিয়ার সেনাবাহিনী অবশিষ্ট অধিকৃত এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ইউক্রেনের বাহিনীর হামলার আশঙ্কায় দ্নিপার নদীর পূর্ব প্রান্তে সামরিক অবস্থান আরো মজবুত করছে মস্কো৷ রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকার মানুষকেও অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছে৷
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কি সোমবার আবার ন্যাটোসহ অন্যান্য সহযোগী দেশগুলির উদ্দেশ্যে রাশিয়াকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণার ডাক দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, রাশিয়ার হামলার ফলে দেশের ৫০ শতাংশেরও বেশি জ্বালানি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ গণবিধ্বংসী অস্ত্র প্রয়োগের দায়ে রাশিয়ার উপর আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানোরও ডাক দেন তিনি৷ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মাদ্রিদে
ন্যাটোর ৬৮তম সংসদীয় সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে জেলেনস্কি বলেন, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটিকে দেখাতে হবে, যে সে দেশের জয়ের কোনো সুযোগ নেই৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সোমবার রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে৷ রাশিয়া সুপরিকল্পিতভাবে ইউক্রেনের মানুষের হত্যা, নিপীড়ন ও অপহরণ চালিয়েছে বলে রাষ্ট্রদূত বেথ ভান স্কাক দাবি করেন৷ তিনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ডাক দিয়েছেন৷
এসবি/এসিবি (এপি, এএফপি)