কূটনীতিকদের প্রচেষ্টা
১ জানুয়ারি ২০১৪
শুরুটা করেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন৷ এরপর যুক্ত হন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা৷ রবার্ট গিবসন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচির শেষ দিন, সোমবার বিকেলে৷ তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন৷ তবে ব্রিটিশ হাই কমিশনার বৈঠকের বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি৷ এর একদিন পর, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন গিবসন৷ সেই বৈঠকের বিষয় নিয়েও কেউ মুখ খোলেননি৷
মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বৈঠক করেন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে৷ বৈঠকের পর তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি সহিংসা বন্ধে সংলাপ এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দেন৷ গুরুত্ব দেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর৷ বলেন, বিরোধী দলকে মত প্রকাশ করতে দেয়া উচিত৷ এরপর মার্কিন দূত বুধবার আবারো বৈঠক করেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট শমসের মুবিন চৌধুরীর সঙ্গে৷ শমসের মুবিন অবশ্য বলেন যে, মার্কিন দূত নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতেই তাঁর বাসায় এসেছিলেন৷
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা৷ জানা গেছে, এই দুই কূটনীতিক মোট তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন৷ সহিংসতা বন্ধ, নির্বাচন পিছানো এবং বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা৷ এ জন্য তাঁরা প্রকাশ্য বৈঠকের পাশাপাশি গোপনেও কথা বলছেন দুই দলের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে৷ তাঁরা মনে করেন, এখনই যদি দুই দলের মধ্যে একটি সংলাপ শুরু করা যায় তাহলেও পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে মোড় নিতে পারে৷ মার্কিন রাষ্ট্রদূত হয়ত এ নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলবেন৷ জানা গেছে, এ জন্য কয়েকদিন আগে সুশীল সমাজের প্রস্তাবটি আলোচনায় রাখা হচ্ছে৷ আর তা হলো, সংসদের মেয়াদ শেষে ২৪শে জানুয়ারি সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী তিন মাসে নির্বাচন করা৷ সেটা হলে আলোচনার জন্য ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে৷
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, শেষ মুহূর্তে এই দুই প্রভাবশালী কূটনীতিকের তত্পরতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে তাঁদের এই তত্পরতা ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন, না এই নির্বাচনের পর কত দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন করা যায়, তা নিয়ে – সেটা এখনো স্পষ্ট নয়৷ কারণ কোনো দিক থেকেই সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি৷ তবে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্য হবে না, তা তাঁরা স্পষ্ট করেছেন৷
অধ্যাপক আহমেদ বলেন, নির্বাচনের আগে বা পরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবশ্যই সমঝোতা হবে৷ আর এই দুই কূটনীতিক চেষ্টা করছেন যাতে দ্রুত সেই সমঝোতা সম্ভব হয়৷ তিনি বলেন, ভারতীয় পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী ভারতের অবস্থানের কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে৷ তারা এখন চাইছে জনগণের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন৷ এটা আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত করার কথা বলছে তারা৷ স্বাভাবিকভাবেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থানের দূরত্ব কমাতে চাইছে৷
মার্কিন এবং ব্রিটিশ দূতের এই প্রচেষ্টার সঙ্গে দ্রুতই আরো অনেক দেশের কূটনীতিক যুক্ত হবেন বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ৷