শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা!
৮ মে ২০১৮জীবন মাঝে মাঝে অদ্ভুত৷ সিরিয়ার যুদ্ধে লেবাননের রাজনৈতিক ও সংসদীয় দল হেজবুল্লাহর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল, যা লেবাননেও প্রভাব ফেলেছে৷ আর লেবানিজরাও পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে এমন ভরসায় হেজবুল্লাহর দিকেই ঝুঁকেছে৷
প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী হেজবুল্লাহ ও তাদের জোটের সমমনা দলগুলো লেবাননের সংসদে অর্ধেকের বেশি আসন পেয়েছে৷
‘হেজবুল্লাহ' এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহর দল৷ মনে হচ্ছে এই দলটি সব বাধা দূর করে নিরঙ্কুশভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে এগোচ্ছে৷ লেবাননে আশ্রয় নেওয়া ১৫ লাখ সিরীয় শরণার্থীর সঙ্কট মোকাবেলা করে একটি আশু সমাধান বের করার ব্যাপারে দলটি জোর দিচ্ছে৷
লেবাননের জনসংখ্যা ৬০ লাখ৷ এর সাথে সিরিয়ার ১৫ লাখ শরণার্থী যোগ হওয়ায় দেশটিতে বাসস্থান, খাদ্য এবং শ্রমবাজারের উপর চাপ পড়ছে৷ এত বেশি সংখ্যক শরণার্থী সামলানোর ক্ষমতা লেবাননের নেই৷
কয়েক লাখ শরণার্থী এর মধ্যে লেবানন ছাড়লেও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার ইঙ্গিত হচ্ছে, স্বেচ্ছায় নয় তাদের বরং জোর করে লেবাননছাড়া করা হয়েছে৷
লেবাননে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে অনেক ভোটারই হেজবুল্লাহকে ভোট দিয়েছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, দুর্নীতির সংকট উত্তরণে হেজবুল্লাহর একটি বড় ভূমিকা থাকবে৷ কিন্তু শরণার্থী অনুপ্রবেশই এখন দেশটির জন্য বড় সমস্যা৷
কিন্তু সেই বিবেচনায় লেবানিজরা হেজবুল্লাহকে নির্বাচিত করে শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দিয়েছে বলা যেতে পারে৷ শরণার্থী হিসেবে আসা বেশিরভাগ সিরীয়ই প্রাথমিকভাবে ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসী তৎপরতায় দেশ ছেড়েছে৷ এদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হেজবুল্লাহ তার শত শত যোদ্ধা দিয়ে লড়াইয়ে সহায়তা করেছে৷
ফলে শরণার্থী সঙ্কট আশু নিরসনের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
ইরানের কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ
মধ্যপ্রাচ্যের নানা অন্ধকার অধ্যায়ের সাথে হেজবুল্লাহর সংযোগ রয়েছে৷ দলটি ইরানের কাছে কৃতজ্ঞতাবদ্ধ৷ ইরানের কাছ থেকে দলটি বছরে ৮০ কোটি ডলার সহযোগিতা পায়৷
আর অবশ্যই এই টাকা ‘ফাও' খরচ করছে না ইরান৷ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মোল্লাতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতেই হেজবুল্লাহকে মদদ দিচ্ছে ইরান৷
পারমাণবিক শক্তি দিয়ে ইরান নতুন ক্ষমতাবলে বলীয়ান৷ দেশটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেজবুল্লাহকে সাথে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে চাচ্ছে৷
আজব ব্যাপার এই যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ লেবানিজরা এমন একটি দলকে ভোট দিয়েছে, যার গঠনমূলক বৈদেশিক নীতিমালার ক্ষেত্রে কোনও সত্যিকার অবস্থান নেই৷
অন্যদিকে, হেজবুল্লাহর দলগত মার্চে বিপুল সংখ্যক শিশুকে সামরিক ইউনিফর্ম পরে অংশগ্রহণ করতে দেখে মনে হতে পারে তারা একটি বড়সড় আদর্শিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ আসলে এরকম কর্মসূচি ইঙ্গিত দেয়, ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখকর নয়৷
কয়েকজন ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ ইতিমধ্যে বলেছেন, যে, তাঁরা লেবানন ও হেজবুল্লাহকে এক করে দেখেন এবং আগের মতোই দেখেন৷
বলা যায়, লেবানিজরা তাঁদের নিজেদের ভবিষ্যৎকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বড় সশস্ত্র বাহিনীর হাতে সঁপে দিয়েছে যার ফল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ভয়ঙ্কর৷
কারস্টেন ক্নিপ/এইচআই