শ্রমিকদের আন্দোলন কেন শেষ হয় না?
১৫ মে ২০২০শুক্রবারও দেখা গেল, পোশাক শ্রমিক ও আন্দোলনকর্মীরা সমাবেশ করেছেন৷ সামনে ইদ৷ রমজান মাস শেষ হতে হাতে রয়েছে এক সপ্তাহের মতো৷ অথচ তাদের অনেকেই জানেন না ইদের আগে বেতন বোনাস পাবেন কি পাবেন না৷
বাহুল্য হলেও বলছি, করোনার কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতি ধুঁকছে৷ ধুঁকছে বাংলাদেশও৷ রপ্তানিনির্ভর পোশাক খাতে এর প্রভাব আরো বেশি৷ তাই তাদের অর্থনৈতিক চক্র যে বাধাগ্রস্ত তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের অঙ্গীকার তো তারা করেছিলেন৷ সরকারও তো সহজশর্তে ঋণ প্যাকেজ প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে৷ গত ৯মে দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এরই মধ্যে সেই অর্থ বিতরণ শুরু হয়েছে এবং অনেকে সেই টাকায় এপ্রিল মাসের বেতন দেয়া শুরু করেছেন৷ প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এম সিরাজুল ইসলামের বরাত দিয়ে জানানো হয়, প্রথম ধাপে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড় করানো হয়েছে৷ তাদের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতনের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়৷
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, অর্থাৎ, মে মাসের ১৪ দিন শেষ হয়ে যাবার পরও অধিকাংশ কারখানাই মজুরি পরিশোধ করতে পারেনি, বা করেনি৷ প্রথম আলোর বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে শিল্প পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ‘‘গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার ৭ হাজার ৬০২টি শিল্পকারখানার মধ্যে ২ হাজার ১৯০টি গত মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে৷ তার মধ্যে বিজিএমইএর ১ হাজার ৮৮২ সদস্য কারখানার মধ্যে মজুরি দিয়েছে ৫৬১টি৷ বিকেএমইএর সদস্য ১ হাজার ১০১টি সদস্য কারখানার ২৯০টি শ্রমিকের মজুরি দিয়েছে৷ এছাড়া বিটিএমএর সদস্য ৩৮৯টি কারখানার মধ্যে ১২৬টি বেতন পরিশোধ করেছে৷ তবে বিজিএমইএর ৫৪ ও বিকেএমইএর ৪২টি সদস্য কারখানা এখন পর্যন্ত গত মার্চেও মজুরি দেয়নি৷''
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন বলছে, বৃহস্পতিবার কারখানা মালিকরা প্রস্তাব করলেন বেতনের ৫০ ভাগ বোনাস দেবার৷ কিন্তু শ্রমিক নেতারা তা মানছেন না৷ প্রথমত, এপ্রিলে সিদ্ধান্ত হলো কারখানা বন্ধ থাকলে মোট মজুরির ৬৫ ভাগ দেয়া হবে শ্রমিকদের৷ এখন বোনাসও দেয়া হবে না পুরোটা?
আমরা দেখেছি, শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে সহায়তার জন্য তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি ড. রুবানা হক কী যুক্তিপূর্ণ, মানবিক আহ্বান জানিয়েছিলেন! কিন্তু সেই বিজিএমইএ'রই সদস্য ৫৪টি কারখানা যখন শ্রমিকদের মার্চের বেতনও দেয় না, তখন সংগঠনটি কী করছে? সরকারের প্রণোদনার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কেন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা শোধ করা যাচ্ছে না? আর ঈদের বোনাসও তো তাদের প্রাপ্য৷ সেখানে কেন কার্পণ্য?
অর্থছাড়ের প্রক্রিয়াগত জটিলতা থাকলে অর্থমন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তা ত্বরান্বিত কি করা যায় না? আমরা চাই না, শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসুক৷ এই করোনাকালে তো নয়ই৷ দেশের অর্থনীতি যারা দীর্ঘকাল ধরে বুনছেন সুঁইসুতোর আঁচড়ে, তাদের পাওনা আদায়ে আর কত গলা ফাটাতে হবে?