ইউরো সংকট
২৯ জুন ২০১২ইউরো এলাকার সংকটের মোকাবিলা করতে একাধিক সমাধানসূত্র নিয়ে আপাতত আলোচনা চলছে৷ জাতীয় বাজেটের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করতে ইউরোপীয় কমিশনের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেওয়ার বিষয়ে কথা চলছে৷ তাছাড়া ইইউ দেশগুলির ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর নজরদারিও করতে পারবে কমিশন, এমনই প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ এগুলি হল প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ তারপর ধীরে ধীরে, আগামী এক দশকের মধ্যে আর্থিক ক্ষেত্র, বাজেট ও অর্থনৈতিক নীতির রাশ চলে আসবে ব্রাসেলস'এর হাতে – এই মর্মে একটি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছেন ইউরোপীয় কর্মকর্তারা৷
ইউরোপীয় নেতাদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি দেখে পুঁজিবাজার এখনো ভরসা পাচ্ছে না৷ স্পেনের ২৮টি ব্যাংকের রেটিং কমে গেছে৷ ইটালি ও স্পেন'কে বন্ডের বাজারে চড়া সুদ গুনতে হচ্ছে৷ ফলে শেষ পর্যন্ত এদের মধ্যে কোনো একটি দেশও যদি বেলআউট'এর আবেদন করে, সেক্ষেত্রে সাহায্য তহবিলের উপরেও চাপ পড়বে৷ ফলে রক্ষাকবচ হিসেবে যেসব পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলির মেয়াদ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ না নিলে বাজার শান্ত হবে না৷
এই অবস্থায় ইটালি ও স্পেন জরুরি ভিত্তিতে বাড়তি সাহায্যের দাবি করছে৷ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোই এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের আরও লক্ষ্য হওয়া উচিত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিপদ দেখা দিলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তা সামলানোর চেষ্টা করা৷ ইউরোপের আর্থিক ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতে প্রচলিত কাঠামোর মধ্যে সব রকম পদক্ষেপ নেওয়ার জোরালো সদিচ্ছা দেখাতে হবে৷ ইউরোপের ভবিষ্যতের স্বার্থে স্পষ্ট গতিপথ স্থির করতে হবে৷ আমরা ইউরোপের মধ্যে আরও সমন্বয় আনবো৷ এক রাজনৈতিক ইউনিয়ন, অর্থনৈতিক ইউনিয়ন, ব্যাংকিং ইউনিয়ন ও বাজেট সামলাতে ফিসক্যাল ইউনিয়ন গড়ে তুলবো৷''
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী রাখোই ও ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও মন্টি বাজারে তাদের দেশের বন্ডের উপর চড়া সুদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ তারা উদ্ধার তহবিল ইএসএম থেকে সরাসরি সাহায্যের জন্য চাপ দিচ্ছেন৷ জার্মানি সুদের হার নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত নয়৷ তাদের মতে, সুদের হার ওঠানামা করবেই৷ স্পেনের দাবি অনুযায়ী বেসরকারি ব্যাংকগুলিকে উদ্ধার করতে ইএসএম'কে ব্যবহারের প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করছে জার্মানি৷ জার্মানির স্পষ্ট বক্তব্য হলো, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলি নিজেরাই নিজেদের সংকটের জন্য দায়ী৷ তাদেরকেই একা নিজেদের সংকট সামলাতে হবে৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কয়েক দিন আগে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সংহতির বদলে নিয়ন্ত্রণও মেনে নিতে হবে৷ স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে অতীতেও ইউরোপীয় স্তরে চুক্তি করা হয়েছিল৷ কিন্তু সেই চুক্তি মানা হয় নি৷ এটা ঠিক নয়, যে ইউরোপে কোনো বিধিনিয়ম চালু ছিল না৷ আমাদের আসল সমস্যা হলো, আমরা নিজেরাই নিজেদের তৈরি করা নিয়ম না মানার ফলে আস্থা হারিয়ে ফেলেছি৷ এবার যদি আবার সবাই মিলে সেটা করতে পারি, তাহলে আমি আশাবাদী৷ সঠিক পথে এগোতে সবাই মিলে এই উদ্যোগে সামিল হবে৷''
অতীতে দেখা গেছে, মূলত জার্মানি ও ফ্রান্সের উদ্যোগে অথবা তাদের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে বড় বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ বাকিরা কমবেশি, আগে অথবা পরে সেই উদ্যোগে যোগ দিয়েছে৷ কিন্তু ফ্রান্সে রাজনৈতিক পালাবদলের পর সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বুধবার প্যারিসে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ'এর সঙ্গে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে একটা বোঝাপড়ায় আসার চেষ্টা করেছেন৷ মতপার্থক্য সত্ত্বেও দুই নেতা বিলক্ষণ জানেন, ঐকমত্য না হলে ইউরো এলাকার সংক়ট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে৷
জার্মানি জানিয়েছে, চলতি বছর হিসেবের তুলনায় বেশি ঋণ নিতে হবে৷ গ্রিসের ৩ দলীয় জোট সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করতে ইউরোপের কাছে আরও কিছুটা সময় চেয়েছে৷ জার্মানি নীতিগতভাবে এই দাবির বিরোধিতা না করলেও আন্তর্জাতিক অডিটর দলের এথেন্স সফরের জন্য অপেক্ষা করতে চায়৷ গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী – দুজনেই অসুস্থ থাকায় এই কাজে বিলম্ব ঘটছে৷
এসবি / ডিজি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)