‘সচেতনতা দিয়ে এইডস-কে নির্মূল করা সম্ভব’
১ ডিসেম্বর ২০১৪মেলবোর্নের বিশ্ব এইডস সম্মেলন থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস ব্যাধিকে নির্মূল করার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে, বিশ্বের বহু দেশের বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তা অলীক বলে পরিগণিত হতে পারে৷
নতুন সহস্রাব্দ শুরু হওয়া যাবৎ এইডস গবেষণায় প্রভূত প্রগতি ঘটেছে৷ আজ আর এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়াটাকে মৃত্যুদণ্ডের সামিল বলে গণ্য করা হয় না৷ অ্যান্টি-রিট্রোভাইরাল ড্রাগস দিয়ে এইডস ভাইরাসকে বহুদিন আটকে রাখা যায় এবং রোগী মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে – যদি তার সে সব বহুমূল্য ওষুধ কেনার সামর্থ্য থাকে৷
এছাড়া এইডস চিকিৎসাও নানা নতুন পথে এগিয়েছে: ক্যানসার গবেষণার অনুকরণে এইডস যেখানে লুকিয়ে থাকে, ঠিক সেখানেই তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা এইচআইভি ভাইরাস-কে কোষ থেকে বেরিয়ে আসতে ‘‘প্রলোভিত'' করতে পেরেছেন৷ কিন্তু সব সাফল্য সত্ত্বেও, এইচআইভি রোগকে জয় কর শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে, যখন বিশ্বের সর্বত্র মানুষজন দায়িত্বশীলের মতো আচরণ করতে শিখবেন৷
দুঃখের বিষয়, আজও সব মানুষ সে রকম আচরণ করে না – বিশেষ করে তাদের যৌনজীবনে তো নয়ই৷ আজকের দুনিয়ায় প্রতিটি মানুষের জানা থাকার কথা যে, যৌনরোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল কন্ডোম ব্যবহার করা৷ এবার কর্তৃপক্ষ, সরকারবর্গ এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলিকে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে কন্ডোম ব্যবহার সংক্রান্ত সচেতনতা নিন্দনীয় নয় – অর্থাৎ রাজনৈতিক, আইনগত এবং সামাজিক বিচারে একটি মুক্ত পরিবেশ৷
এটা স্পষ্ট যে, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলিতে এইডস রোগ ছড়ানোর মূল কারণগুলি হচ্ছে রোগটিকে একটি ‘গুপ্তরোগ' হিসেবে দেখা; যৌনশিক্ষার অভাব; সমকামীদের মতো যে সব গোষ্ঠীর এইডস রোগে আক্রান্ত হবার বিশেষ ঝুঁকি আছে, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবহার; এবং যারা এইচআইভি-তে আক্রান্ত, তাদের একঘরে করা৷
এইডস রোগের দায়িত্বপূর্ণ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ একমাত্র তখনই সম্ভব, যদি এই রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য – কী ভাবে এই রোগের সংক্রমণ ঘটে, বিপদ কোথা থেকে আসতে পারে এবং এইডস টেস্ট সহজেই করানো যায় কি না, ইত্যাদি তথ্য সর্বসাধারণের জ্ঞাত হবে৷ যে সব সরকার সমকামীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন; অথবা জড়িবুটি দিয়ে এইডস সারানোর নানা আজগুবি ও কাল্পনিক প্রচেষ্টা – এইডস প্রতিরোধের পথে এ ধরনের বাতুলতা ঘটলে চলবে না৷ আরো বড় কথা: উন্নয়নশীল দেশগুলির মানুষদেরও এইডস সংক্রান্ত ওষুধপত্র সহজে ও সস্তা দামে কিনতে পারার ব্যবস্থা থাকা চাই: প্রয়োজনে শিল্পোন্নত দেশগুলিকে তার অর্থসংস্থান করতে হবে৷
যে সব দেশ এইডস-এর ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, এমনকি নিপীড়ন চালাচ্ছে – তাদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণও অনুরূপভাবে জরুরি৷ যে সব সরকার দেশের জনগণের মধ্যে এইডস সংক্রান্ত সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিচ্ছেন না, তদের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য৷
মানবাধিকার মেনে চলা এবং জনগণের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ব্যতিরেকে চিকিৎসাক্ষেত্রে সর্বাধুনিক গবেষণাও তার একক প্রচেষ্টায় দুনিয়াকে এইডস-এর বিভীষিকা থেকে মুক্ত করতে পারবে না৷