সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ফিলিপাইন্স
নতুন সন্ত্রাসবিরোধী বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী ম্যানিলাসহ ফিলিপাইন্সের বেশ কয়েকটি শহরে৷ করোনা মহামারির মধ্যেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী৷ কী আছে এই বিলে?
নতুন আইন
২০০৭ সালের হিউম্যান সিকিউরিটি অ্যাক্টের উন্নত সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ২০২০ সালের অ্যান্টি টেররিজম বিলটিকে৷ ফিলিপাইন্সের সেনাবাহিনী বলছে, পুরোনো আইনের অধীনে আধুনিক যুগের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়েছে৷ ফলে অনলাইনে নতুন সদস্য রিক্রুটমেন্ট ও সন্ত্রাসী পরিকল্পনার মতো অপরাধকে এর আওতায় আনা যাচ্ছে না৷
কী আছে নতুন আইনে?
নতুন আইনে নিরাপত্তা বাহিনী কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে৷ কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের না করে বা আদালতে হাজির না করে দীর্ঘসময় হেফাজতে রাখতে পারবে, এমনকি ৯০ দিন নজরদারিও চালাতে পারবে৷ এছাড়া এই আইনে একটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী কাউন্সিল গঠনের কথাও বলা হয়েছে৷ এই কাউন্সিলই সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে৷
বিতর্ক কেন?
প্রস্তাবিত আইনটিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ব্যাপক ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করছেন বিরোধীরা৷ তাদের দাবি, এর ফলে সরকারের বিরোধিতা করলেই হেনস্থার সুযোগ তৈরি হবে৷ আইনটির বিভিন্ন ধারায় মত প্রকাশের অধিকারও ক্ষুণ্ণ হবে বলে অভিযোগ তাদের৷
পক্ষের কথা
বিলটির সমর্থকেরা বলছেন, মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধারা রাখা হয়েছে আইনটিতে৷ দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব ডেলফিন লরেঞ্জানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করবে, তারা সন্ত্রাসী নয়৷ আমাদের সংবিধানই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করে৷’’
বিপক্ষের মন্তব্য
দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা অবশ্য আইনটি মানতে নারাজ৷ তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমনিতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে৷ এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও প্রায়ই এ নিয়ে সমালোচনা করেছে৷ এই আইনের ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের সুযোগ আরো বাড়বে বলে দাবি তাদের৷
মুসলিমবিদ্বেষ বাড়ার শঙ্কা
দক্ষিণের মিন্দানাও প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বেশি৷ প্রদেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদেরও বাস৷ প্রদেশের আইনপ্রণেতারাও মনে করছেন, নতুন আইন পাস হলে তা সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে৷
বিক্ষোভ-আন্দোলন
বিলটিতে শিগগিরই সই করার কথা প্রেসিডেন্ট দুতার্তের৷ এরপরই আইনে পরিণত হবে সেটি৷ তবে এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ারও সুযোগ থাকছে৷ কিন্তু আইন পাসের আগেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছেন বিরোধীরা৷ করোনা সংক্রমণের মধ্যেও রাজধানী ম্যানিলায় জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷
স্বাধীনতা দিবস
শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আয়োজনেই বিক্ষোভের ডাক দেন বিরোধীরা৷ দেশটির আইনে সমকামীদের অধিকার স্বীকৃত হলেও সরকারের বিরুদ্ধে নানা সময়েই অভিযোগ উঠেছে সমকামী অধিকারকর্মীদের হেনস্তা করার৷ নতুন আইনে তাদেরও হয়রানির সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷
হংকংয়ের চেয়েও জটিল পরিস্থিতি
অধিকারকর্মীরা বলছেন, হংকং নিয়ে চীনের পাস করা নতুন আইনের চেয়েও বেশি ‘নির্যাতনমূলক’ হতে পারে ফিলিপাইন্সের এই আইন৷
মহামারিতে বিক্ষোভ
বিক্ষোভের ঘোষণার পর ম্যানিলা পুলিশ ঘোষণা দেয় সামাজিক দূরত্ব না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার৷ তাই বলে বিক্ষোভ বন্ধ রাখেননি আন্দোলনকারীরা৷ বরং মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রেখে মিছিল বের করেছেন তারা৷
পোষা কুকুরও সঙ্গী
ছবিতে এক আন্দোলনকারী তার প্রিয় পোষা কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে এসেছেন৷ কুকুরের গায়েও ঝুলছে প্ল্যাকার্ড, দাবি জানানো হয়েছে বিতর্কিত বিল বাতিলের৷
আন্দোলনে সৃষ্টিশীলতা
প্রেসিডেন্ট দুতার্তের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ এই অভিযানে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন বলে ধারণা বিভিন্ন অধিকার গ্রুপের৷ এছাড়া বিরোধীমত দমনেও দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ ছবিতে এক আন্দোলনকারীকে মরদেহের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে৷ তার পাশের কাগজে লেখা, ‘‘দুতার্তেকে উচ্ছেদ করো৷’’