সবাই কি নরওয়ে হতে পারে না?
৩ জুলাই ২০১৮চলতি বছর থেকে নরওয়ের নারী ও পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা সমান বেতন পাচ্ছেন৷ গত বছরের ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির নারী ও পুরুষ ফুটবল দলের অধিনায়করা৷ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নারী ও পুরুষ ফুটবলারদের বেতন এক করার এই সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক' আখ্যা দিয়েছে৷
কেউ কেউ অবশ্য ভাবতে পারেন, কিভাবে এই সমতা আনা হলো, যেখানে গত বছরও দেশটির জাতীয় ফুটবল দলের একজন পুরুষের তুলনায় নারীর বেতন অর্ধেকেরও কম ছিল! পুরুষ ফুটবল দলের আয়ের একটি অংশ নারী ফুটবল দলকে ট্রান্সফারের মাধ্যমে এই সমতা আনা হয়েছে৷ আর এতে কোন পুরুষ ফুটবলারই আপত্তি জানাননি৷ বরং নারীর অবদানকে স্বীকার করে নিয়ে সানন্দেই তাঁরা তাদের আয়ের একটা অংশ দিয়ে দিয়েছেন৷
বলাবাহুল্য, নরওয়ের মতো এমন উদাহরণ এখনও সৃষ্টি করতে পারেনি অনেক দেশ৷ ইউরোপের অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি জার্মানিতো এক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷ দেশটিতে জাতীয় দলের ফুটবলারদের বাৎসরিক গড় আয় যেখানে মিলিয়ন ইউরোর উপরে, সেখানে নারী ফুটবলারদের গড় আয় এক লাখ ইউরোই ছাড়ায় না৷ আর ক্লাব ফুটবলেতো নারীদের অবস্থা আরো শোচনীয়৷
পরিস্থিতি এমন যে, অনেককেই দ্বিতীয় একটা চাকুরি করতে হয় জীবিকা নির্বাহের জন্য৷ মোটের উপর, ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল যারা খেলছেন, তাদের ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কায় থাকতে হয়৷ কেননা, নারী ফুটবলারদের পুরুষদের অনেক আগেই অবসরে যেতে হয়৷ ফলে বাড়তি কিছু রোজগার না হলে তাদের অবসর জীবনে আর্থিক কষ্টে ভোগার আশঙ্কা থেকেই যায়৷
যদিও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে নারীরা পুরুষের তুলনায় সুযোগ সুবিধা তেমন একটা কম পান না, তা সত্ত্বেও উপার্জনের দিক দিয়ে ব্যবধানটা অনেক বড়৷ এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যম জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বহুবার৷ তবে ফেডারেশন নারী আর পুরুষের আয়ের ব্যবধানকে সাদা চোখে দেখতে রাজি নয়৷ বরং তাদের ভাষ্য হচ্ছে, পুরুষ ফুটবলের জনপ্রিয়তা, স্পন্সরশিপ, টিভি সত্ত্বসহ নানা দিক থেকে যে আয় হয়, তার সঙ্গে নারী ফুটবলের তুলনা চলে না৷
অথচ জার্মান নারী ফুটবল দলও বিশ্বকাপে অন্যতম সফল ফুটবল দল৷ এরইমধ্যে দু'বার বিশ্বকাপ জয় করেছে এই দল৷ কোয়ার্টার ফাইনালের আগে বাদ পড়েনি কোনবারই৷ অথচ সেই দলও কি না আর্থিক বিবেচনায় পুরুষ দলের মতো লাভজনক নয়?
জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের মতো যুক্তি অবশ্য আরো অনেকেই দেয়৷ এটা অস্বীকারেরও উপায় নেই যে, নারী ফুটবলের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ যেকোন কারণেই হোক অনেক কম৷ যেকারণে পুরুষদের বিশ্বকাপ চলাকালে সর্বত্র যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়, নারীদের ক্ষেত্রে সেটা অনেক কম৷ এমন কি আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে স্টেডিয়ামে যান নারীদের ফুটবল খেলা দেখতে৷
এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে লাভ-লোকসানের হিসেব কষতে গেলে পুরুষের পাল্লা অনেক ভারি৷ এইতো কিছুদিন আগেই জানা গেলে ব্রাজিলের নেইমার শুধু ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে পিএসজি থেকে স্পন্সরশিপ বাদেও যা আয় করছেন, তা ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া এবং মেক্সিকোর ১,৬৯৩ জন নারী ফুটবলারের মোট রোজগারের সমান!
তবে লাভ-লোকসানের হিসেব কষে নারীদের বঞ্চিত করার দলে নেই আমি৷ আমি মনে করি, ফুটবল ফেডারেশনগুলোর উচিত নরওয়েকে অনুসরণ করা৷ রাষ্ট্রের তরফ থেকে নারী এবং পুরুষ ক্রীড়াবিদদের বেতন একই করা হোক৷ বাকি লাভের চিন্তা পরে করা যাবে৷
আরাফাতুল ইসলামের লেখাটি কেমন লাগলো? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷