সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ
২১ সেপ্টেম্বর ২০১১এই বাস্ক গ্রামটির নাম মুট্রিকু৷ পাঁচ হাজার মানুষের বাস সেখানে৷ সমুদ্র তট, মাছ ধরার ট্রলার, সখের প্রমোদতরি অর্থাৎ ইয়ট৷ সব মিলিয়ে ছবির মত এক নিসর্গ৷ কেউ যদি হঠাৎ করে এখানে উপস্থিত হয়, সে ভাবতেই পারবে না যে এরকম একটা ছোট্ট গাঁয়ে রয়েছে অতি আধুনিক এক বিদ্যুৎ প্রকল্প৷ সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করছে এই ওয়েভ জেনারেটর প্ল্যান্ট৷ এই প্রকল্প চালু হয়েছে গত জুলাই মাসে৷ প্রায় ৬০০ বাসিন্দার জন্য সরবরাহ করছে বিদ্যুৎ৷
সমুদ্রের পারে বসানো আছে কংক্রিটের এক স্থাপনা, তাতে মোট ১৬টি কুঠুরি৷ কুঠুরিগুলো খোলা৷ আছে জেনারেটরের সঙ্গে লাগানো টার্বাইন৷ সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ যখন এসে আছড়ে পড়ে, বাতাস ঢুকে যায় সবেগে ঐ শূন্য কুঠুরিগুলোতে৷ বাতাস ওপরে উঠে যায়৷ তার শক্তিতে টার্বাইনগুলো ঘুরতে থাকে৷ তৈরি হয় বিদ্যুৎ৷
কিছু পরীক্ষামূলক প্রকল্পে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে৷ তবে কিনা মুট্রিকুর এই ওয়েভ এনার্জি প্ল্যান্টটিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়েছে৷ টার্বাইনগুলো সরবরাহ করেছে জার্মান একটি কোম্পানির স্কটিশ অঙ্গ সংস্থা৷ প্রকল্পের বাকি অংশ তৈরি করেছে স্থানীয় বাস্ক কোম্পানি৷ প্রায় ৭ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় হয়েছে মুট্রিকুর এই প্রকল্পে৷ বাস্ক অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানি ইভ-এর প্রধান হাভিয়ের মার্কেস জানিয়েছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে মুট্রিকু একমাত্র মডেল প্রকল্প হয়ে থাকবে না৷ তিনি বললেন: ‘‘আমরা বাস্ক অঞ্চলের সমুদ্রের ঢেউ'এর একটা অ্যাটলাস তৈরি করেছি৷ কোন্ জায়গার ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশি তার হিসাব করে নিয়েছি আমরা৷ আমরা মনে করছি, এই প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা বাস্ক অঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদার শতকরা ১০ ভাগ পূরণ করতে পারবো৷''
তবে এই প্রযুক্তি যে একেবারে সমস্যাহীন তা নয়৷ মুট্রিকুর প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হয়েছে পরিকল্পিত সময়সূচির প্রায় দুই বছর পর৷ বছরে এই প্রকল্প মাত্র ৬০০ মেগাওয়াট ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম৷ সেই হিসেবে তার ব্যয়ভার খুব বেশি বলে মনে করছেন সমালোচকরা৷ বাস্ক জ্বালানি এজেন্সির কর্মকর্তা হোসে ইগনাসিও কিন্তু তা মনে করেননা৷ তিনি বলেন, এধরনের প্রতিটি বিদ্যুৎ প্রকল্পই পরিবেশবৈরী বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ আমদানি ঠেকাতে সাহায্য করবে৷ তাছাড়া এর মধ্য দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রযুক্তি বের করার, নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করার সুযোগ পাবে৷
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন