1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সম্পদে এমপিদের টেক্কা দিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা

১০ জুন ২০২৪

সংসদ সদস্যদের (এমপি) টেক্কা দিয়ে আরো বেশি সম্পদশালী হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা।

https://p.dw.com/p/4gsKU
Bangladesch I Wahlen
ছবি: DW

ট্রান্সপারে৷ন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র হিসাবে তারা এখন এমপিদের চেয়ে ধনী। আর জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ আহরণের এই লাগামহীন প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে।

টিআইবি এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে বলেছে, গত পাঁচ বছরে সম্পদ বৃদ্ধিতে তারা সংসদ সদস্যদের পেছনে ফেলে দিয়েছেন। এই সময় তাদের মধ্যে কোটিপতি বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। তাদের হিসাবে উপজেলায়  এবারে নির্বাচিতদের মধ্যে ৩০.৪১ শতাংশ কোটিপতি।

বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি এবং দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ হাওলাদার মনে করেন, "কালো টাকার মালিকেরা এখন রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছেন। তারা জনপ্রতিনিধি হয়ে সেই কালো টাকা আরো বাড়াচ্ছেন। তাই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”

আর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, "এটা প্রকৃত রাজনীতিবিদদের জন্যও অশনি সংকেত। এখনই রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ার আশঙ্কা আছে।”

সম্পদ বাড়ছে যেভাবে:

সম্পদ বৃদ্ধির উদাহরণ তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, গত পাঁচ বছরে একজন সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার  ছিল তিন হাজার ৬৫ শতাংশ। যেখানে ঝালকাঠি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমানের সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ।  ২০১৯ সাল থেকে শতভাগ বা তার বেশি সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া ১৯১ জন এবার উপজেলা চেয়ারম্যান এবার নির্বাচিত হয়েছেন।

টিআইবি বলছে, উপজেলায় প্রার্থীদের মধ্যে ৩৯০ জন কোটিপতি। আর নির্বাচিতদের মধ্যে কোটিপতি ১৩২ জন। অস্থাবর সম্পদ সবচেয়ে বেশি নরসিংদীর শিবপুরের চেয়ারম্যান ফেরদৌসী ইসলামের। তার ১৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর পর রয়েছেন সেনবাগের এস এম জাহাঙ্গীর আলম মানিক, হোমনার রেহানা বেগম, মাধবপুরের এস এফ এ এম শাজাহান ও ধামরাইয়ের সুধীর চৌধুরী।

২৫ প্রার্থীর জমি রয়েছে আইনি সীমার বেশি। এর মধ্যে সাতজন নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রার্থিতা আগেই বাতিল হওয়ার কথা ছিল। হলফনামায় দাখিল করা সম্পদের চেয়ে বেশি রয়েছে ৮৪ শতাংশ প্রার্থীর। গত সংসদ নির্বাচনে কোটিপতি প্রার্থী ছিলেন ৫৪৭ জন। আর উপজেলায় ৩৩৫ জন।

‘এখানে রাজনৈতিক আদর্শ বা জনসেবার কোনো বিষয় নেই’

জমির মালিকানায় শীর্ষে রয়েছেন দোয়ারা বাজারের চেয়ারম্যান দেওয়ান আশিদ রাজা চৌধুরী। তার জমি ২৮০ একর। এর পর রয়েছেন সাদুল্লাপুরের রোজউল করিম, লোহাগড়ার খোরশেদ আলম চৌধুরী, বান্দরবানের একেএম জাহাঙ্গীর ও রাণীনগরের রাহিদ সরদার।

টিআইবির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হলফনামায় যে সম্পত্তি উল্লেখ করা হয়েছে, তার চেয়ে ৮৪ শতাংশ প্রার্থীর সম্পদ বেশি আয়কর রিটার্নে। এ ক্ষেত্রে শীর্ষে আছেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের  চেয়ারম্যান সাদাত মান্নান। রিটার্নে তার ২০৩ কোটি টাকার সম্পদ বেশি।

টিআইবি বলছে, দেশের মধ্যাঞ্চল, কুমিল্লা, ফেনী ও খুলনা অঞ্চলের প্রার্থীদের গড় আয় বেশি। বিপরীতে রাজশাহী, সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রার্থীদের আয় কম। ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের প্রার্থীদের অস্থাবর সম্পদ কমেছে, আর বেড়েছে বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা অঞ্চলের প্রার্থীদের। অস্থাবর সম্পদ বেশি বেড়েছে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রার্থীদের।

সংসদের মতো উপজেলা পরিষদেও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে, নারী ও রাজনীতিবিদের উপস্থিতি কমেছে বলে জানিয়েছে টিআইবি।

রাজনীতি কালো টাকার মালিকেরা গ্রাস করছে:

বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ হাওলাদার বলেন," রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নাই। এটা কলো টাকার মালিকদের হাতে চলে গেছে। তারা রাজনীতিকে গ্রাস করে ফেলেছে।”

তার কথা, "কালো টাকার মালিকরা সংসদে প্রার্থী হচ্ছেন। উপজেলায় প্রার্থী হচ্ছেন। নির্বাচিত হয়ে তারা এই কালো টাকা আরো বাড়চ্ছেন। এই পরিস্থিতি প্রায় সবখানে। যেমন পত্রিকা এখন আর সাংবাদিকদের হাতে নেই। অন্যদের হাতে চলে গেছে।”

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "জনপ্রতিনিধি হওয়া এখন ব্যক্তিগত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক আদর্শ বা জনসেবার কোনো বিষয় নেই। আগে এটা সংসদ সদস্য পর্যন্ত আমরা দেখেছি। এখন এটা তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সবখানেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ”

তার কথা, "আমরা হলফনামা বিশ্লেষণ করে তথ্য বের করেছি। দেখা গেছে হলফনামার সঙ্গে আবার আয়কর রিটার্নের মিল নাই। আবার তারা যে তথ্য দিয়েছেন তা যে সব সত্য তাও নয়। তাদের দেয়া তথ্যের চেয়ে বাস্তবে সম্পদ এবং আয় আরো বেশি হতে পারে।”

তিনি মনে করেন, "এই তথ্য ধরেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং এনবিআর অনেক কাজ করতে পারে। এটাকে আমরা বলছি গোল্ড মাইন। এখান থেকেই দুর্নীতি ও কর ফাঁকির ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে।”

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকট খুরশীদ আলম বলেন, "হলাফনামা ধরে আমাদের তদন্তে কোনো বাধা নেই। এনবিআরও আমরা চাইলে তথ্য দিতে বাধ্য। কয়েক বছর আগে আমরা কয়েকটি তদন্ত করেছিলাম।  তবে এর জন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় আছে।”