1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা, সাধারণ মানুষের জন্য কী?

১০ মে ২০২৩

নতুন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে৷ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় রেখে তাদের এই সুবিধা দেয়া হতে পারে৷

https://p.dw.com/p/4R9jM
Bangladesch | Supermarkt in Hatirpool-Dhaka
ছবি: Abdullah Momin

কিন্তু প্রশ্ন হলো, সাধারণ মানুষ কীভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে টিকে থাকবে?

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট বরাদ্দের খাতওয়ারি চূড়ান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷

সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে এই মহার্ঘ ভাতার ব্যাপারে একমত নীতি নির্ধারকরা৷ তারা বলছেন, ২০১৫ সালে নতুন পে স্কেল ঘোষণার পর পাঁচ বছর পর আবার পে স্কেল হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি৷ আট বছর হয়ে গেছে৷ সেই কারণেই এই মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব৷ তবে তারা এই সময়ে প্রতিবছর শতকরা পাঁচ ভাগ হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়েছেন৷

 জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি চাকরিজীবী প্রায় ১৪ লাখ৷ তবে বিভিন্ন কর্পোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এই সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ৷ চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা লাগছে৷ আগামী অর্থবছরে বেতন-ভাতা বাবদ ৭৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের খসড়া তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ৷ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে এর পরিমাণ আরো ২০ ভাগ বাড়বে৷

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট বাজেটের ২২-২৮ শতাংশ ব্যয় হয়৷ আর গত এক দশকে তাদের বেতন ভাতা বাবদ সরকারের খরচ বেড়েছে ২২১ ভাগ বেড়েছে৷

সর্বশেষ জনশুমারি বলছে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ৷ সেই হিসেবে সরকারি চাকরিজীবীরা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর দেড় শতাংশেরও কম৷

এপ্রিল মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৩ ভাগ৷ এই বছরই মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷ আর খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি আরো বেশি৷ সিপিডির জরিপ বলছে, ঢাকায় চার সদস্যের পরিবারের জন্য মাসে সাধারণ খাদ্য খরচই এখন ২২ হাজার টাকা৷ সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারকে এখন তাদের মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খরচ করতে হয় সাধারণ খাদ্যের পিছনে৷ তবে মাছ-মাংস খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিলে মাসে খরচ দাঁড়ায় সাত হাজার ১৩১ টাকা৷

ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়াতে সবসময় অজুহাত খোঁজেন: এসএম নাজের হোসেন

আর এই সময়ে বিবিএসের দুইটি জরিপ দেশে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী, তা প্রকাশ করছে৷ বিবিএস বলছে দেশে দারিদ্র্য কমলেও আয় বৈষম্য বাড়ছে৷ সম্পদ কিছু মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে৷

আর ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব-এর ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের ১৬.৩ শতাংশ ছিল কেবল এক শতাংশ লোকের হাতে৷ দারিদ্র্যসীমার নিচের অর্ধেকের হাতে ছিল মাত্র ১৭ শতাংশ৷

বেকারত্ব বাড়ছে৷ বিবিএস বলছে, বাংলাদেশে মাত্র তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেকারত্ব বেড়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার৷ বিবিএস এই ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ করে ২ এপ্রিল৷

চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশে মোট বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার৷ আর গত বছরের ডিসেম্বর শেষে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার৷

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সব শ্রেণি বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষকে সবচেয়ে বেশি চাপে রেখেছে৷ সরকারি চাকরিজীবিরা মহার্ঘ ভাতা পাবেন এটা নিয়ে বলার কিছু নাই৷ কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ যাতে দ্রব্যমূল্যের চাপের মুখে উপকৃত হয় সরকারের সেই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ সরকার এই পরিস্থিতিতে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে বলছেন৷ সেটাও বিবেচনা করা প্রয়োজন৷ সাশ্রয় যেন সবার জন্য হয়৷''

তার মতে, ‘‘ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়াতে সবসময় অজুহাত খোঁজেন৷ এখন সরকারি চাকুরেদের মহার্ঘ ভাতা দিলে তাদের বেতন বাড়বে৷ এই অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা আরো এক দফা দাম না বাড়িয়ে দেয়৷ সেটা হলে চাপ সাধারণ মানুষকেই নিতে হবে৷ সরকারের এটাও খেয়াল রাখা দরকার৷''

নিম্নবিত্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কষ্টে আছে: অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

‘‘আসলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাজারকে যৌক্তিভাবে মনিটরিং করা৷ সেটা সরকার করছে না৷ করলে দেশের সব মানুষ উপকৃত হতো,'' মনে করেন তিনি৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের এই মহার্ঘ ভাতা পাওনা হয়ে গেছে৷ কারণ পাঁচ বছর পরপর তাদের নতুন পে স্কেল পাওয়ার কথা থাকলেও তা তারা পাননি৷ কিন্তু করোনা মহামারি এবং তারপরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে এখন দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তার প্রভাব শুধু সরকারি কর্মচারী নয়, দেশের সব শ্রেণির মানুষের ওপর পড়ছে৷''

তার কথা, ‘‘নিম্নবিত্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কষ্টে আছে৷ তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে সাপোর্ট, যে সামাজিক নিরাপত্তা পাওয়ার কথা ছিল তারা সেটা পাচ্ছে না৷ এর জন্য যে পরিমাণ কর আদায় করা দরকার ছিল রাজস্ব বোর্ড সেটা পারছে না৷ কর আদায়ে তাদের অদক্ষতা আছে৷ আবার কাদের সহায়তা প্রয়োজন তার জরিপও করতে পারেনি বিবিএস৷ প্রধানমন্ত্রী যখন ৫০ লাখ মানুষকে অর্থ সহায়তা দিতে চাইলেন তখন ৩৫ লাখের বেশি মানুষ পাওয়া যায়নি৷''

তার কথা, ‘‘দারিদ্র্য কাঙ্খিত হারে কমছে না৷ বেকারত্ব কমছে না৷ আয় বৈষম্য বাড়ছে৷ সব মিলিয়ে একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে৷ সরকারি চাকরিজীবীরা মহার্ঘ ভাতা পেলেও তাতে দেশের অধিকাংশ মানুষের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতির অনেক কারণ আছে৷ তার মধ্যে একটি অংশের আয় বেড়ে গেলেও দ্রব্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে৷''

আগামী ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হবে৷ এবার বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকার৷ চলতি বাজেট ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার৷